অমিতাভ সিংহ-এর বিশেষ প্রতিবেদন, ২২ শে ডিসেম্বর’২২ঃ
গত সপ্তাহে অতিক্রান্ত হয়েছে ঐতিহাসিক ভারত জোড় যাত্রার শততম দিন।এরই মাঝে দেখা গেল রাহুল গান্ধী সকালে দশ কিমি হেঁটে সিমলায় এলেন হিমাচল প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহন অনুষ্ঠানে, এবং তারপরই আবার ফিরে গেলেন রাজস্থানে।বিকালে আবার দশ এগারো কিমি হাঁটা। এটা কোন রাজনীতিবিদ তো দূরের দেশের কোন ক্রীড়াবিদের পক্ষে সম্ভব ছিল কিনা তা গবেষনার বিষয়।যে রাজ্যেই তিনি পদযাত্রা করছেন সেখানে হাজার হাজার মানুষজন তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন।সঙ্গ দিয়েছেন একসময়ের কংগ্রেস বিরোধী বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্তভূষন,সমাজকর্মী মেধা পাটেকর,যোগেন্দ্র যাদব,শহীদ বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌরী লংকেশের পরিবার,রোহিত ভামুলার মা রাধিকা ভামুলা,কার্গিল যুদ্ধে দু পা হারানো মেজর দীপ্তাক নায়েক,মহাত্মা গান্ধির নাতি তরুন গান্ধি, একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামী ,অভিনেত্রী পূজা ভাট ও রিয়া সেনসহ বহু বিদ্বজন।বিভিন্ন দলের নেতা যেমন ডিএমকের স্ট্যালিন, শিবসেনার আদিত্য ঠাকারে,এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে ইত্যাদি। অভিনেতা কমল হাসান দিল্লীতে এই যাত্রায় যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।যত দিন যাবে তত মানুষ এই যাত্রার উদ্দেশ্যগুলিকে অন্তর থেকে সমর্থন তো করছেনই। ফ্যাসিস্ত বিজেপির ব্রজমুষ্ঠিকে উপেক্ষা করে রাহুল গান্ধীর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। দাঁড়াচ্ছেন গণতন্ত্র রক্ষা করতে।জুড়ে দাও গত ২১ শে ডিসেম্বর হরিয়ানায় এক ঝাঁক প্রাক্তন সেনা ও সেনা অফিসাররা যোগ দিয়েছেন ভারত জোড়ো যাত্রা’য়। এই মানুষগুলো রাহুল গান্ধীর পাশে এসে আজ দাঁড়াচ্ছেন বেকার যুবকদের চাকুরির দাবীতে বা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরকারের তরফে কোন কার্যকর ভূমিকা না নেওয়ার প্রতিবাদে, দেশের অর্থনীতিকে আবার আগের উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে।তাই আজ মোদী শাহের রাত্রের ঘুম উড়ে গেছে। তা সে যতই গুজরাটের নির্বাচনে জয় আসুক না কেন।এই গুজরাটে মাস খানেক আগে এই যাত্রা হয়ে গেলে কি হত তা তারা চিন্তা করতেও ভয় পাচ্ছেন।তাই এই বিভিন্ন ভাষাভাষী, বিভিন্ন ধর্মের বা সংস্কৃতির মানুষজনকে একসাথে জোড়ার মহাযজ্ঞকে যেকোন মূল্যে আটকাতে হবে।তাই বাজারে নামিয়ে দেওয়া হল কেন্দ্রীয় স্বাস্থমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়াকে। সারা দেশে যখন হৈ হৈ করে স্কুল কলেজ চলছে,বিমানবন্দররে যাত্রীদের ঢল নেমেছে,ট্রেনে ভিড় উপছে পড়ছে,বাজার -দোকান বা মলগুলি স্বাভাবিক হচ্ছে কিংবা দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও গতি আসছে ঠিক তখনই ভারত জোড় যাত্রা কি করে বন্ধ করা যায় তার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। গুজরাটে কংকরিয়া কার্নিভালে রোজ কয়েক লক্ষ মানুষ যোগ দেয়,পুষ্প মপলায় অন্তত দেড় লক্ষ মানুষেের আগমন হচ্ছে, গুজরাটে প্রমূখ স্বামীর উৎসবে নিত্যদিন চার লক্ষ ভক্ত আসা যাওয়া করছেন,জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে কুড়িটি শহর সাজছেো,এমনকি তিনদিন আগে ত্রিপুরাতে মোদীর জনসমাবেশ বা বাংলায় শাহকে নিয়ে শোভাযাত্রা সবই নির্বিঘ্নে ঘটেছে। অথচ ভারত জোড় যাত্রায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোভিদ সংক্রান্ত নিয়মাবিধি মানতে বলছেন যেখানে দেশে কোন কোবিদবিধি চালু নেই। ২০২০ সালে জানুয়ারি / ফেব্রুয়ারি মাসে যখন সারা বিশ্ব কোভিদের আতঙ্কে ভীত তখন রাহুল গান্ধী বার বার সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এবিষয়ে।তৎকালীন স্বাস্থমন্ত্রী হর্ষবর্ধন তখন তা উড়িয়ে তো দিয়েছিলেনই,ব্যঙ্গ করেছিলেন।গুজরাটে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজকীয় সম্বর্দ্ধনা দিয়ে বিশাল মিছিল করে সারা দেশে কোভিদ ছড়িয়ে তার দায় জমায়েতের সম্মেলনের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেনএই মোদী শাহরা।মধ্যপ্রদেশে সরকার ভাঙার জন্য সময়মত লকডাউন পর্যন্ত ঘোষনা করতে দেরী করেছিলেন এই মোদী শাহ।আজ তারা কংগ্রেসকে উপদেশ দিতে চাইছে।আধুনিকা ভারত গড়ার হোতাকে এখন শুনতে হবে দেশকে কুসংস্কারে আবদ্ধ করে ক্রমাগত অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া একটি দলের নেতাদের বাণী। যে দলের নেতারা দেশের স্বাধীনতা এনেছিল বা দেশকে বিশ্বের একটা স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সে দলের সাধারন কর্মীরাও জানে দেশের মানুষদের সুরক্ষার জন্য কি করতে হবে।বছরশেষে কি এটাই সেরা রসিকতা।