মেরুদণ্ড সোজা রেখে বাঙালিকে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠে আসে যে, বাংলা ও বাঙালির এই দুঃসময়ে সেই মহান মানুষটিকে অন্তরে কতটা গ্রহণ করতে পেরেছি কি আমরা?
স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবঙ্গে যে ঘটনাপ্রবাহ আমরা কখনো দেখিনি, তা আজ দগদগে ঘা ‘এর মতো লক্ষণীয় এই পশ্চিমবঙ্গের বুকে। যে শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কারের প্রগতিশীল অভিমুখ রচনা ছিলো রাজা রামমোহনের স্বপ্ন, তা আজ এই পশ্চিমবঙ্গে ছারখার হয়ে যাওয়ার মুখে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার লক্ষে ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্রের আভাস আজ লক্ষণীয়।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি কেবল কোনো আর্থিক দুর্নীতি এমন ভাবাটা আংশিক সত্য ; বরং এক ভীষণ সামাজিক অপরাধ এবং অধঃপতন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। একবারও আমরা ভেবে দেখছি কি, যে যারা অনৈতিক পথে, পিছনের দরজা দিয়ে শিক্ষক – শিক্ষিকা পদে বহাল হয়ে ক্লাসরুমে এই ক’বছর ছাত্র – ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষা দান(?) করলো, সেই সমস্ত ছাত্র – ছাত্রীদের কথা ভেবে শিউরে উঠছি না আমরা? কোন্ শিক্ষা পৌঁছে গেলো ওইসব নিষ্পাপ ছাত্র – ছাত্রীদের কাছে?
শাস্তি হয়ত পাবে এইসব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলো। টাকাও হয়ত ফিরত দিতে হবে কাউকে কাউকে। কিন্তু এতগুলো ভবিষ্যৎকে যে খাদের কিনারায় পৌঁছে দেওয়া হলো! সেই ভয়ংকর সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হলো রামমোহন – বিদ্যাসাগরের এই বাংলায়! তাও আবার সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের মদতে!রামমোহনোত্তর বাংলায় শিক্ষা নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা স্মরণাতীত ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে কি ঘুণ ধরছে আমাদের চেতনায়? যে চেতনা খুঁজে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে সঠিক কাণ্ডারীকে! রাজা রামমোহনের জন্মবার্ষিকীতে এই প্রশ্নের সদুত্তর আজ আমাদের অনুসন্ধান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।