মহাত্মা গান্ধি

যুগে যুগে দৈবাৎ এই সংসারে মহাপুরুষের আগমন হয়।….আজকের দিনে দুঃখের অন্ত নেই ;কত পীড়ন, কত দৈন্য, কত রোগ শোক তাপ আমরা নিত্য ভোগ করছি রাশি রাশি।তবু সব দুঃখকে ছাড়িয়ে গেছে আজ এক আনন্দ।যে মাটিতে আমরা বেঁচে আছি,সঞ্চরণ করছি,সেই মাটিতেই একজন মহাপুরুষ,যাঁর তুলনা নেই,তিনি ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেছেন। যাঁরা মহাপুরুষ তাঁরা যখন আসেন,আমরা ভালো করে চিনতে পারি নে তাঁদের।কেননা , আমাদের মন ভীরু অস্বচ্ছ,স্বভাব শিথিল, অভ্যাস দুর্বল।…..বারে বারে এমন ঘটেছে,যাঁরা সকলের বড়ো তাঁদেরই সকলের চেয়ে দূরে ফেলে রেখেছি।…..……..কত পীড়া,কত অপমান তিনি সয়েছেন তাঁর জীবনের ইতিহাস দুঃখের ইতিহাস।দুঃখ অপমান ভোগ করেছেন কেবল ভারতবর্ষে নয়,দক্ষিণ আফ্রিকায় কত মার তাঁকে মৃত্যুর ধারে এনে ফেলেছে।তাঁর দুঃখ নিজের বিষয়সুখের জন্যে নয়,স্বার্থের জন্যে নয়,সকলের ভালোর জন্যে।এই- যে এত মার খেয়েছেন,উল্টে কিছু বলেননি কখনো,রাগ করেননি।Iসমস্ত আঘাত মাথা পেতে নিয়েছেন।শত্রুরা আস্চর্য হয়ে গেছে ধইর্য দেখে,মহত্ব দেখে।ত্যাগের দ্বারা, দুঃখের দ্বারা,তপস্যার দ্বারা তিনি জয়ী হয়েছেন।…………সবাই জান, সমস্ত ভারতবর্ষ কিরকম করে তাঁকে ভক্তি দিয়েছে;একটি নাম দিয়েছে–মহাত্মা ‘।( কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর তাঁর ‘ চারিত্রপূজা ‘ পর্যায়ের রচনায় গৌতম বুদ্ধ ,যীশুখ্রিস্ট ,রাজা রামমোহন রায় , পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধি – এই মহাপুরুষদের প্রতি পূজা নিবেদন করেছেন।তাঁর সেই রচনা থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করা হল।)

বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনও কবির মতন বলেছিলেন ‘ভবিষ্যতে এই পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়ে ভাববে,একদা এই পৃথিবীর মাটিতে এমন এক মনীষী চলাফেরা করতেন যাঁর নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ‘। গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা, রোমা রোঁলা,জর্জ বার্নার্ড শ,বার্ট্রান্ড রাসেল, জুনিয়র মার্টিন লুথার কিং,নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ। পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করব।৩০ জানুয়ারী তাঁকে হত্যার ১০ দিন আগে ২০ জানুয়ারি একবার একই প্রচেষ্টা হয়,বোমা নিক্ষেপ করে মদনলাল পাহায়া গ্রেফতার হয়।বোমাটি লক্ষভ্রষ্ট হয়।অসংখ্যবার অনুরোধ সত্বেও গান্ধিজি নিরাপত্তা রক্ষী নিতে অস্বীকার করেন।এমনকি তিনি তাঁর প্রার্থনা সভায় আগত লোকদের search করতেও বারণ করেন।তিনি বলেন ‘হিংসার সহায়তা নিয়ে(পুলিশ) জীবন ধারণ করলে মানুষ তাকে দুরাত্মা বলবে’।তার পরের ঘটনা সকলেই জানেন।

এই জন্যই তিনি ‘ মহাত্মা ‘।তাঁর জীবনই তাঁর বাণী। গান্ধী মহারাজ —————————– –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান্ধী মহারাজের শিষ্য কেউ-বা ধনী,কেউ-বা নিঃস্ব এক জায়গায় আছে মোদের মিল গরিব মেরে ভরাই নে পেট, ধনীর কাছে হই নে তো হেঁট,আতঙ্কে মুখ হয় না কভু নীল। ষনডা যখন আসে তেড়ে উঁচিয়ে ঘুষি ডান্ডা নেড়ে আমরা হেসে বলি জোয়ানটাকে, ‘ঐ যে তোমার চোখ-রাঙানো খোকাবাবুর ঘুম-ভাঙানো, ভয় না পেলে ভয় দেখাবে কাকে।’ সিধে ভাষায় বলি কথা, স্বচ্ছ তাহার সরলতা, ডিপ্লোম্যাসির নাইকো অসুবিধে। গারদখানার আইনটাকে খুঁজতে হয়না কথার পাকে, জেলের দ্বারে যায় সে নিয়ে সিধে। দলে দলে হরিনবাড়ি চলল যারা গৃহ ছাড়ি ঘুচল তাদের অপমানের শাপ– চিরকালের হাতকড়ি যে, ধুলায় খসে পড়ল নিজে, লাগল ভালে গান্ধীরাজের ছাপ।উদয়ন।শান্তিনিকেতন১৩ ডিসেম্বর ১৯৪০—————————-*হরিণবাড়ি—প্রেসিডেন্সি জেল।

কবিগুরুর জীবিতকালে ১৯৪০ – শেষবারের মতন গান্ধিজি শান্তিনিকেতনে আসেন।তখন তাঁদের মধ্যে যে আলোচনা হয় তা লিপিবদ্ধ করা নেই। কবিগুরু স্বাধীনতা দেখে যান নি।গান্ধিজি দেখেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার কয়েকমাসের মধ্যেই গান্ধিজি এক হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। গান্ধিজি ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অবর্তমানে ভারতবর্ষ তাঁদের কল্পিত পথে অগ্ৰসর হয় নি। সমগ্র ভারতজুড়ে এখন এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।সাম্প্রদায়িক ঐক্যের লক্ষ্যে গান্ধিজি ও কবিগুরুর প্রচেষ্টা আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। রবীন্দ্রনাথ উগ্র দেশপ্রেমের বিরোধী ছিলেন। আজ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির জয়ধ্বজা উড্ডীয়মান। উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তি অন্য ধর্মের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে চাইছে।ভারতের ভবিষ্যৎ আজ চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এই বাধাকে অতিক্রম করে আমরা যেনো আমাদের এই মাতৃভূমিকে কবিগুরু ও মহাত্মা গান্ধির সেই কল্পিত ‘ স্বর্গে জাগরিত করতে পারি।’শান্তনু দত্ত চৌধুরী কবিগুরুর জীবিতকালে ১৯৪০ – শেষবারের মতন গান্ধিজি শান্তিনিকেতনে আসেন।তখন তাঁদের মধ্যে যে আলোচনা হয় তা লিপিবদ্ধ করা নেই। কবিগুরু স্বাধীনতা দেখে যান নি।গান্ধিজি দেখেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার কয়েকমাসের মধ্যেই গান্ধিজি এক হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। গান্ধিজি ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অবর্তমানে ভারতবর্ষ তাঁদের কল্পিত পথে অগ্ৰসর হয় নি। সমগ্র ভারতজুড়ে এখন এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।সাম্প্রদায়িক ঐক্যের লক্ষ্যে গান্ধিজি ও কবিগুরুর প্রচেষ্টা আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। রবীন্দ্রনাথ উগ্র দেশপ্রেমের বিরোধী ছিলেন। আজ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির জয়ধ্বজা উড্ডীয়মান। উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তি অন্য ধর্মের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে চাইছে।ভারতের ভবিষ্যৎ আজ চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এই বাধাকে অতিক্রম করে আমরা যেনো আমাদের এই মাতৃভূমিকে কবিগুরু ও মহাত্মা গান্ধির সেই কল্পিত ‘ স্বর্গে জাগরিত করতে পারি।

শান্তনু দত্ত চৌধুরী

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *