১০০ দিন পেরিয়ে ভারত জোড়ো- এক ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া

সৌমিত্র দস্তিদার

( প্রামাণ্য তথ্য চিত্র নির্মাতা)

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন উপমহাদেশের সম্পুর্ন অসাম্প্রদায়িক কৃষক নেতা। তিনি আত্মজীবনীমূলক এক লেখায় লিখেছেন যে, আমি জীবনের শুরুতেই এটা বুঝেছিলাম গ্রাম জীবন না জানলে রাজনীতি অর্থহীন। ফলে মাইলের পর মাইল হেঁটে আমি গ্রামীন সর্বহারা কে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। ভাসানীর কথা আজ খুব মনে পড়ছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতজোড়ো মহা মিছিলের একশো দিন পুর্ন হল বলে। আগেও বলেছি মহাত্মা গান্ধী ছাড়া আর কারুর কথা মনে করতে পারছিনা যিনি রাহুল গান্ধীর মতো এভাবে দীর্ঘ পথ চলেছেন গ্রাম ভারতের বারোমাস্যা সামনাসামনি জানতে।

মনে রাখতে হবে রাহুল গান্ধীর কাজ গান্ধীজীর চেয়েও কঠিন। কারন গান্ধী যুগে মুল্য বোধের রাজনীতির গুরুত্ব ছিল। তখন বৃটিশ বিরোধী লড়াই ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। কুর্সি নয়, তখন দেশ নেতাদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। আর আজ এদেশে গনতন্ত্র বিপদের মুখে। স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব শাসকদের মধ্যে প্রবল হচ্ছে। বাক স্বাধীনতা দিনের পর দিন হয়ে উঠছে নিছক আভিধানিক শব্দ। যেনতেন ছুতোয় বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে। হিটলারের মতোই এক নেতা, এক পতাকা, এক দলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মুল্য বোধের অবক্ষয় আজ আর কোন নতুন ঘটনা নয়। অর্থনীতি চরম বিপাকে। গ্রাম শহরে বৈষম্য স্পষ্ট। সাম্প্রদায়িক মেরুকরন আজ শাসকদের ভোটে জেতার বড় অস্ত্র। এরকম এক পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের আইকন এক যুবক মাইলের পর মাইল চলেছেন জনতার ভালবাসা আবেগকে সম্বল করে। নিঃসন্দেহে আজকের ভারতীয় রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। রাহুল গান্ধীর এই দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে যাওয়া স্রেফ কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এ এক নতুন পথের অন্বেষন। যে পথ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে সত্যি সত্যি জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন দেবে।

আমরা যারা সিনেমা করি, তাদের কাছে এই ভারতজোড়ো চমৎকার সব চিত্রকল্পের জন্ম দিচ্ছে প্রতিদিন। হাজার হাজার মাইল চলতে চলতে রাহুল গান্ধী নদী, পাহাড়, ধানক্ষেত, চড়াই উতরাই পার হয়ে এদেশের আমজনতার অন্তরকে অজান্তেই স্পর্শ করছেন। নিজেই হয়ে পড়ছেন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। হয়ে পড়ছেন জাতীয় সংহতির প্রতীক।

এই পদযাত্রার গুরুত্ব কোন ভোটের অঙ্ক দিয়ে বোঝা যাবে না। এও এক ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া। যার মুল্যায়ন হবে আগামীর ভারতে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *