বিভ্রান্তির বাজেট

চন্দন ঘোষ চৌধুরী

আর্থিক ব্যবস্থায় বাজেটের সম্পূর্ণ সংজ্ঞা হলো ‘Fiscal responsibility and Budget management’ বা অর্থ বার্ষিক সরকারি দায়িত্ব ও আহুত বছরের আর্থিক নীতি ও বরাদ্দ। 

২০২১-২২ অর্থবর্ষের যে বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী , সেখানে প্রায় সর্বস্তরে কৌশলী বিভ্রান্তির প্রচেষ্টা করলেন এবং পরিসংখ্যানগত অসত্য ব্যাখ্যা দিলেন।

প্রথমতঃ, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক বাজেট ঘোষণা ছিল ,এই বাজেট হবে গত অর্থবর্ষের চারটি মিনি বাজেটের সম্মিলিত আর্থিক হিসাবে। 

কর্পোরেট bail out এর উদ্দ্যেশ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ।

Reserve Bank of India র সরকারী ক্রেডিট ডিপোজিট থেকে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি  টাকা ধার করা।

অতিমারীর সময়ে বিশেষ বরাদ্দ সামাজিক ও শিল্পে ২০ লক্ষ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত যোজনায় ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। 

এই চার মিনি বাজেটের যোগফল ২৭ লক্ষ ১ হাজার কোটি ও গত আর্থিক বর্ষের সার্বিক বাজেট allocations বা বরাদ্দ ৩০ লক্ষ ৪২ ,২৩০ হাজার কোটি টাকার । সুতরাং, স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এই বাজেট ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটির, যা মূল বরাদ্দের ১০ শতাংশ। 

সরকার আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা International Monatoty Fund এর রিপোর্ট কে সামনে রেখে দাবী করেছেন আগামী বছরের আর্থিক বৃদ্ধির পরিধি ১১.৫ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু এই কার্যতঃ আর্থিক মন্দায় ২৩.৯০ ও ৭.৫ শতাংশ শূন্যের নীচে অবনমন শেষ দুই ত্রয়ী মাসিক অর্থ রিপোর্ট এপ্রিল – জুন ও জুলাই – সেপ্টেম্বর যথাক্রমে আর্থিক বৃদ্ধি কে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করেছে , যা ১১ শতাংশ অর্থ বৃদ্ধি কে গ্রাস করবে। তাই প্রকল্পিত আর্থিক ঘাটতি ৬.৮ শতাংশ। নতুন বরাদ্দ ১৬ লক্ষ ৫২ কোটি যার ১৩ লক্ষ কোটি নতুন প্রকল্পের টাকা আসবে কোথা থেকে, এই প্রশ্ন সর্বজনীন।

প্রাথমিক ভাবে , এর হিসাব পাওয়া যাবে রেল ও বিমান বন্দর বেসরকারীকরন , শুধু রেলেই ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য খাতে ৬৪ হাজার কোটি। মূলধন বরাদ্দ ৫লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি। 

RBI বিনিয়োগ ২৭০০০ কোটি।

ব্যাংক পুনর্বিনিয়োগ ২০০০০ কোটি।

কৃষি, গ্রামীন ও সেচ ২লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি।

জল ও পরিশ্রুত ব্যবস্থা বা sanitisation ৬৯০০০ হাজার কোটি।

শিক্ষা ও skills বা নৈপুণ্য ৯৯৩০০ হাজার কোটি।

গত বছরের এই প্রকল্পের প্রায় মাত্র  ২৫-৩০ শতাংশ খরচ করা গেছে। 

আসলে, নোটবন্দি আমাদের fiscal ঘাটতি করেছিল , ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প নিম্নমুখী হতে শুরু করে। অবিবেচক GST আঘাত করে মাঝারি  ও অনুশিল্পর উপর।

অবৈজ্ঞানিক কৃষি আইন ও তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ,ভারতের কৃষি অর্থনীতিকে  ভঙ্গুর করছে।

শিল্প , বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এ ১০০ লক্ষ কোটি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ ২২০০০ হাজার কোটি একটা অসম পরিকল্পনা। 

এই সব বরাদ্দ আসবে লাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে ও বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ বা FDI এর মাধ্যমে সরকারী ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। 

বীমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশ FDI , এক অর্থনৈতিক আত্মহত্যা। কারণ, এই উদ্বৃত্ত অর্থ সম ব্যবসায়িক বিনিয়োগে পরিবর্তিত হয়ে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

সরকারের ব্যর্থ  নিয়ন্ত্রণে :

◆Financial Markets, 

◆Government securities, 

◆Long-term investors, 

◆Restructuring of NBFC (Non Banking Finance Corporation)

◆Disinvestments , 

◆Fiscal Management

–আধুনিক বিশ্বে এরা Driving Forces। 

এই বাজেটে ধারণকারী তত্ব , যাকে ষষ্ঠ স্তম্ভ বলছেন সরকার।

1) স্বাস্থ্য

2) অর্থ মূলধন

3)  উছ্বাসী ভারত

4) জনসম্পদ

5) উদ্ভাবনী

6) কম সরকার ও বেশী সরকারী।

আমার প্রাক বাজেট শঙ্কা ছিল মনোহারি শব্দ ব্যবহার করবেন আর্থিক সমস্যাকে আড়াল করবেন সরকার। পরিসংখ্যান বিভ্রান্তি থাকবে , থাকবে জন দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

আশঙ্কা সত্য হলো। 

” A never before Budget” কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আত্মম্ভরিতা। 

Golden ইকোনমির জনক ডঃ মনমোহন সিং বিশ্বায়ন অর্থনীতিতে আনতে পেরেছিলেন জনকল্যাণ ও বাজারি সংমিশ্রণ। দুটো UPA সরকার পালন করলো সার্থক অর্থ ব্যবস্থা। ২০০৮ এর বিশ্ব মন্দাও এ দেশ বুঝতে পারে নি।

আজ বুঝলাম, A never before budget কি!

মহামান্য অর্থনীতিবিদ জন কেইন্স বলতেন , মানুষের অর্থ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে, ওই অর্থ আবর্তনের মধ্যে উন্নয়ন। 

কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্প একই কথা বলে, বিশ্বের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরাও। 

কেইন্স থেওরী বলে 10 letter words – Confidence, আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস হলো অর্থশাস্ত্র দর্শন। এটা ওঁর  “Animal Spirit এর সজ্ঞা।

এই বাজেট আমাদের সেই সনাতন বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। দেশের মানুষ এই সরকারের উপর  বিশ্বাস করে  আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন। 

২০২৪ শের মধ্যে  ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি  যা ২০২৯ 

এও অসম্ভব , মনে করা হচ্ছে। আগামী দু বছর কোনো আর্থিক বৃদ্ধির সুযোগ  নেই। ২.৪ শতাংশ বৃদ্ধির হার হবে। প্রয়োজন ৮ শতাংশের উপর, আর এখন তো ১০ শতাংশ পার করে অবজ্ঞার হাতছানি।

(*লেখক
বিজনেস কম্যুনিকেশনস  বিশেষজ্ঞ ও কর্পোরেট  স্পিকার।)

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *