মনে হল এক দেবদূতের সংস্পর্শে এলাম- অধীর চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা :

তাঁর হাতে হাত মিলিয়ে একটা অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করলাম,মনে হল এক দেবদূতের স্পর্শ পেলাম- এইভাবেই রাজীব গান্ধীর প্রতি নিজের অনুভব প্রকাশ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আজ বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস ভবনের সামনে এক সভায় তিনি বলেন রাজীব গান্ধীর মৃত্যু হয়নি।তাঁর মত মানুষেরা চিরকাল মানুষের মনের মধ্যে থেকে যান নিজেদের কীর্তির জন্য। তিনি ছিলেন দেশকে প্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব। তাই যারা দেশকে দূর্বল করার চেষ্টা করেছিল বা যারা মনে করেছিল রাজীবজি বেঁচে থাকলে দেশের স্থায়িত্ব,ধর্মনিরপেক্ষতা ও শক্তিশালী দেশকে দূর্বল করা যাবে না তারাই রাজীবজিকে দৈহিকভাবে হত্যা করেছিল, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া দেশের আত্মাকে ধ্বংস করতে পারে নি।ষড়যন্ত্রীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল দেশের অন্তরাত্মাটাকে হত্যা করা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অধীরবাবু বলেন,এ দেশ অতি পুরানো,যদিও জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করি স্বাধীনতার পর।তিনি তাই বলেছিলেন আমি একজন যুবক,আমি দেখতে চাই পৃথিবীর প্রথম সারিতে এক শক্তিশালী, স্বাধীন ও আত্মনির্ভর ভারত, যে দেশ পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে কোন না কোনভাবে সাহায্য করছে।স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা অংশগ্রহন করেছিলেন তারাও স্বপ্ন দেখতেন এক আত্মনির্ভর ভারতের। আজ কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষের ঢক্কানিনাদে আসল কথা হারিয়ে যাচ্ছে।আমরা জানি চীনের পর সবথেকে মোবাইল ব্যবহার হয় ভারতে।এর জনক রাজীব গান্ধী। অধীরবাবু মনে করিয়ে দেন রাজীবজি শ্যাম পিত্রোদাকে এনেছিলেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও তার সারন্জম আরোহনের উদ্দেশ্যে।তখন বিরোধীরা বলেছিলেন দেশকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।আজ দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের কাছে মোবাইল আছে। তিনি উল্লেখ করেন প্রথমে জায়গায় জায়গায় টেলিফোন বুথ বা পিসিও।এর ফলে গ্রাম থেকে শহরের যোগসূত্র তৈরী হল।এরপর শহর থেকে বিদেশের মানুষের যোগাযোগ।এটাই ডিজিটাল জমানা।তিনি একেরপর এক বিপ্লব করেছেন মাত্র ছয় বছর প্রধানমন্ত্রীত্বে।রক্ত ঝড়িয়ে নয়,তোলা তুলে নয়,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে না,খুন করে নয়,বুথ লুঠ করে নয় বা হিংসার রাজনীতি করে নয়।দেশকে একবিংশ শতাব্দীতে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ও দেখিয়ে তা কাজে করেই এই বিপ্লব একমাত্র তাঁর মত মানুষই করতে পারেন বলেই দেশের ইতিহাসে তার স্থান চিরকালীন।নগরপালিকা ও পঞ্চায়েতরাজ বা স্থানীয় সরকার প্রবর্তনের ব্যবস্থা। মহিলাদের জন্য ১/৩ ভাগ আসন সংরক্ষনের প্রস্তাব যা তৎকালীন বিরোধীরা বাধা দিয়েছিলেন। মানুষের হাতে ক্ষমতায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন তিনি।নবোদয় বিদ্যালয়ের মূল ভাবনা তো তাঁর।যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানসন্ততিরা পড়তে পারবে এই আবাসিক বিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। এটাই তো একধরণের বিপ্লব- সামাজিক বিপ্লব।

তিনি তাঁর স্মৃতি রোমন্থন করেন ১৯৯১ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নবগ্রাম বিধানসভায় যখন লড়াই করতে গিয়েছিলেন তখন রাজীবজির সাথে একসভায় তার সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সাথে হাত মেলাতে গিয়ে মনে হল এক দেবদূতের সংস্পর্শে এলাম। অধীরবাবু আরো বলেন একসময় তাকে চোর বলে চারিদিকে রব তোলা হয়েছিল। অথচ কার্গিলে পাক অনুপ্রবেশের ফলে ভরসা ছিল সেই বোফর্স কামানেরই।তদন্ত চলেছিল বহুবছর,তারপর উচ্চ আদালতের রায়ে প্রমানিত হল রাজীবজি নির্দোষ,নিষ্পাপ। কলংকমুক্ত হলেন তিনি।দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করতে দলত্যাগ বিরোধী আইন এনেছিলেন।আজ দুর্নীতিকে তো রাজনীতিতে যোগ্যতা বলে চিহৃিত করা হয়। গত কয়েক বছর কতবার বিজেপি ও তৃণমূল বিদায়ক কেনাবেচা করেছিল তা দেশের মানুষ কি করে মেনে নেন?রাজীব গান্ধী মারা যান নি বলেই আজ তার মৃত্যুর তিন দশক পরেও তাঁকে নিয়ে এত আলোচনা। তাঁকে প্রনাম জানাই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *