নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ; ৬ই মেঃ
নাগরিকত্ব আইন বা সি.এ.এ এবং এন.আর.সি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শিলিগুড়িতে করা মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরী। আজ বহরমপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই বললেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। উল্লেখ্য গত ৫ ই মে শিলিগুড়ির এক জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘করোনার প্রকোপ শেষ হলেই আমরা সি.এ.এ বাস্তবায়িত করব’।অধীরবাবুর পাল্টা প্রশ্ন কোভিদকালে তো সবকিছুই হয়েছে, তাহলে কেন্দ্র সি.এ.এ চালু করলো না কেন? তিনি বলেন, বিজেপি তো ১৮ টি রাজ্যে ক্ষমতায় ও তাদের শরিকদলগুলি আরও ছয়টি রাজ্যে শাসন করছে,তাহলে সেই রাজ্যগুলিতে সি.এ.এ লাগু করতে পারলো না কেন তারা? অধীর বাবুর অভিযোগ, বিজেপি এভাবেই মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।কেন একজনের ভোটার কার্ড,আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে এবং কেন মানুষকে এই আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা? এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন অধীর বাবু। তিনি স্পষ্ট বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিক আইন চালু করা যাবে না,যে কোন মূল্যেই কংগ্রেস তা আটকাবে।
উল্লেখ্য বহু রাজ্য এই আইন বাতিল করেছে।অসমের কয়েক লক্ষ মানুষ আজ নাগরিকত্ব হারিয়ে নিজেদের সর্বস্ব হারিয়েছেন আইনী সাহায্য নিতে গিয়ে।তাঁদের কোথায় পাঠাবেন অমিত শাহরা? এই প্রশ্ন তুলে অধীর বাবু আরো উল্লেখ করেন যে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন চালু করা যাবে না। এই যে বিজেপি বলছে হিন্দুদের বাঁচাবার জন্যই এই আইন আনছে নাকি তারা, তা ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক।কারণ এই বিষয়ে সংবিধানের নির্দেশ স্পষ্ট। কেশবানন্দ ভারতী মামলার রায়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন সংবিধানের মূল কাঠামো বদল করা যাবে না।এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমন করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, যেদিন আইন পাস হল সেদিন অনেক তৃণমূল- সাংসদ সংসদে ভোটদানে অনুপস্থিত ছিলেন কেন তার জবাব মমতা ব্যানার্জীকেই দিতে হবে। অধীর বাবু কটাক্ষের সুরে বলেন, সেদিন ভোট দানে অনুপস্থিত থেকে এখন কুমীরের কান্না কাঁদছেন মাননীয়া।
সাংবাদিক সম্মেলনে বহরমপুরে সাম্প্রতিক যুবতী হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভরসন্ধ্যায় জনবহুল রাস্তায় এস.পি-র বাসগৃহের মাত্র ২০০ মিটার দূরে প্রকাশ্যে একজন খুন হয়ে গেলেন। তাহলে রাজ্যে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? নাগরিকরা নিজেদের পয়সায় সিসি টিভি লাগিয়েছিলেন বলেই আজ পুলিশ অপরাধীকে ধরতে পারল বলেও তিনি বলেন। অধীর বাবু এই প্রসঙ্গে বহরমপুর শহরের প্রতিটি অঞ্চলে সিসি টিভি লাগানোরও দাবি জানান ।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকার বি.এস.এফ এর নজরদারীর এলাকা ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিমি করার কথা প্রস্তাব করেছিল। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অধীরবাবু বলেন, স্থানীয় পুলিশ ও বি.এস.এফ -এর মধ্য সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের পরিবেশ না থাকলে তা রাজ্যের সমস্যাকেই বাড়িয়ে তুলবে। তবে এভাবে এলাকা বাড়াতে চাওয়া রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ, যা কংগ্রেস মানছে না বলেও অধীর বাবু সাফ জানান। সেনা বা বি.এস.এফ-কে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করাটা অন্যায় বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
উত্তরবঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করার যে দাবি বিজেপির তরফ থেকে উঠেছে তার প্রতিবাদ করেও অধীর বাবু বলেন, রাজ্যকে সচেতন থাকতে হবে যাতে তারা কখনো এই দাবি না করতে পারে;সুষ্ঠভাবে উন্নয়নের বন্টন করলে এই দাবি কেন করবে ওখানকার মানুষেরা। তিনি বলেন লক্ষ্মী-ভান্ডার উন্নয়নের শেষ কথা নয়, মানুষ ভিখারি হয়ে থাকবে না।যাতে গরীব মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর করা উচিত বলেও অধীর বাবু উল্লেখ করেন।
স্কুল দেড়মাস বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, এমনিতেই দুবছর স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের প্রচন্ড ক্ষতি হয়ে গেছে। তাছাড়া গরীব ছাত্র- ছাত্রীরা মিড ডে মিল পাবেন না।তাদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়বে। তারা ভোটার নন বলে তাদের অবহেলা করার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন তৃণমূল দলটিই চালাচ্ছে পুলিশবাহিনী। সেটা ছাড়া দলটি এক পাও চলতে পারবে না।বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে সামিল করানো থেকে অপরাধীদের আড়াল করা সবই করছে প্রতিটি থানা বা জেলার পুলিশ। এসবের বিরুদ্ধে কংগ্রেস শীঘ্রই পথে নেমে আন্দোলন সংঘটিত করবে বলেও অধীর বাবু ঘোষণা করেন।