শোকবার্তা
———-––-–————
১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতার জন্য পন্ডিত জওহরলালকে জেল থেকে ‘প্যারোলে’ মুক্তি দেওয়া হয়।আগেই কমলা নেহরুকে চিকিৎসার জন্য কন্যা ইন্দিরা বিদেশে নিয়ে এসেছিলেন।তাঁদের আত্মীয় ও পারিবারিক চিকিৎসক ডা.অটল সঙ্গে ছিলেন।ইউরোপে তাঁদের সহায়তা করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র।তিনি ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে থেকে ইউরোপে অবস্থান করছিলেন।পন্ডিত নেহরু এসে পৌঁছনোর পর কমলা নেহরুকে সুইজারল্যান্ডের লজানে নিয়ে আসা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোর পাঁচটায় সুইজারল্যান্ডের লজান শহরের এক স্যানেটরিয়ামে কমলা নেহরু প্রয়াত হন। কমলার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ জওহরলালকে শোকবার্তা পাঠান (২৯ ফেব্রুয়ারি,১৯৩৬)।শোকবার্তায় কবি বলেন ” আমার গভীর শোক জানাইতেছি।জীবনে মরণে তিনি আপনার বীরত্বে অংশগ্রহণ করিয়াছেন।সেই বীরত্বের কীর্তিস্তম্ভস্বরূপ তিনি অমর হইয়া থাকিলেন “। কবি ওইদিন শান্তিনিকেতন আশ্রম বন্ধ রাখেন।
কমলার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৮ মার্চ, ১৯৩৬ দিনটিতে শান্তিনিকেতন আশ্রমে ‘কমলা দিবস’ পালন করা হয় এবং কবি নিজে প্রার্থনাসভা পরিচালনা করেন।এই উপলক্ষে তিনি যে গানটি রচনা করেন (গীতবিতান আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে সংকলিত)তা হল —–
‘ মরণ সাগর পারে তোমরা
অমর
তোমাদের স্মরি ‘।
এই সভায় কবি কমলা নেহরুর মহীয়সী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন ও দীর্ঘ ভাষণ দেন। এই ভাষণটি পরে রবীন্দ্র রচনাবলীতে সংকলিত হয়।ভাষণটিতে কবি জওহরলাল সম্পর্কে বড় প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেন যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন “কমলা নেহরু যাঁর সহধর্মিনী, সেই জওহরলাল আজ সমস্ত ভারতের তরুণ হৃদয়ের রাজাসনে প্রতিষ্ঠিত হবার অধিকারী।অপরিসীম তাঁর ধৈর্য্য, বীরত্ব তাঁর বিরাট —কিন্তু সকলের চেয়ে বড় তাঁর সুদৃঢ় সত্যনিষ্ঠা, পলিটিক্সের সাধনায় আত্মপ্রবঞ্চনা ও পরপ্রবঞ্চনার পঙ্কিল আবর্তের মধ্যে নিজেকে কখনো হারিয়ে ফেলেননি।সত্য যেখানে বিপজ্জনক, সেখানে সত্যকে তিনি ভয় করেননি,মিথ্যা যেখানে সুবিধাজনক, সেখানে তিনি সহায় করেননি মিথ্যাকে”।
এই ভাষণে কবিগুরুও গান্ধিজীর মতন ভবিষ্যৎ ভারতের প্রধানরূপে জওহরলালের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন—-
“আজ হোলির দিন , আজ সমস্ত ভারতে বসন্তোৎসব।….আজ এই নবযুগের ঋতুরাজ জওহরলাল। আর আছেন বসন্তলক্ষী কমলা তাঁর সঙ্গে অদৃশ্যসভায় সম্মিলিত।তাঁদের সমস্ত জীবন দিয়ে ভারতে যে বসন্ত সমাগম তাঁরা ঘোষণা করেছেন , সেতো অনায়াস আরামের দিক দিয়ে করেননি “।
———————-