সংবিধানকে রক্ষা করতে হলে সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে কাজ করতে দিতে হবে

শুভ মিত্র

গত রবিবার দিল্লীতে দলিত সমাজের ওপর কংগ্রেসের তফশীলি জাতি ও উপজাতি বিভাগের প্রধান ও আম্বেদকরের একসময়ের সহযোগী কে রাজুর লেখা ” দ্য দলিত ট্রুথ- দ্য ব্যাটেল ফর রিয়েলাইজিং আম্বেদকর’স ভিশন” নামে একটি বই প্রকাশ উপলক্ষে রাহুল গান্ধী বলেন যদি সাংবিধানিক সংস্থাগুলি যথাযথ কাজ না করে তাহলে মহাত্মাজী বা আম্বেদকরের মত মহান মানুষের দেখানো পথে এই পরিস্থিতিতে একা লড়াই করা যেতে পারে, কিন্তু তা তো সবসময় সম্ভব হয় না। দেশের মানুষের হাতে সংবিধানের মত অস্ত্র থাকা সত্বেও সাংবিধানিক সংস্থাগুলি ছাড়া লড়াই করে সবসময় কাঙ্খিত ফল পাওয়া দুষ্কর। বর্তমানে সেইসব সংস্থাগুলি আরএসএস নিয়ন্ত্রিত। আট বছর আগে যখন মোদীসরকার ক্ষমতায় আসে তখন থেকেই এইসব সংস্থায় সঙ্ঘ পরিবার সমর্থক লোক নিয়োগ শুরু হয়।আজ তাই দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে নীতি নির্ধারক হচ্ছেন সংঘঘনিষ্ঠ বা বিজেপি নেতারা।আর দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তিন চারজন সহস্রকোটিপতি ও ইডি,সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ ও পেগেসাস স্পাইওয়ার।
তিনি দলিত নেত্রী মায়াবতীকে বিঁধে বলেন আমি যদি দুর্নীতি করতাম তাহলে আমি আজ নিয়মিত এই সরকারের সমালোচনা করতে পারতাম না। উত্তরপ্রদেশের গত নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোটের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি মায়াবতীর সমালোচনা করেন। দলিতদের জন্য কাঁসিরামের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন যে বিএসপি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এখন সেই দলের নেত্রী আজ আর দলিতদের জন্য লড়াই করেন না। একসময় দলিত নেতা বি আর আম্বেদকর আমাদের সংবিধান দিয়েছিলেন।তা দুর্বল হয়ে পড়লে সবচেয় ক্ষতিগ্রস্থ হন সমাজের গরিব,দুর্বল,দলিত,সংখ্যালঘু,আদিবাসী সমাজ এবং অবশ্যই ক্ষুদ্র চাষী,বেকার ও ব্যবসায়ীরা। তাদের হাতের একটাও অস্ত্র তা হচ্ছে দেশের সংবিধান। তাই তাকে রক্ষা করতে হবে সবাইকে। গুজরাটের উনাতে একদল দলিত যুবককে বিবস্ত্র করে বেদম মারধোর করা হল,বেশীরভাগই মারা গেলেন। এই অপমানে ১২ জন যুবক কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করলেন।তাদের সাথে হাসপাতালে দেখা করে তাদেরই একজনের পিতার সাথে যখন দেখা করতে গেলাম তখন তিনি ভয়ে কাঁপছেন।আমার হাত ধরে বললেন আমরা আর দেশে থাকতে পারছি না।প্রতিনিয়ত যন্ত্রনা ভোগ করছি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন আস্তে আস্তে দলিতসমাজের মানুষজনও এগিয়ে আসছেন,প্রতিবাদ করছেন।এমন নৃশংসতা প্রত্যেকদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে। এটাই চেয়েছিলেন সংঘ পরিবারের আদর্শ আইকন সাভারকর। তিনি লিখেছেন, একদিন আমি ও আমার সঙ্গীরা এক মুসলীম বালককে নিগৃহীত করি,তাতে আমার হৃদয়ে এক অপার আনন্দলাভ হয়। রাহুলের বক্তব্য তুমি কাউকে পছন্দ না করতে পার,তার ওপর রাগ প্রকাশ করতেও পার,কিন্তু তাকে অস্পৃশ্য করে রাখব কেন।এটাই তো মহাত্মাজীর শিক্ষা। আসলে তিনি সারা দেশ জুড়ে দলিতদের ওপর ক্রমাগত উচ্চবর্ণের মানুষের অত্যাচার, মব লিঞ্চিং ইত্যাদির দিকে আঙুল তুলতে চেয়েছেন।হাতরস থেকে উন্নাও এ দলিত কিশোরীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তার ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার সক্রিয়তা সেই বার্তাই দেয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *