দীর্ঘ সময় এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম”: দলের সভাপতি নির্বাচনে ভোট দিয়ে বললেন সোনিয়া গান্ধি

শুভাশিস মজুমদারের বিশেষ প্রতিবেদন, ১৮ অক্টোবর’২২ঃ

গত সোমবার, ১৭ অক্টোবর’২২, সারাদেশে ৯,৪৯৭ কংগ্রেস প্রতিনিধি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং শশী থারুরের মধ্যে তাঁদের দলের পরবর্তী প্রধান হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য ভোট দিয়েছেন। ৯৬ শতাংশ ভোটদান প্রমান করেছে এই নির্বাচনকে নিয়ে কংগ্রেসের উৎসাহ উদ্দীপনা। বিদায়ী কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধি বলেছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে শশী থারুর এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে আলাদাভাবে, তাঁরা সভাপতি নির্বাচিত হলে তাঁদের কি কর্মসূচি হবে তা ব্যাখ্যা করে কংগ্রেস প্রতিনিধিদের কাছে সমর্থন চেয়েছেন।দেশের গদী-মিডিয়া এক্ষেত্রেও এক অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা একজন প্রার্থীকে গান্ধি পরিবারের সমর্থনপুস্ট প্রার্থী বা অফিসিয়াল প্রার্থী ও অপরজনকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জোর প্রচার চালিয়েছে। এটা তাদের কৌশল। গান্ধি পরিবারের প্রতি বিজেপির কটাক্ষ করার (পড়ুন কুবাক্য বলার) ব্যবস্থা রাখা, যা পরিস্থিতি অনুযায়ী সুযোগ বুঝে পরে ব্যবহৃত হতে পারে। যদিয় সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি প্রত্যেকেই বার বার স্পষ্ট করেছেন, কংগ্রেসের যে কোনো নেতা এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এবং গান্ধি পরিবারের ভূমিকা এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকবে। দুই প্রার্থীও বহুবার এই একই কথা বলেছেন সাংবাদিকদের। প্রশংসা করেছেন গান্ধি পরিবারের ভূমিকাকে।

তবে গান্ধি পরিবারের অবদান, আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অনস্বীকার্য। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম, অম্বিকা সোনি এবং মুকুল ওয়াসনিক সহ বেশ কয়েকজন বরিষ্ঠ নেতা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে গান্ধি পরিবার ভবিষ্যতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

অন্তর্বর্তীকালীন কংগ্রেস সভাপতি ছাড়াও, শ্রীমতি গান্ধি কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টি (সিপিপি)-রও প্রধান। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সদর দফতরে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের শ্রীমতি গান্ধি বলেন, “আমি এই দিনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিলাম।”

সোনিয়া গান্ধি ছাড়াও, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং, পি চিদাম্বরম, এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ভদ্রা এআইসিসি অফিসের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। কর্ণাটকের বাল্লারিতে একটি কনটেইনারের ভিতরে বিশেষভাবে তৈরি বুথে রাহুল গান্ধি ও অন্যান্য প্রতিনিধিরা ভোট দেন। “আমি খুব গর্বিত বোধ করছি যে সারাদেশের কংগ্রেসের লোকেরা, মহিলা এবং পুরুষরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁদের ম্যান্ডেট প্রয়োগ করার জন্য একত্রিত হচ্ছেন” – রাহুল গান্ধি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন।

কংগ্রেসের প্রায় ১৩৭ বছরের পুরনো ইতিহাসের ষষ্ঠতম (সভাপতি) নির্বাচন পরিচালনার জন্য সারা দেশে ৩৬টি ভোট কেন্দ্র ছিল। সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। ১৯ অক্টোবর গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে, মধুসূদন মিস্ত্রি, যিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির প্রধান, বলেছেন যে ৯,৯১৫ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (পিসিসি) প্রতিনিধি বা ভোটারদের ৯৬% ভোট দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দলীয় গণতন্ত্র থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

আমাদের জন্য সবচেয়ে সন্তোষজনক বিষয় হল যে সমস্ত রাজ্যে যেখানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে কোনও প্রতিকূল ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এটি একটি বড় প্রাপ্তি…একটি শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে একটি উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে,” মিস্ত্রি বলেন, “কংগ্রেস পার্টি দেখিয়েছে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র কি এবং অন্যান্য দল যারা এটি থেকে শিক্ষা নিতে চায়, তাই করুক।” ভোট শুরুর আগে, মিঃ খড়্গে এবং মিঃ থারুর দুজনেই ট্যুইট করে জানিয়েছেন যে তাঁরা একে অপরের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

@শশীথারুরকে আমার শুভেচ্ছা। আজ সকালে তাঁর সাথে কথা বলেছি, আমরা দুজনেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী ও উন্নত জাতি গঠনের জন্য @INCIndia কে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি,” মিঃ খড়্গে করেছেন।

আমার ধন্যবাদ @INCIndia-এর সমস্ত সহকর্মী, কর্মী, সারাদেশের প্রতিনিধিদের যাঁরা (ভোটে) অংশগ্রহণ করার, প্রচার করার, স্বপ্ন দেখার এবং আজ ভোট দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন — এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, এটা আপনারই জয়! জয় হিন্দ, জয় কংগ্রেস!” মিঃ থারুর টুইট করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *