সনাতনী চিন্তার আড়ালে বহুত্ববাদী ভারতের মূলে কুঠারাঘাত

পার্থ মুখোপাধ্যায়

Democracy এবং Diversity প্রচ্ছদ দুটি পাঠক্রম থেকে CBSE র পাঠক্রম থেকে বাদ গেলো।সিবিএসসি তথা বিভিন্ন শিক্ষার পরিচালন পর্ষদ সময়ে সময়ে তাদের পাঠক্রমে পরিমার্জন, পরিবর্ধন ইত্যাদি করেই থাকে। এই কাজ সময় ভিত্তিক প্রয়োজনেই হয় ঘটনাবলীর সমসাময়িক গুরুত্বের বিচারে। এর পূর্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু বর্তমান মোদী সরকারের দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে সিবিএসসির পাঠক্রমে যে ধরনের পরিবর্তন তথা বিভিন্ন ঘটনাবলীকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তঃ গৃহীত হয়েছে, তাতে বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা এই পরিবর্তনের পশ্চাতে প্রাসঙ্গিকতার চেয়ে সঙ্ঘপরিবারের গোপন উদ্দেশ্য সাধনের উদগ্র বাসনারই প্রতিফলন ঘটেছে। এবার সেই বাসনা ছাত্র সমাজ তথা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকেও প্রসারিত হচ্ছে।ইসলামিক সাম্রাজ্যের উদয় এবং এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের নানা স্থানে তার বিস্তার বিশ্বের আর্থসামাজিক অবস্থানের ওপর অপরিসীম প্রভাব ফেলেছিলো, যা বাদের তালিকায় রয়েছে। ভারতে মুঘল দরবারের কথাও বাদের তালিকায়, অথচ ভারতবর্ষকে যে সঙ্ঘপরিবার “সোনে কি চিড়িয়া” বলে, তার ঘটনাক্রম কিন্তু এই মোঘল যুগেই যখন সারা বিশ্বের জিডিপির এক চতুর্থাংশ এই দেশের অবদান। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশেও কোপ পড়েছে, কেননা তা জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর সাফল্যের ইতিহাস। দুই পরাশক্তি আমেরিকা এবং রাশিয়ার মাঝে সদ্য স্বাধীন ভারতবর্ষ বিশ্বের একশোটিরও বেশি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে, যা সঙ্ঘ পরিবারের কাছে অস্বস্তিকর। বাদ পড়ছে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ের ঘটনাবলীও।জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্বে ভারতের অবস্থান ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে সারা বিশ্বের নজর ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি বর্তমান রাশিয়া ও ইউক্রেনের লড়াইয়ে রাষ্ট্রসংঘে মোদী সরকারের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কূটনীতিক মহলের মত নেহরুর নীতিই মোদী সরকারকে মানতে হয়েছে, যা নেহরুর আমলের বিদেশনীতির কার্যকারিতা ও সাফল্যই প্রমান করে, যা মোদীর আত্মমর্যাদার পক্ষে স্বস্তিকর নয়। তাই এসব বাদ। ক্রমে ক্রমে যা প্রতীয়মান হচ্ছে, সঙ্ঘপরিবার তাদের গোপন রাজনৈতিক, সামাজিক এ্যাজেন্ডাগুলি এক এক করে কার্যক্ষেত্রে ফলিত প্রয়োগ শুরু করছে যার সূদুরপ্রসারি ফল আমাদের জাতীয় জীবনে কি বিষময় ফল ফলায় তাই দেখার।ভারতরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে যে বহুমাত্রিক সমাজ ও রাজনৈতিক পরিচয় সারা বিশ্বে ভারতকে এক অনন্য স্থান দিয়েছে, সঙ্ঘ পরিবারের প্ররোচনায় মোদী সরকার একের পর এক বিভেদমূলক কাজের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে ব্রতী হয়েছে যা শাস্বত ভারতের আত্মগরিমাকেই বিদ্ধ করছে। নৈতিক বলে বলীয়ান ভারত আজ তাই সারা বিশ্বেই প্রশ্নের মুখে।

( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *