জওহরলাল ও কমলা নেহরু

আদর্শ জোড়ি

১৯১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জওহরলাল ও কমলার বিবাহ হয়।পাত্রের বয়স ২৬, কনের ১৬।জওহরলালের পিতা মতিলাল নেহরু এলাহাবাদ হাইকোর্টের নামি আইনজীবী।বিপুল তাঁর ঐশ্বর্য।কিন্তু তাঁদের প্রথা অনুযায়ী খুব সাধারণ কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে ছেলের বউ এনেছিলেন।১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তাঁদের কণ্যা ইন্দিরার জন্ম হয়।এর পর কমলার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।১৯১৯ সালে কমলার ক্ষয়রোগ প্রথম ধরা পড়ে।সেই সময় সর্বাধিক ভালো যে চিকিৎসা করা সম্ভব তা করা হয়।কিন্তু রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয় নি।

১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ৬ ডিসেম্বর জওহরলাল গ্রেপ্তার হন ও তাঁকে লখনৌ জেলে ৩ মার্চ,১৯২২ পর্যন্ত বন্দি (৮৭ দিন)রেখে মুক্তি দেওয়া হয়।কিন্তু পুনরায় ১১মে,১৯২২- এ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৩১ জানুয়ারি,১৯২৩ পর্যন্ত ( ২৬৬ দিন) নৈনি জেলে বন্দি রাখা হয়।এই সময় পিতা মতিলাল নেহরুও বন্দি হন।মা স্বরূপরানী,বোন বিজয়লক্ষী ও কমলা এই সময় এলাহাবাদে বিলিতি বস্ত্র বয়কট,মদের দোকানে পিকেটিংয়ে নেতৃত্ব দেন।তাঁদের বাসভবনে বার বার পুলিশি আক্রমণ চলতে থাকে।ইন্দিরার বয়স তখন ৫ বছর।তাঁদের বাসভবনের নাম হয় ‘স্বরাজ ভবন’।কমলা এখানে দরিদ্র মানুষের জন্য একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র খোলেন।এই বিশাল বাসভবন মতিলাল নেহরু দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য দান করেন।নিজ পরিবারের জন্য তিনি পাশে নির্মাণ করেন ‘আনন্দ ভবন’।এই বাড়িটিও এখন জাতীয় স্মারক। ১৯২৫ সালে কমলার একটি পুত্র সন্তান ভুমিষ্ট হয়ে মারা যায়।তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।১৯২৬ সালের ১ মার্চ জওহরলাল দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার জন্য কমলা ও কন্যাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আসেন।এখানে ইন্দিরাকে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা হয়।কমলার চিকিৎসার তদারকি,মেয়ের স্কুল ও নিজের পড়াশুনা নিয়ে নেহরু ব্যস্ত থাকতেন।এর মধ্যে তিনি সপরিবারে ১৯২৭ এর ফেব্রুয়ারিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস -এ যান।

ব্রাসেলস -এ ‘লিগ এগেইনস্ট ইমপিরিয়ালিসম’- এর বিশ্ব সম্মেলনে তিনি কংগ্রেসের প্রতিনিধি ছিলেন।এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতারা যোগ দেন।জওহরলালকে এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের অনারারি সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।১৯২৭’র নভেম্বরে রুশ বিপ্লবের দশম বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন উপলক্ষে তিনি সপরিবারে সোভিয়েত রাশিয়া যান।ওই উদযাপনে যোগ দিতে পিতা মতিলাল নেহরুও রাশিয়ায় এসেছিলেন।এর পর জওহরলাল দেশে ফেরেন ও মাদ্রাজ কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব পাস করান।ইউরোপে প্রায় দুই বছর চিকিৎসায় কমলার রোগ প্রশমিত হলেও সম্পূর্ণ নিরাময় হয় নি।

১৯২৮ সালে জওহরলাল সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলন পরিচালনার সময় লখনৌতে পুলিশের লাঠি চারজে গুরুতর আহত হন।১৯২৯ এ জওহরলাল কংগ্রেসের লাহৌর অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন ও লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সরকারকে স্বাধীনতার দাবিতে চরম পত্র দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় প্রতি বছর ‘২৬ জানুয়ারি’ স্বাধীনতা দিবসরূপে পালিত হবে।১৯৩০ সালের মার্চ মাসে গান্ধিজি ও কংগ্রেস লবণ আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত কারাবাসের চিত্রটি দেখুন:– ১)১৪ /০৪/১৯৩০ থেকে ১১/১০/১৯৩০–১৮১ দিন-নৈনি জেল ২)আবার ১৯ /১০/১৯৩০ থেকে ২৬/০১/১৯৩১–১০০ দিন- লখনৌ জেল। বাবার গুরুতর অসুস্থতার জন্য প্যারোলে মুক্তি।৬ ফেব্রয়ারি,১৯৩১ এ মতিলাল নেহেরুর মৃত্যু হয়। ৩)২৬/১২/১৯৩১ থেকে ৩০/০৮/১৯৩৩ — ৬১৪ দিন- নৈনি,বেরিলি ও দেরাদুন জেল।

১৯৩১ সালে পণ্ডিত নেহেরু মূলত উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কমলাকে নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সফরে শ্রীলঙ্কা যান।সেখান থেকে ফেরার পরই বছরের শেষে ১৯৩১ এর ডিসেম্বর মাসে নেহরু গ্রেপ্তার হন।কমলাও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন।এই সংবাদে পণ্ডিত নেহেরু খুবই গর্বিত হন।মুক্তির পর কমলা ওয়ারধার সেবাগ্রামে গান্ধিজির আশ্রমে এসে গঠনমূলক কাজে যোগ দেন।ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার বিরুদ্ধে ১৯৩২ এর ২০ সেপ্টেম্বর ইয়ারবেদা জেলে গান্ধিজির আমরণ অনশনের সময় কমলা ওই জেলে অন্তরীণ হন।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ গান্ধিজির অনশন ভাঙানোর জন্য যখন ঐ জেলে আসেন, তখন তাঁর শয্যার পাশে কমলা উপস্থিত ছিলেন বলে কবি তাঁর ‘ ব্রত উদযাপন ‘ প্রবন্ধে বিবরণ দিয়েছেন।পণ্ডিত নেহেরু তখন দেরাদুন জেলে বন্দি।

১৯৩২ এর এপ্রিলের ৮ তারিখ এলাহাবাদে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানের সময় পুলিশ পণ্ডিত নেহরুর মা স্বরূপরাণী নেহেরুকে নির্মমভাবে প্রহার করে। নেতাজি তাঁর ‘ ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ‘ গ্রন্থে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন(পৃষ্ঠা – ১৪১)। ৬১৪ দিন কারাবাসের পর ১৯৩৩ এর আগস্টের ৩০ তারিখ পন্ডিত নেহরুর কারামুক্তি হয়। কিন্তু বেশিদিন তিনি জেলের বাইরে থাকতে পারলেন না। ১৯৩৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জওহরলাল কমলাকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। ডা.বিধান রায় কমলাকে দেখেন ও তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ দেন।পণ্ডিত নেহেরু কলকাতায় রাজনৈতিক সভা সমাবেশেও ভাষণ দেন।১৯ জানুয়ারী তাঁরা শান্তিনিকেতনে আসেন।২০ জানুয়ারি কবিগুরু প্রার্থনা সভায় তাঁদের বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে বরণ করেন।কমলার সেই প্রথম শান্তিনিকেতনে আসা। নেহেরু এর আগেও দুবার এই আশ্রমে এসেছিলেন।কমলার এখানের পরিবেশ খুব ভালো লাগে।তাঁরা ঠিক এখানের পরিবেশ খুব ভালো লাগে।তাঁরা ঠিক করেন তাঁদের মেয়ে ইন্দিরাকে এই আশ্রমে পড়তে পাঠাবেন।সে তখন ম্যাট্রিক পাস করেছে।এই সময় ওঁরা মুঙ্গেরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের খবর পেয়ে ত্রাণ কাজে যোগ দিতে শান্তিনিকেতন থেকে মুঙ্গের চলে যান।মুঙ্গের থেকে ওঁরা ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ এলাহাবাদে ফিরে আসেন। কিন্তু ভারত সরকার রাজ্যের সরকারগুলোকে গোপন নির্দেশে জানায় পণ্ডিত নেহেরুকে যে কোনও সুযোগে গ্রেপ্তার করতে হবে ও এমন অভিযোগ আনতে হবে যাতে তাঁকে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করা যায়।(সমস্ত আঞ্চলিক সরকারগুলিকে হোম সেক্রেটারি,২৬ সেপ্টেম্বর ,১৯৩৩, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া confidential পাবলিকেশন, ১৯৩৬,পৃষ্ঠা _৮৮- ৮৯)। ১৯৩৪ এর ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় আনা হলএবং রাজদ্রোহের অভিযোগে বিচারে তাঁর দুবছর কারাদণ্ড হল।এবার আলিপুর সেন্ট্রাল জেল।আলিপুর থেকে মে মাসের গোড়ায় তাঁকে নিয়ে আসা হল দেরাদুন জেলে।এই সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত Autobiography লিখতে শুরু করেন।মা ও স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য তিনি খুবই বিষন্ন থাকতেন।

১৯৩৪ এর এপ্রিল মাসে ইন্দিরা শান্তিনিকেতন আশ্রমে পড়তে আসেন।আগস্ট মাসে কমলার অসুস্থতা বাড়লে নেহরুকে ১১ দিনের জন্য প্যারোলে ছাড়া হয়।তিনি এলাহাবাদে এলেন।কমলাকে দেখা কদিনের জন্য মাত্র।আবার তাঁকে জেলে যেতে হল।অক্টোবর মাসে যখন কমলার অসুস্থতা খুব বাড়লো তখন তাঁকে ভাওয়ালির স্যানেটরিয়ামে নিয়ে আসা হল।এবার অসুস্থ স্ত্রীকে ২১ দিনে একবার দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য পণ্ডিত নেহেরুকে বদলি করা হল আলমোরা জেলে।এই সময় পণ্ডিত নেহেরু অধীর আগ্রহে কমলার চিঠির জন্য অপেক্ষা করতেন।দেখা করার সময়ের জন্য আশা করে সময় কাটাতেন।তাঁর জেলখানার ডায়েরি পড়লে তা জানা যায়।

ভাওয়ালি স্যানেটরিয়ামে চিকিৎসায় কমলার রোগ নিরাময় হলনা।এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত হল তাঁকে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।১৯৩৫ সালের মে মাসে কমলাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হল।পণ্ডিত নেহেরু জেলে বন্দি।কোনো শর্তাধীনে তিনি মুক্তি নিতে রাজি হননি। কমলার সঙ্গে গেলেন কন্যা ইন্দিরা ও পারিবারিক চিকিৎসক ডা. মদন অটল।তিনি সম্পর্কে কমলা নেহরুর ভাইপো। মা’র সঙ্গে যাবার জন্য ইন্দিরাকে শান্তিনিকেতন আশ্রম ছেড়ে আসতে হল।এক বছর তিনি শান্তিনিকেতনে ছিলেন।মুম্বাই থেকে জাহাজে ভিয়েনা রওনা হবার আগে গান্ধিজি কমলাকে দেখতে এসেছিলেন।

দেশবাসীর হৃদয়ে এই সময় জওহরলাল ও কমলার আসন প্রতিষ্ঠিত হয়।সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে তাঁদের লাগাতর অংশগ্রহণ, কারাবাস,নির্যাতন ভোগের কাহিনী কিংবদন্তি হয়ে যায় ।তখন হিন্দি বলয়ের ঘরে ঘরে নেহেরু ও কমলার ছবি।তাতে লেখা থাকতো ‘ আদর্শ জোড়ি’।

কমলার ইউরোপে চিকিৎসা ও জীবনাবসান

———————————————

–১৯৩৫ এর জুন মাসের ৪ তারিখ কমলা নেহরু এসে পৌঁছন ভিয়েনাতে।সেখানে নেতাজি সুভাষ ও অন্যান্য বন্ধুরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন (ইন্দিরা গান্ধি, পুপুল জয়াকর,পেঙ্গুইন বুকস , পৃষ্ঠা – ৭২-৭৩)। সুভাষচন্দ্র নিজ চিকিৎসার জন্য তখন ভিয়েনাতেই ছিলেন।১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে দেশ থেকে ভিয়েনায় আসেন।ভিয়েনা থেকে ১৬ জুন,১৯৩৫ তারিখে কমলা, ইন্দিরা ও ডা. অটল ট্রেনে বার্লিন আসেন।তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সুভাষচন্দ্র। তিনি অবশ্য এলেন প্রাগ পর্যন্ত।এখন থেকে তিনি গেলেন কার্লসবাডে, তাঁর নিজ চিকিৎসার জন্য।

বার্লিনে কমলার ফুসফুসে একটি অস্ত্রোপচার হয়।চিকিৎসক বলেন অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। সাময়িক ভাবে ভালো থাকলেও তাঁর অবস্থার আবারও অবনতি হয়।চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে জার্মানির বেডেনওয়েইলার- এর ব্ল্যাক ফরেস্টে এক স্যানেটরিয়ামে নিয়ে আসা হয়।এখানেও তাঁর স্বাস্থের কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন হলনা।ওদিকে আলমোরার কারাবাস নেহরুকে একদম নি:সংগ করে দেয়।লেখা ও বই পড়ে সময় কাটানো ও গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে তিনি অপেক্ষা করতেন কমলা ও মেয়ের চিঠির জন্য। অবশেষে ২ সেপ্টেম্বর,১৯৩৫ চিকিৎসক সরকার ও পণ্ডিত নেহেরুকে তারবার্তায় জানালেন যে কমলার অবস্থা অতীব সঙ্কটময়। ‘ এটাই তবে শেষ ‘ , তিনি ডায়ারিতে লিখেছিলেন।সরকার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে যাবার জন্য ৪ সেপ্টেম্বর পণ্ডিত নেহরুর মুক্তি ঘোষণা করে।কিন্তু সেই মুহূর্তেও তিনি আত্ম -মর্যাদা হারান নি। সরকারের কাছে তিনি স্পষ্ট করে তাঁর প্রতি প্রযোজ্য আইনের ব্যাখ্যা চাইলেেন। তাঁকে বলা হল যে বিদেশ রওনা হবার আগে এবং পরে ইউরোপে তাঁর চলাফেরার ওপর কোনো বাধা নিষেধ থাকবে না। এতে কোনো শর্ত না থাকায় তিনি আলমোরা জেল থেকে মুক্তি পাবার পর এলাহাবাদ হয়ে দিল্লি এলেন , এবং প্রথম যে বিমান পেলেন তাতে করে ইউরোপ রওনা হলেন (জওহরলাল নেহরু- সর্বপল্লি গোপাল,সাহিত্য অকাদেমি সংস্করণ, পৃষ্ঠা -৯২)।

তখন কমলা বেডেনওয়েইলারের ব্ল্যাক ফরেস্টের স্বাস্থনিবাসে ছিলেন। নেহরু যখন সেখানে এসে পৌঁছলেন তখন কমলা খুবই অসুস্থ।কোনো একদিন ভালো থাকলে পরদিনই গুরুতর অসুস্থ হতেন। ”সেপ্টেম্বরের শেষে কার্লসবাড থেকে হফগাস্টাইনে যাওয়ার পথে সুভাষচন্দ্র বেডেনওয়েইলারে কমলা নেহরুকে একবার দেখে গেলেন।তাঁর অবস্থা তখন আরো খারাপ হয়েছে, ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির চাপে জওহরলালকে মুক্তি দিয়েছে।ব্ল্যাক ফরেস্ট রিসর্ট -এ দুই জননেতার দেখা হল।একই বোর্ডিং হাউসে থাকলেন দুজনে।কমলাকে দেখে সুভাষ চললেন অস্ট্রিয়া।হফগাস্টাইন থেকে ১৯৩৫.এর ৪ অক্টোবর সুভাষচন্দ্র জওহরলালকে চিঠিতে লেখেন ‘ তোমার এই সংকটে আমি যদি কিছু করতে পারি, আমাকে জানাতে নিশ্চয়ই তুমি দ্বিধা করবেনা ‘ (দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র ও ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ,সুগত বসু,আনন্দ পাবলিশার্স ,পৃষ্ঠা – ১০৪)।

রোগের প্রকোপে কমলার শরীর একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল।তিনি সুইজারল্যান্ডে যাবার জন্য আকূল হয়ে ওঠেন। ১৯৩৬ সালের গোড়ার দিকেই জওহরলাল তাঁকে সুইজারল্যান্ডের লোজানের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন।সেখানে কোনোদিনই তাঁর অবস্থা একভাবে থাকত না, এবং সামান্য ভালো থাকলেই জওহরলাল মনে একটু‌ ভরসা পেতেন(সর্বপল্লি গোপাল, সমগ্রন্থ, পৃষ্ঠা -৯২)।

” ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সুভাষচন্দ্র প্যারিস থেকে বাডগাস্টাইন যাওয়ার পথে লজানে গেলেন কমলা নেহরুকে দেখতে, এবং ভিলনভ – এ তাঁর যাওয়ার কথা রম্যা রল্যার সঙ্গে দেখা করতে।লজানে তিনি আটকে গেলেন, কমলা নেহরু তখন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।কিন্তু সত্যিই কোনো আশা ছিল না, শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারী ভোর পাঁচটায় কমলা চলে গেলেন। সুভাষ শেষ পর্যন্ত জওহরলাল ও তাঁর কন্যা ইন্দিরার সঙ্গে রইলেন , শেষকৃত্যের ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করলেন “( সুগত বসু, সমগ্রন্থ ,পৃষ্ঠা – ১০৮ এবং সর্বপল্লি গোপাল , সমগ্রন্থ ,পৃষ্ঠা – ৯২) ।

কমলা নেহরুর মৃত্যুর পর সারা পৃথিবীর বিশিষ্ট মনীষীরা, রাষ্ট্রনায়কেরা, বিভিন্ন দেশের ঔপনিবেশিক শাষনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত নেতৃবৃন্দ, নিজ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শোকপ্রকাশ করেন ও বার্তা পাঠান।মহাত্মা গান্ধি তাঁর প্রেরিত বার্তায় বলেন ‘ How shall I console you ,All our hearts with you.God give you peace love Bapu ‘.এরপরই মহাত্মা গান্ধির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাহাবাদে প্রয়াতা কমলা নেহরুর নামে ১৯৪০ সালে নারী ও শিশুদের জন্য হাসপাতাল স্থাপিত হয়।এটি কিন্তু সরকারি হাসপাতাল ছিল না,কেননা সেই সময় দেশে ব্রিটিশ শাসন।আমৃত্যু কমলা আনন্দ ভবনে সেই অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকে দাতব্য চিকিৎসালয় চালিয়ে গিয়েছিলেন। (কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শোকবার্তা ও শান্তিনিকেতন আশ্রমের শোকসভার বিবরণ পৃথক ভাবে দেওয়া হল ।)

—- শান্তনু দত্ত চৌধুরী।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *