নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
মেট্রো ডেয়ারি মামলা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। জনস্বার্থ মামলাটি করেছেন স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু কেন এই মামলা? কি হয়েছে মেট্রো ডেয়ারিতে? কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেনইবা সরব হয়েছেন অধীর চৌধুরী?
অধীর বাবুর আইনজীবী চিত্তপ্রিয় ঘোষ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মামলাটি মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। অধীর বাবুর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, মূল ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে চোদ্দ-পনেরো বছর আগে। মেট্রো ডেয়ারির মোট ১০০ শতাংশ শেয়ারের ভিতর ১০ শতাংশ শেয়ার ছিলো ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের হাতে, ৪৩ শতাংশ শেয়ার ছিলো কেভেন্টার্সের এবং ৪৭ শতাংশ শেয়ার ছিলো রাজ্য সরকারের হাতে। প্রায় বছর পনের আগে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড তাদের হাতে থাকা ১০ শতাংশ শেয়ার আই.সি.আই.সি.আই ব্যাঙ্কের কাছে বিক্রি করে দেয়; কিন্তু ২০০৪-২০০৫ সাল নাগাদ আই.সি.আই.সি.আই ব্যাঙ্ক পুনরায় ওই ১০ শতাংশ শেয়ার কেভেন্টার্সকে বিক্রি করে দেয়। ফলতঃ কেভেন্টার্সের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশ, উল্টো দিকে রাজ্য সরকারের হাতে থাকে ৪৭ শতাংশ শেয়ার । তার মানে মেট্রো ডেয়ারিতে রাজ্য সরকার মাইনর শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হয়।
এরই মধ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে রাজ্য সরকার তার নিজের হাতে থাকা ৪৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করবে বলে টেন্ডার আহ্বান করে, টেন্ডারের বেস প্রাইস রাখে ৮৫ কোটি টাকা। একমাত্র কেভেন্টার্সই এই টেন্ডারে অংশ নেয় এবং দর দেয় ৮৫.৫ কোটি টাকা। যেহেতু একমাত্র একটি সংস্থাই এই টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলো তাই ওই টেন্ডার বাতিল করে রাজ্য সরকার দ্বিতীয়বারের জন্য পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করে। অধীর বাবুর অভিযোগ এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিলো লোক দেখানো ব্যাপার। এই দ্বিতীয়বার আহ্বান করা টেন্ডারে রাজ্য সরকার একটা অদ্ভুত শর্ত আরোপ করলো। তারা বললো, যারা টেন্ডারে অংশ নেবেন তাদের দশ লক্ষ টাকা অফেরতযোগ্য জমানত রাখতে হবেই। আরো অবাক করার ব্যাপার এই যে, এই দ্বিতীয়বারের টেন্ডারেও কেভেন্টার্স ছাড়া আর কেউ অংশ নিলো না এবং যথারীতি রাজ্য সরকার তার ৪৭ শতাংশ শেয়ারের বেস প্রাইস রাখলো ৮৫ কোটি টাকা এবং কেভেন্টার্সও দর দিলো ৮৫.৫ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত কেভেন্টার্স ৮৫.৫ কোটি টাকায় রাজ্য সরকারের হাতে থাকা ৪৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নিলো। অধীর বাবুর আইনজীবীর কথায়, এর পর দেখা গেলো কেভেন্টার্স এরই মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ( F.D.I)পথে হেঁটে ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে ম্যান্ডেলা বলে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানীকে। এবং এই ১০ শতাংশ শেয়ার তারা ম্যান্ডেলাকে বিক্রি করে ১৩৫ কোটি টাকায় অথচ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তারা ৪৭ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলো মাত্র ৮৫.৫ কোটি টাকায়। ঠিক এইখানেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আইনি লড়াইয়ের পথে হেঁটেছেন সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। অধীর চৌধুরীর মূল অভিযোগ জলের দরে যেভাবে রাজ্য সরকার তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক বিরাট দুর্নীতি, তাই জনস্বার্থ মামলার পথে হেঁটেছেন তিনি।
উল্লেখ্য অধীর বাবুর সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে এই মামলা লড়ছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, বিকাশ বাবুর সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আইনজীবী চিত্ত প্রিয় ঘোষ এবং প্রতীপ চ্যাটার্জীর মতো আইনজীবীরা। অধীর চৌধুরীর সাফ কথা, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি।