পার্থ মুখোপাধ্যায়
প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিলো ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময়। তখন ফেডারেল ফ্রন্টের নামে একটি বায়বীয় রাজনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছিলো তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে, যেখানে প্রথমে বিজেপি এবং কংগ্রেস, উভয়দের বাদ দিয়েই তৃতীয় একটি জোটের ভাবনা প্রচার করা হয়। যদিও সাধারন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রয়োজনের কারনেই অচিরেই সেই অলীক ফেডারেল ফ্রন্টের নামে জোট ভাবনা তৃনমূল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এতেও কিন্তু বিজেপি জোটে জট সৃষ্টির কর্মকাণ্ড থামেনি। জোটে নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবি নিয়ে জলঘোলা অব্যহত রাখে তৃনমূল। এর ফলে যা হওয়ার তাই ঘটে। বিজেপি বিরোধী একটি সার্বিক জোট প্রক্রিয়া কে ভেস্তে দেওয়ার কাজে তৃনমূল সফল হয় যার সম্পূর্ণ ফায়দা নরেন্দ্র মোদী তুলতে সক্ষম হন। এদিকে নতুন করে তৃনমূলের নেতৃবৃন্দদের সিবিআই বা ইডির ডাকাডাকি শুরু হয়েছে এবং ফলস্বরুপ ২০২৪ এর নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের প্রেক্ষাপটকে সুত্র করে বিজেপিকে নির্বাচনী ফায়দা পাইয়ে দিতে অনেক আগেই ময়দানে নেমে পড়েছে তৃনমূল কংগ্রেস। প্রথমে, কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা ইউপিএর বিভিন্ন দলের প্রতি তৃনমূল তাদের সঙ্গে জোট করার আহ্বান জানায় এবং এমনকি তাদের সর্বোচ্চ নেত্রী এমন মন্তব্যও করেন যে এখন নাকি ইউপিএ বলে কোনো জোটই নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ইউপিএর অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দলই কিন্তু দ্ব্যর্থহীনভাষায় জানিয়েছে বিজেপি বিরোধী যে কোনো জোটেই কংগ্রেসের সমন্বয়কারী সক্রিয় অংশ গ্রহন না থাকলে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তৃনমূলের ব্যক্তব্য কংগ্রেসের নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি নেই, যা নাকি তৃনমুলের আছে। তৃনমূলের এই কথাটা স্মরণে রাখা উচিত যে তাদের যেখানে সারা দেশে ২৩৫ জনের মতো এমএলএ আছে, তাও দুটি রাজ্যে সেখানে কংগ্রেসের ৭০০ জনেরও বেশি এবং তা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। একথাটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার যে নামে “অল ইন্ডিয়া” থাকলেও এখনও তৃনমূল শুধুই পশ্চিনবাংলার দল। অপরদিকে বিজেপি ছাড়া কংগ্রেসই একমাত্র দল যাদের সর্বভারতীয় উপস্থিতি রয়েছে।কংগ্রেস বিগত ৫ বছরে যে সব রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপিকে হারিয়েই এসেছে।তৃনমূল কিন্তু বিজেপিকে হটিয়ে বা হারিয়ে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি। এমনকি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২০১৪র থেকে ২১টা সিট বেশি পেয়েছিলো, যার মধ্যে ১৬টাই আমাদের রাজ্যে তৃনমুলকে হারিয়ে।
এতো কিছু সংখ্যাতত্বের বাইরেও আসল যে সত্যটা হলো তা আদর্শের ও বিচারধারার ভিত্তিতে বিশ্বাস যোগ্যতার, যা তৃনমূলের নেই। যাদের রাজনৈতিক ভাব ধারায় সিঞ্চিত বিজেপি, সেই আরএসএসকে তৃনমূল দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয়তাবাদী সংগঠন বলে মনে করে। বিজেপির সঙ্গে বিরাট সময় ধরে জোট রাজনীতির সম্পর্ক ছিলো তৃনমূলের। তৃনমূলের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার পেছনেও বিজেপি, আবার এই রাজ্যে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠার পেছনেও তৃনমূল। সংসদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময়ে বিল পাসের ক্ষেত্রে তৃনমূলের আংশিক অনুপস্থিতি বিজেপিকে সাহায্যই করেছে। যে কৃষি আইনগুলি নিয়ে এতো বড় কৃষক আন্দোলন হলো, বিজেপির পাশ করা সেই সব কৃষি আইনগুলি আমাদের রাজ্যের তৃনমূল সরকার মেনে নিয়েছিলো।
এছাড়াও, তৃনমূলের নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধে লাগামহীন দূর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে কেন্দ্রীয়স্তরেই অনেকগুলি তদন্ত চলছে। নৈতিকতা এবং আইনগত দূর্বল অবস্থানের জন্যেও তৃনমূলের পক্ষে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। রাজনীতির সাধারন জ্ঞান যাদের আছে, তারাই বলবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপিকে পরাস্ত করতে গেলে যে রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভব হওয়া প্রয়োজন, তার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় কংগ্রেস না হলে কখনই তা সম্ভব নয়।