–লিপিকা ঘোষঃ
“অগ্নিপথ প্রকল্প“ (Agnipath Scheme) ঘিরে এখন উত্তাল গোটা দেশ। নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সারা দেশে। সরকার এই প্রকল্পের অধীনে প্রার্থীদের বয়স সীমা ২১ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করেছে। প্রথমে সরকার নিয়োগের বয়স নির্ধারণ করেছিল সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছর। জানা গেছে, বিগত দুই বছর ধরে সেনাবাহিনীতে (Indian Army) কোনো নিয়োগ হয়নি। তার মধ্যে সরকার অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য বয়সসীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ১৭০ কোটির ভারতবর্ষে মাত্র ৪৫ হাজার যুবককে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হবে মেধা ও মেডিক্যাল টেস্টের ভিত্তিতে এবং নির্বাচিত যুবকরা মাত্র চার বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। এই চার বছরে অগ্নিবীরদের ৬ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং মাসিক বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে ৩০ হাজার টাকার মত।
কিন্তু সরকারের চালাকি যেখানে সেটা হোল, চার বছর পূর্ণ হলে মাত্র ২৫ শতাংশ জওয়ান তার মধ্যে ১৫ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। এখন প্রশ্ন উঠছে চার বছর পূর্ণ হলে ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে স্থায়ী ক্যাডারে ভর্তি করা গেলেও বাকি ৭৫ শতাংশ তরুণের কাছে চার বছর পর কী বিকল্প থাকবে? এই বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছেও কোনো সঠিক দিশা নেই। আর বিজেপি সরকারের তৈরি করা এই দূর্মল্য ও বেরোজগারীর ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে শিক্ষিত, দেশের প্রতিরক্ষায় কাজ করতে চাওয়া তরুণ তরূণীদের কাছে এটাই সবচেয়ে অসহায়তার জায়গা। মন্ত্রকের এই ঘোষণার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। যেসব রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক তরুণ সেনাবাহিনীর নিচের দিকের কর্মী হিসেবে যোগ দেন, যেমন বিহার, উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা। এই তিন রাজ্যে প্রকল্পের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি বিহারে।
উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ একাধিক রাজ্যে প্রতিবাদ, আন্দোলন হিংসাত্মক আকারও ধারণ করেছে।
বিহারের বক্সা এবং মুজফ্ফরপুরে জোরালো প্রতিবাদ করেন একাংশের যুবক। তাঁদের মতে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাকরির বড়ো ভরসা হল ভারতীয় সেনা। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণেরা মূলত সেনার চাকরিকে বেছে নেন। এই প্রকল্পে এই চাকরির নিশ্চয়তা কোথায়? সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
বিভিন্ন মহল থেকেই এই প্রকল্পের সমালোচনা করা হচ্ছে। চার বছর পর যাঁরা চাকরি পাবেন না, তাঁদের কী হবে? এতে কি বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে? বিশেষ করে তাঁরা যেখানে সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এতে দেশের বেকারত্বের তেমন কোনো সুরাহা হবে না। উলটে, চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে।‘
চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী সেনা’ নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্রমশই বিক্ষোভ দানা বাঁধছে রাজ্যে রাজ্যে। বিহার থেকে শুরু হওয়ার বিক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্যত্র। মূলত যে রাজ্যগুলির যুবকদের সেনায় যোগদানের হার বেশি, সেখানেই আন্দোলন অতিমাত্রায় ছড়াচ্ছে।
প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশ এমনটাও বলছেন, সরকারের এই নতুন প্রকল্পে রাজকোষের অর্থ বাঁচানোর শুধুমাত্র সহায়ক হবে এবং ওই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সেনাকে আদপে ‘রক্ষী সরবরাহকারী এজেন্সি’-তে পরিণত করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।