অধীর রঞ্জন চৌধুরী
বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই সকলকে। নতুন বছর মানে নতুন আশা-নতুন স্বপ্নের বীজ বুনে চলা তার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভোরের আলো।
এই বাংলা একদিন সমস্ত ভারতবর্ষকে পথ দেখিয়েছে। আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আমাদের আবহমান ইতিহাস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আপোষহীন লড়াই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে একদিন। আমাদের সব ছিলো একদিন। কিন্তু আজ আমরা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছি সেই সবকে। বাংলা নববর্ষের এই মুহূর্তে আমাদের সেই হতাশার কারণ অবশ্যই অনুসন্ধান করতে হবে, তবেই নতুন ভোরের সন্ধান পাব আমরা।
বাংলার বিপুল সম্ভার – সম্পদকে কাজে লাগাতে গেলে প্রয়োজন এক সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার এবং অবশ্যই স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী। বিগত কয়েক দশক ধরে যা পশ্চিমবঙ্গে অধরা রয়ে গেছে। একথা নতুন ক’রে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, বাংলার বর্তমান শাসকের সময়ে এই দীনতা আরো বেশি করে প্রকট হয়ে পড়েছে। যে ধী শক্তি এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একটা জাতির নেতৃত্ব দিয়ে তাকে সঠিক পথদিশা দেখাতে পারে তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল।
প্রতিহিংসার রাজনীতি আজ এ রাজ্যে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে, যা প্রতিদিন ভয়ানক আশঙ্কার সৃষ্টি করে চলেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গঠনমূলক বিরোধিতা। কিন্তু বাংলার বর্তমান শাসক আজ নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের খোয়াবে রাজ্যকে বিরোধী-শূণ্য করে দেওয়ার যে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে, তার ফলস্বরূপ শাসক দলের নিজেদের মধ্যে রোজ ঘটে চলা সংঘর্ষ রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবণাকেও উসকে দিচ্ছে। মহিলাদের সম্মান আজ ভুলুন্ঠিত এ রাজ্যে। চাকরি নেই, শিল্প নেই, শান্তি নেই। এক অদ্ভুত নৈরাজ্যে আর নেই-রাজ্যের মাঝে বাংলা ও বাঙালি আজ দিনপাত করছে এই পশ্চিমবঙ্গে।
দেশের দিকে তাকালেও একই অবস্থা। সারা দেশ জুড়ে লুঠ চলছে। লুণ্ঠিত হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। লুঠ চালাচ্ছে কেন্দ্রের গনবিরোধী বিজেপি সরকার। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ আজ সারা দেশ জুড়ে অসহায়। অন্যদিকে নামে বিজেপি বিরোধিতা করার নাটক করে প্রকারান্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপে বিজেপি – আর এস এস’কে গোপনে অক্সিজেন জুগিয়ে চলছে তৃণমূলের মতো কতিপয় দল।
প্রতিদিন মা কাঁদছে- মানুষ অসহায় – মাটি রক্তাক্ত হচ্ছে আজ।
আমাদের আজ ভাবতেই হবে—
“বীরের এই রক্তস্রোত
মাতার এই অশ্রুধারা
এর যত মূল্য
সেকি ধরার ধুলায় হবে হারা?”
( প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও মাননীয় সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী আন্দোলন ডট ইন-এর জন্য তাঁর এই লেখা পাঠিয়েছেন। তারজন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।)