কংগ্রেসের চিন্তন শিবির যখন বাকিদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় 

-অভিষেক ব্যানার্জী:

-“এ কথা অনস্বীকার্য যে কংগ্রেস সাধারণ মানুষের থেকে দূরে সরে গেছে , তাই ফিরতে হবে মানুষের কাছে “
—“লড়াই টা শুধু নির্বাচনে জেতার নয় ; আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার “
—“BJP-RSS এর বিভেদকামি (Bharat Todo ) এর বিকল্প Congress এর দেশ গঠন (Bharat Jodo ) আন্দোলন “
—” কোন আঞ্চলিক দল নয় BJP কে পরাস্ত করতে নেতৃত্ব দিতে হবে কংগ্রেস কে”
—“শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক সংগঠন নয় দলের ভিতর সারা বছরের জন্য নির্বাচন পরিচালনা এবং আদর্শ প্রশিক্ষণের ডিপার্টমেন্ট “
—” অনির্দিষ্ট কালের জন্য পদের জায়গায় নির্দিষ্ট সময়কালীন (সর্বাধিক 5 বছর )  পদ এবং এক পরিবার এক টিকিট “
চুম্বকে এটাই চিন্তন শিবিরের নির্যাস এবং বকলমে দেশের আপামর পরিবর্তনকামি জনসাধারণের মনের কথা এবং ভারতবর্ষের অগণিত কংগ্রেস কর্মীর চাহিদা ! 
আর বক্তা ? – রাহুল গান্ধী ।
 ভারতবর্ষের মিডিয়া সমাজ এবং WhatsappUniversity এর  তকমা অনুযায়ী যিনি  “অনিচ্ছুক রাজনীতিবিদ ” , “পরিবারতন্ত্রের প্রতীক ” ” গুরুত্বহীন ” ইত্যাদি ইত্যাদি ।
কিন্তু হলোটা  কি ! 
এই বক্তব্য গুলো জনসমক্ষে আসবার সংগে সংগেই এমনকি উদয়পুর চিন্তন শিবির শেষ হতে না হতেই আসতে থাকলো প্রতিক্রিয়া ! সৌজন্যে ভারতবর্ষের বড় , মেজ , সেজ মিডিয়া এবং তাদের নেপথ্য রাজনৈতিক প্রভুরা । 
উদ্দেশ্য এই পদক্ষেপ এবং রাহুল গান্ধীর  ব্যর্থতা অনুসন্ধান ।
এর সাথে যুক্ত হলো – এইসব রাজনৈতিক প্রভু যারা ঘটনাচক্রে কেন্দ্রের এবং বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদল তাদের দলীয় মুখপত্র তে প্রতিবেদন এবং দলীয় মুখপাত্রদের প্রতিক্রিয়া । এবং পুরোপুরি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ।
ঠিক যেনো ভীমরুলের চাকে ঢিল !! 
এবার এই প্রেক্ষিতে কিঞ্চিত প্রশ্ন  
প্রথমতঃ – যদি উদয়পুর শিবির হাস্যকর -গুরুত্বহীন এবং আদ্যোপান্ত সময়নষ্ট হয়ে থাকে – তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা তাদের মূল্যবাণ সময় এবং মহার্ঘ্য Internet এবং মিডিয়ার পরিভাষায় airtime খরচ করে প্রতিক্রিয়া দিতে যাচ্ছেন কেনো ? 
দ্বিতীয়ত –  কংগ্রেস এর চিন্তন শিবিরে কি কেন এবং কবে হচ্ছে সেটা নিয়ে এইসব বিরোধী  রাজনৈতিক কুশীলবদের শিরঃপীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার দরকার টা কি !
যেমন দিল্লির 6 এ দীন দয়াল মার্গের দেয়ালের রং কি হবে বা রাজ্যের তথাকথিত বিরোধী দলের নির্বাচনী Strategy এর ভিতর কামিনীকাঞ্চন এর কি গুরুত্ব বা 30বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট এ কে দারোয়ান হবে বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে  চিটফান্ড কান্ডের মুখ্য Beneficiary বলা মানুষ সেই দলেরই প্রধান মুখপাত্র হবে কিনা সেটা যেমন সেই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় ; ঠিক সেরকমই এই দেশকে স্বাধীনতা দেয়া দলের অগ্রাধিকার এবং অবশ্য কর্তব্য ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখার উদ্দেশে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ  সেটাও একান্তই আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ।
সেটা নিয়ে খুব বেশী বক্তব্য রাখা কি সমীচীন ?
তাহলে এই অযাচিত মন্তব্যের কারণটা কি !
কারণটা নিহীত মানুষের প্রাথমিকতম আবেগের ভিতর – সুরক্ষাহীনতা বা Insecurity ।
আর হবে নাই বা কেন -ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত দেশে যখনই কংগ্রেস কোন আন্দোলন সংগঠিত করেছে বা জনসংযোগ পদযাত্রা করেছে তখনই সরকারএর  থরহরিকম্প অবস্থা হয়েছে ।
স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে বৃটিশ শাসনের অসহযোগ কি ভারত ছাড়ো আন্দোলন হোক কি স্বাধীনতাত্তর কালে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে ইন্দিরা গান্ধীর ভারত যাত্রা বা  রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে হালফিলের কৃষকদের নিয়ে  কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে অন্দোলন ; দেশের সরকারকে জনবিরোধী পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে হয়েছে । তাই এইসব রাজনৈতিক দল এবং তাদের শিল্পপতি Fund Manager যারা আবার ঘটনাচক্রে দেশের তাবড় মিডিয়া হাউসের মালিক তাদের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বওয়া স্বাভাবিক ।
ঠান্ডা স্রোত বওয়া স্বাভাবিক কারণ কংগ্রেস যত শক্তিশালী হবে তত নিপীড়িত মানুষ আর তাদের অবদমিত আওয়াজ ভাষা খুঁজে পাবে ।
আর যত সেই আওয়াজ শক্তিশালী হবে ততই ‘ভাষা – ধর্ম – পোষাক -খাদ্যাভ্যাস – জাতিসত্বার’ নামে মানুষকে গুলিয়ে দিয়ে নাগরিকত্ব থেকে চাকরি থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাস টাও সাধারণমানুষদের আওতা থেকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ প্রশ্ন তুলবে ।
প্রশ্ন তুলবে রাজ্যের বিরোধী বিধায়ক বিধানসভাতে রাজ্যভাগের দাবি তুললে বা সাংসদ মিডিয়া তে সেই দাবিকে সমর্থন করে বিবৃতি দিলে বিধানসভার স্পিকার তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভংগের নোটিস কেনো দেয় না বা  রাজ্য সরকার কেনো প্রশাসনিক FIR করে না ।
এই প্রশ্রয় এবং প্ররোচনার সেটিং টা কিসের ।
প্রশ্ন করবে মুখে বিরোধী দলের ঐক্যের দাবি করে বিরোধী দলের অফিস পুড়িয়ে বা জনপ্রতিনিধি ভাংগিয়ে কি আদৌ ঐক্য সম্ভব !
Sedition বা caa এর মতো আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ঠিক কতটা আলাদা – কারণ সংসদে যখন এই মর্মে আলোচনা বা ভোটাভুটি হয় তখন রাজ্য সরকারের সাংসদ রা উপস্থিত থাকে না কেনো ? দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখা টা কি নিছকই মুখের কথা !
চাকরি বা কর্মসংস্থান হোক কি শিক্ষার বেসরকারিকরণ – সত্যিই কি রাজ্য আর কেন্দ্রীয় শাসকদলের Modus Operandi তে কোন পার্থক্য আছে ? প্রেক্ষিত টুকু বাদ দিয়ে !
তাহলে আঞ্চলিক দলগুলো কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য নাকি এদের রাজনৈতিক DNA গুলো আদতে  এক ! আর তাই যদি হয় তাহলে এদের RSS বা BJP বিরোধিতা কতটা সৎ ?
অতএব এই প্রশ্নগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে ভাবতে বাধ্য করার চেষ্টা হলে সেই চেষ্টাগুলোকে আটকাতে হবে সংগঠিত ভাবে ।
যেন তেন প্রকারেন !
আর তাঁর সাথে সাথেই সেই  দূরদর্শী মানুষটিকে আক্রমণ করতে হবে – যে সবার আগে দেশকে কোভিড নিয়ে সচেতন করেছিলো – যে nyay( ন্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক ভাবে সক্ষম করতে চেয়েছিল – চেয়েছিল স্বাধীন অর্থনীতি যেনো প্রান্তিক মানুষের সুরাহা করে ; অপরিকল্পিত GST বা নোটবাতিলের মতো সিদ্ধান্ত যেনো আবার দেশকে পিছিয়ে না দেয়   – মুক্ত বিদেশনীতি যেনো দেশের কূটনৈতিক স্বাধিকার এবং সার্বভৌমত্ব কে অক্ষুন্ন রাখে — সেই আদ্যোপান্ত ভদ্র শালীন এবং আমার আপনার মতো পারিবারিক মানুষটাকে হেয় করতে হবে যার নেতৃত্বগুণের পরতে পরতে জড়িয়ে গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকার আর আধুনিক ভারতের মূল্যবোধের মিশেল  ।হেয় করতে হবে রাহুল গান্ধীর মতো মানুষকে ।
কারণ এই মানুষটাই কিন্তু বারবার আমার আপনার মনের কথা কে পথের আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছে । সে মূল্যবৃদ্ধি হোক কি ডোকলাম এ বৈদেশিক আক্রমণ ।
এমনকি সদ্য সমাপ্ত উদয়পুরে রাহুল গান্ধী যা যা বলেছেন সবই তো আমার আপনার সুপ্ত অভীপ্সা ।
তাহলে আপত্তি টা কোথায় ?
আপত্তি টা মুখে এবং মনে আলাদা থাকা দেশের অর্থ এবং রাজনৈতিক প্রভুদের সদিচ্ছার । 
তাই অবধারিত ভাবে চেষ্টা হবে গুলিয়ে  দেওয়ার ;  ” চিন্তন ” যে সত্যি “দুশ্চিন্তার ” !
কারণ “এরা যত বেশী ভাবে তত বেশী জানে ; তত কম মানে ” — সব ফ্যাসিষ্ট  শাসকের মনের কথা ; চলচ্চিত্রের হোক কি বাস্তবের ! 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *