স্বাস্থ্য সাথীঃ প্রচার ও বাস্তব ছবি

২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচন যত কাছাকাছি আসছে, তৃনমূল তত বুঝতে পারছে যে সারদা, নারদা, কাটমানি, সিন্ডিকেট, টেট, চাল চুরি, আমফান প্রভৃতির মতো একের পর এক প্রাতিষ্ঠানিক স্তরের দুর্নীতি জনগনের থেকে দূরে নিয়ে গেছে সরকারকে। তাই ঠিক নির্বাচনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে তৃনমূল নেতৃত্ব “দুরে সরকার” কে “দুয়ারে সরকার” করার চেষ্টার রত।

“স্বাস্থ্য সাথী” প্রকল্পের ঢাক পেটানো চলছে। আমরা জানি কেন্দ্রের আয়ুস্মান ভারত প্রকল্প ভারতের সব মানুষের জন্য নয়। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির খরচের সম্পূর্ণ ব্যায়ভারও মোদি সরকার বহন করেনা, ৪০ শতাংশ রাজ্যের দায়। ঠিক এই জায়গাটিতেই রাজ্য সরকার সুরাহার দাবী তুলে স্বাস্থ সাথী প্রকল্প নিয়ে বাজারে নামলো। রাজ্যের এই প্রকল্পটিও পূর্বে সমস্ত রাজ্যবাসীর জন্য নির্দিষ্ট ছিলনা কিন্তু নির্বাচনের মুখে এসে তৃনমূল সরকার এই প্রকল্পটিকে সার্বিকভাবে রাজ্যের সব মানুষ অর্থাৎ প্রায় ১০ কোটি মানুষকেই এই প্রকল্পের আওতায় এনেছে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃনমূল সরকারের এই পদক্ষেপ এই প্রকল্পটিকেই একটি বড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে সরকারের সদিচ্ছা এবং জনস্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েই।

আমরা কেউই জানিনা যে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের বীমার প্রিমিয়াম বাৎসরিক কত টাকা হবে কিন্তু সাধারন বুদ্ধিতে যে প্রশ্ন উঠছে তা হলো জনপ্রতি না হলেও পরিবার প্রতি ৫ লক্ষ টাকারও প্রিমিয়াম লক্ষ কোটির অঙ্কে হওয়ার কথা। প্রশ্ন আরও উঠছে যেহেতু গত রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য দপ্তরের মোট বরাদ্দই ছিলো সাড়ে আট হাজার কোটির ঘরে, যার বেশিরভাগটাই খরচা হয় প্রশাসনিক খাতে। ফলে রাজ্য বাজেটে উপযুক্ত সংস্থানের ব্যবস্থা না করে বর্তমান রুপে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প রাজ্যের সব মানুষের জন্যে চালু করা একটি অবাস্তব ও অলীক কল্পনা মাত্র। এই অবাস্তবতার অনুরণন আমরা শুনি বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলির পক্ষ থেকে, যাদেরও এই প্রকল্পের অধীনে আনা হয়েছে। এই বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র গুলির অভিযোগ যে তাদের পরিকাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসার খরচ এবং সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত থেকে যাচ্ছে, ফলে তাদের পক্ষে এই বীমা প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের জনগনকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। সমস্যা আরও গভীর হচ্ছে কেননা নির্বাচনের মুখে তৃনমূল সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। ফলে তারা সেই সব বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রের লাইসেন্স বাতিল করারও হুমকি দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাই আজ এক জিজ্ঞাসার চিন্হের সামনে দাঁড়িয়ে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *