অমিতাভ সিংহ
সোমবার বিধানভবনের প্রেস রুমে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রকাশ করলেন বাংলার দিশা। উপস্থিত ছিলেন দুই প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী ও সন্তোষ পাঠক। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কংগ্রেসের ইস্তাহারে বলা হয়েছে বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নের বাংলাকে ফিরিয়ে আনার যা একমাত্র কংগ্রেসই পারে।
অঙ্গীকার করা হয়েছে ★আইনের শাসন ও মহিলাদের নিরাপত্তাঃদক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি থানায় মহিলাদের সুরক্ষার জন্য মহিলা পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি। মহিলাদের আইনী সহায়তা বৃদ্ধি, কাঠকয়লার উনুনের বদলে ভর্তুকি দিয়ে সৌর ওভেন দেওয়া,কৃষি হাট তৈরী,স্বাক্ষরতা শিক্ষা, মহিলা কলেজ বাড়ান, প্রবীন ও বিধবা মহিলাদের মাসিক১৫০০ টাকা পেনসন প্রদান নিশ্চিতকরণ।
★সামাজিক সুরক্ষাঃসমাজের আর্থিক অনগ্রসর ২০ শতাংশ পরিবারকে মাসিক ৫৭০০ টাকা করে সাহায্য প্রদান ও করোনা অতিমারিতে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহারা পরিযায়ী শ্রমিকের পরবর্তী চাকুরিতে নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পরিবারপিছু ৫০০০ টাকা মাসিক অন্তবর্তীকালীন ভাতা প্রদান।
★শিল্প প্রসার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিঃ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৭ টি উন্নয়ন অঞ্চল তৈরী করে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠা। যেমন দূর্গাপুর ও আসানসোলে বৈদুতিক গাড়ী তৈরীর কারখানা ও অনুসারী শিল্প স্থাপন।উত্তরবঙ্গে বৈদুতিন সারন্জম ও ওষুধ শিল্প স্থাপন।উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় উক্ত শিল্পের যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন।মালদা,মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলায় কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন। কলকাতায় ইনফরমেশন টেকনোলোজি, ইন্জিনিয়রিং ডিজাইন শিল্প। হওড়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই)। উপকূলবর্তী এলাকা যেমন ডায়মন্ড হারবার,হলদিয়া,নন্দীগ্রাম, দীঘাতে সামুদ্রিক খাদ্য উৎপাদন। তার সাথে এক জানালা পদ্ধতিতে প্রকল্পগুলির ছাড়পত্র দেওয়া।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য আর্থসামাজিক সুবিধা, ব্যবসায়ী সহায়তা কেন্দ্র,নুতন ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য উপদেশ ও সহায়তা প্রদান।তাদের জন্য দেশে বাজার তৈরী করা ও রপ্তানির সহায়তা করা,নতুন পন্য উৎপাদনের পথ ও তাদের বাজার সৃষ্টি করা,মূলধন জোগাড়,ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করা এই পরিকল্পনার অঙ্গ।বড় কারখানার উদ্বৃত্ত জমিতে বিকল্প শিল্পস্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
★অন্নদাতা কৃষকদের উন্নয়নঃসম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি কালা কৃষি আইন বাতিলের জন্য সর্বোচ্চ দাবি জানানো ও নূন্যতম সহায়ক মুল্য বা এম এস পি বজায় রাখা হবে।চাষের জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুতের ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে।চাষীদের উপার্জনের মাত্রা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য ও তাদের জীবনযাত্রার মানের সার্বিক উন্নয়নের সহায়তা করার জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নতমানের সার ও বীজ ব্যবহারের জন্য উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হবে।এফসিআই, নাফেড এর মত সংস্থাগুলিকে আরও কর্মক্ষম করে তোলা হবে।সেচ ও জলাশয় নীতি ঢেলে সাজানো,প্রতিটি ব্লকে হিমঘর স্থাপন ও শস্য পরিবহনের কাঠামো জোরদার করা হবে।
★শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মান উন্নয়নঃশিক্ষা প্রতিস্থানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বর্জন ও মিড ডে মিল ব্যাবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত, এসএসসি,টেট ইত্যাদি পরীক্ষা নিয়মিত ও স্বচ্ছতা তার সাথে ফলাফলের সময়োচিত ঘোষনা নিশ্চিতিকরণ।কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দক্ষতা বিকাশ ও নেতৃত্ব দেওয়ার শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন,পরীক্ষাগারের আধুনিকিকরণ এই পরিকল্পনার একটা দিক। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নিখরচায় পড়াশোনার ব্যবস্থা,গবেষনার জন্য অর্থবৃদ্ধি ও স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতিতে রাজনৈতিক লোকেদের বদলে শিক্ষক,অধ্যাপক,গবেষক অন্তর্ভুক্তিকরণ।
করোনা অতিমারীর দুর্দশা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যে সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে। টেলি মেডিসিন,অনলাইন ভিডিও পরামর্শ, সংক্রামন গুলি দ্রুত নির্ণয় ও রোগ সনাক্তকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলা,গ্রামীন অঞ্চলে যথেষ্ট চিকিৎসক নিয়োগ,রাজ্যজুড়ে নার্সিং, প্যারামেডিক্যাল কোর্সের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন,রোগ প্রতিরোধ করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই হবে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা।
★জল ও পরিবেশ রক্ষাঃঅার্সেনিকের বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিটি বাড়ীতে পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়া নিশ্চিত করা হবে।মালদা,মুর্শিদাবাদ জেলার নদীর ভাঙন রোধ ও ভুগর্ভস্থ জলের স্তর উন্নতি করার লক্ষ্যে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নে জোর দেওয়া হবে।
★শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষাঃ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য- এই নীতি অনুযায়ী তা সুরক্ষিত ও তা সংরক্ষনের জন্য দায়বদ্ধতা। প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়র মধ্যে সম্প্রতি রক্ষা করার যাবতীয় চেষ্টা ও স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার পরিবেশে শিল্পসংস্কৃতির বিকাশ নিশ্চিতিকরণ।
★দান খয়রাতির পরিবর্তে স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নঃ দান খয়রাতির রাজনীতির বদলে স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থিক অবস্থা বৃদ্ধি করা যাতে তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেরাই কিনতে পারেন। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের আমলেই বাংলার সবচেয়ে বেশী উন্নতি হয়েছিল, কংগ্রেস আবার ডাঃ রায়ের স্বপ্নের বাংলা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।
অন্যদলের ইস্তাহারের সাথে কংগ্রেসের ইস্তাহারের তফাৎ একটাই। এই ইস্তাহারে কিভাবে এইসব প্রতিশ্রতি পূরণ করা হবে তার একটা দিশা দেখানো আছে।তাই এই ইস্তাহারের নামকরণ করা হয়েছে বাংলার দিশা।