– সুমন রায় চৌধুরী:
এতো দিনে কি আমরা বুঝে নিয়েছি যে মনের নামও মহাশয়, যা সহাবে তাই সয়? না হলে জিগ্নেশ মেবানি কে গ্রেফতার করার কয়েক সপ্তাহ মাত্র কেটেছে, সত্য মিথ্যা কোনো অভিযোগই প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, তারপরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা গেল রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বেই আমাদের নেতা রাহুল গান্ধী কে , অপদস্থ বলা ভালো জেল বন্দী রাখার নতুন অভিসন্ধি।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় প্রথমে তাঁকে ডেকে পাঠানো এবং প্রায় গ্রেফতারের পরিস্থিতি আদতে এক সাজানো চিত্রনাট্যের খন্ডচিত্র মাত্র
। যখন আমরা দেখছি , ফিল্ম ইন্সিটিউট থেকে জওহরলাল য়্যুনিভার্সিটি সর্বত্র আরএসএস বা বিজেপি ঘনিষ্ঠদের মাথায় বসানো হয়েছে, তখনই যে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের পথ প্রশস্ত হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে কংগ্রেস মুক্ত ভারতের দাবী, অর্থাৎ আর কোনো বিরুদ্ধ শক্তি থাকবে না, ভিন্ন মত কে যেন তেন প্রকারেণ অবরুদ্ধ করতেই হবে। সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ অর্থাৎ গণমাধ্যম বহু পূর্বেই পকেটস্থ, বুদ্ধিজীবী এবং বিরোধী কণ্ঠস্বর কে জেলে পোরা সম্পন্ন, এভাবেই অপসক্ত নির্লজ্জভাবে দেশের দখল নিতে চাইছে ।
স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা হয় কাজ ছেড়ে চলে যায়, নাহলে রহস্যজনক ভাবে বদলি হয়। CBI এর দুই প্রধানের মধ্যে লড়াইও আমরা দেখেছি , প্রাক্তন ক্যাগ কর্তা স্বীকার ও করেছেন 2G/3G ভুও ছিল, এও ভারত দেখেছে।
এভাবেই দমন পীড়নের পথে হেঁটে এই ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে । ঠিক যে ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের কবি, মান্দেলস্তাম কে সোয়েটার না দিয়ে, কোর্টের সহায়তা না দিয়ে, দীর্ঘ দিন সাইবেরিয়ার জেলে বন্দী রেখে ‘খুন’ করা হয়েছিল, সে ভাবেই স্টান স্বামীকেও খাবার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপারেটাস না দিয়ে কার্যত হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের শত শত বঞ্চিত নিপীড়িত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের আশ্রয় রাহুল গান্ধী কে এইভাবে প্রতিহত করা যাবে না তা বোধ হয় আদনির দালালদের জানা নেই ।
বিঅউক সংখ্যাধিক্য থাকা সত্ত্বেও 120/130 ধারার বিবর্তনের কথা যারা ভাবে না, উল্টে কী ভাবে এর অপপ্রয়োগ করা যায় তার পথ খোঁজে, কংগ্রেস তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেই । টমাস পেন এর উক্তি অনুযায়ী “শান্তি ও সভ্যতার কথা বলা, রাজনৈতিক অনাচারের বিরোধিতা করা…এসব যদি দ্রোহ হয় , তবে আমার কবরের ওপর লিখে রেখো আমি দ্রোহে বিশ্বাস রেখেছিলাম”।
দেশের সামনে এখন দুটি পথ খোলা, অনাচার ও সাম্প্রদায়িকতার হাত ধরা অথবা সম্প্রীতি ও উন্নয়নের পথ ধরা ।
কোন পথ আপনা কে ভারতের অন্তরাত্মা কে উপলব্ধ করার সহায়ক হবে, বিবেচনা আপনার ।
রাহুল গান্ধী শুধু ফিলিপিনো কবি জোস রিজ়ালের মতো রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে বলবেন, ” নোলি মে টেঙ্গেরে” অর্থাৎ আমায় ছোঁবে না…