ভারতের সংবিধানঃ যাত্রা শুরুর দিনগুলি

পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ প্রতিবেদন), ২৬ নভেম্বর’২২ঃ

১৯৪৬ সালের ১৩ই ডিসেম্বর জওহরলাল নেহরু “কনস্টিটিউয়েন্ট এ্যাসেম্বলি” বা গনপরিষদে এক ভাষনেই সংবিধানের কি কি লক্ষ্য হবে, সেই বিষয়ে এক প্রস্তাবনা করেছিলেন যা মোটামুটি ভাবে আমাদের সংবিধানের মুখবন্ধেরই অনুরূপ।

স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুরর ভাষায় নিয়তির অভিসার শেষে ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট মধ্যরাতে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রথমবার এক নতুন রাজনৈতিক ভারতবর্ষের অভ্যদয় হলো, যার রাজনৈতিক পথ ছিলো ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পূর্বনির্ধারিত সংসদীয় গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। স্বাভাবিক ভাবেই একটি সংবিধান তার চালিকাশক্তি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই গঠিত হয়েছিলো ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের সভাপতিত্বে একটি সমিতি, যার ওপর গুরুদায়িত্ব পড়েছিলো সংবিধান প্রনয়নের।

আমাদের দেশের সংবিধান ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর গন পরিষদের অধিবেশনে দীর্ঘায়িত সমর্থনের ঘোষনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিলো, যার প্রস্তাবনা করেছিলেন গনপরিষদের সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ। এই ঘটনাটিকে জাতীয় অনন্য বিজয়বার্তা বলে উল্লেখ করে প্রস্তাব পেশের প্রাক্কালে জাতীর পিতা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

যদিও আমাদের দেশে সংবিধান প্রবর্তিত হয় ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫০ সালে, এই সংবিধান গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর ২৬শে নভেম্বর দেশে “ন্যাশালাল ল ডে” বা “জাতীয় আইন দিবস” পালিত হতো। ২০১৫ সাল থেকে দিনটি “ন্যাশনাল ল ডে” র পরিবর্তে “কনস্টিটিউশনাল ডে” বা সংবিধান দিবস বলে পালিত হয়।

এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯২৭ সালে সাইমন কমিশন এর ব্যার্থতার পর ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ আধিকারিক বারকেনহেড তৎকালীন জাতীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্ব যখন ব্রিটিশ শাসনের অবসানের কথা বলছেন, তখন তারা আগে একটি সংবিধান লিখে দেখাক। কংগ্রেস সেই চ্যালেঞ্জ সরাসরি গ্রহন করে এবং একটি কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন মতিলাল নেহরু। এই কমিটিতে অন্যান্যদের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু এবং সুভাষ চন্দ্র বসুও ছিলেন। ৮৭ টি ধারা সম্বলিত একটি ড্রাফ্ট সংবিধান তৈরিও করা হয়ে যায় ১৯২৮এ। এই ড্রাফ্ট সংবিধান মুসলিম লিগ মানতে চায়নি, যেহেতু তাতে হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য আলাদা ইলেকটোরাল কলেজ ছিলোনা। তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো যে বর্তমান সংবিধানের মূল সুর এবং ধাঁচ এই ড্রাফ্ট সংবিধানের মধ্যেও নিহিত আছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *