পার্থ মুখোপাধ্যায়
বঙ্গভঙ্গ রোধ যেমন বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেসের তথা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাবনা, চিন্তা ও কর্মে একটা সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনলো, ঠিক সেই সময়েই ভারতের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ভারতে প্রত্যবর্তন, যা সামগ্রিক রাজনৈতিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এক অসাধারণ মাহেন্দ্রক্ষণের বার্তা বহন করে আনলো।
এমনই মাহেন্দ্রক্ষণের আবর্তে গান্ধীজির নেতৃত্বে চম্পারন, বারদৌলি বা গুজরাটের বস্ত্রশিল্প শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন সারা ভারতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক চিন্তা বা পথের ফলিত পরিবর্তনের সূচনা করলো। কংগ্রেসের কর্মকাণ্ড তখন শুধুই বাৎসরিক অধিবেশনের মধ্যে সীমিত রইলো না বরং তা সারা দেশের চৌহদ্দিতে ছড়িয়ে পড়লো। সেই পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯২০ সালে পুনরায় কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো কংগ্রেসের রাষ্ট্রীয় অধিবেশন এবং এই অধিবেশন আক্ষরিক অর্থে কংগ্রেস তথা সমগ্র জাতীর জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এলো। এতোদিন যে কবার কলকাতায় অধিবেশন বসেছিলো, তা ছিলো এক বাৎসরিক আনুষ্ঠানিকতা। ১৯২০ সালে মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে কলকাতা অধিবেশনে সর্বপ্রথম গৃহীত হলো স্বাধীনতার চুড়ান্ত ধাপের প্রথম পদক্ষেপ, আর তা হলো বিশ্বের সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়, যার পোশাকি নাম অসহযোগ। ডাক দেওয়া হলো অসহযোগ আন্দোলনের।
এছাড়াও, আরো এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তঃ এই ১৯২০ সালে কংগ্রেস নিলো। এতোদিন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসের ভাবধারায় ও আদর্শে চলতো। এই ১৯২০ সালেই প্রাদেশিক সংগঠন হিসাবে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসের মান্যতা পেলো। শুরু হলো জাতীয় কংগ্রেসের শাখা সংগঠন হিসেবে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের পথ চলা, যার প্রথম রাজ্য সভাপতি হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। একই সঙ্গে উদিত হলো আর এক নতুন তারকা, যার নাম সুভাষ চন্দ্র বসু।