প্রধানমন্ত্রী কি আদৌ দেশনেতা নাকি শুধু নির্বাচনী প্রচারের যন্ত্র

অমিতাভ সিংহ

রাহুল গান্ধী প্রায় এক বছর আগে সরকারকে সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে ভারতকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে যেন এক নম্বরে দেখতে না হয়। কিন্তু বর্তমান বিজেপির অকর্মন্যতার জন্য আজ দেশে করোনায় আক্রান্তর সংখ্যা বিশ্বে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে দিনে তিন লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে, বঙ্গে দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।সারা দেশে ভয়াবহ অবস্থা। চার দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী টীকা উৎসব করলেন দেশে। অথচ করোনার টিকা কেন্দ্রগুলির অধিকাংশই কদিন ধরে বন্ধ।রাহুল গান্ধী বলেছেন এখন উৎসবের সময় নয়, দেশের মানুষকে বাঁচাবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার সময়।পিএম কেয়ার ফান্ডের টাকা কোথায় গেল সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। পি চিদাম্বরম বলেছেন কোভিদ সঙ্কট না সামলে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বারবার বাংলায় ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন তার জবাব বাংলার মানুষ দেবেন। মোদী ইতিমধ্যেই বাংলায় গোটা বিশেক জনসভা করে ফেলেছেন।অমিত শাহ্ ও জনসভা করেছেন তার চেয়েও বেশী,তার সাথে রোড শো।দেশের দুই শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তার এইভাবে দেশ সামলানো দেখে সর্বস্তরে সমালোচনার পাত্র হয়েছেন। যেখানে বাংলার সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বাংলায় প্রচারে আসবেন না ঘোষনা করেছেন তা দেখে ঐ দুই বিজেপি নেতা ও সরকারের প্রধান মাথারও শিক্ষা নেওয়া উচিৎ ছিল বলে অনেকের অভিমত। তা না করে প্রধানমন্ত্রী আগেভাগে কোভিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের ঘোষনা করে বিপদ ডেকে এনেছেন বলে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে।রাহুল গান্ধী যখন সরকারকে বলেছিলেন আমেরিকা,বৃটেন ও ইউরোপে ছাড়পত্র পাওয়া টিকা আমদানি করার কথা তখন বিজেপি তাকে বিদেশী সংস্থার হয়ে ‘লবি’ করছেন বলে তোপ দেগেছিলেন।অথচ আজ সেই টীকার বরাত দিচ্ছে সরকার।তবে অনেক দেরীতে। এত পরে আমদানী করতে চেয়ে ঐ টীকা ভারত কবে পাবে তা কেউ জানে না।কারণ আমেরিকার মত দেশগুলি অনেক আগেই সংস্থাগুলিকে অগ্রিম দিয়ে দিয়েছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক একই কথা বলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। বলেছেন সরকার গরীব মানুষের টীকাকরণে জোর দিক। অর্থনীতিবিদ্ কৌশিক বসু বলেছেন ভারত প্রতিদিনের সংক্রামন হওয়া দেশের মধ্যে এই এমুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষে।আমাদের পূর্বের ইতিহাস অনুযায়ী গণ টীকাকরণেও এবারেও শীর্ষে থাকার কথা।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয় নি।তিনি এই ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতার কথাই বলতে চেয়েছেন।

এই রাজ্যে ১২ এপ্রিল যেখানে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ, সেখানে ১৮ এপ্রিল দেওয়া হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ।অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত একমাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ফোন করেও প্রধানমন্ত্রীকে পাচ্ছেন না।তাদের রাজ্যে এই মহামারীর খবর জানিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বা পরামর্শ চাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের দিচ্ছেন না। আমরা আজ কোন অরাজকতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি? যখন অন্য সব দেশের প্রধানমন্ত্রীরা লড়ছেন করোনার বিরুদ্ধে মানুষকে বাঁচাবার জন্য,তখন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী লড়ছেন একটি রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখলের জন্যে।আশ্চর্য্য।দেশের প্রধানমন্ত্রীর কি দেশ চালানোর কোন দায়িত্ব নেই।তিনি কি শুধু দলের নেতা? দেশের নেতা নন।তাহলে তো তার দেশের প্রধানমন্ত্রী হবার কি দরকার। একটি দলের নেতা হিসাবে থেকে গেলেই বেশী মানানসই হত।দেশের মানুষের এই বিপদের সময় যিনি তার ওপর নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হলে সেই দেশের হাল কি হতে পারে তার প্রমাণ প্রতি পদে পদে আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভোট তো বার বার আসবে,কিন্তু দেশের মানুষ বাঁচলে তো ভোটের প্রশ্ন।সংক্রমণের ঢেউ রোজ নতুন রেকর্ড করে চলেছে। আর প্রধানমন্ত্রী এখনো মন্দির মসজিদ করে মানুষের মধ্যে বিভেদ করে চলেছেন। ইংলন্ডে যেখানে ৮.৫ শতাংশ মানুষ,ইজরায়েলে ৫৫ শতাংশ মানুষ,আমেরিকায় ১৯ শতাংশ মানুষ কোভিদের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন সেখানে মাত্র ১.৩ শতাংশ মানুষ করোনার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী টীকা উৎসব করলেন ও রাত্রিকালীন কার্ফুর নাম বদলে দিলেন করোনা কার্ফু। আগে তিনি থালা বাজিয়ে করোনা তাড়ানোর নিদান দিয়েছিলেন। তার দলের নেতারা গোমূত্র সেবন করে করোনা ভাল করার কথা বলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গোমূত্র শিবির করে মানুষকে তা খাইয়েছিলেন।একবিংশ শতাব্দীতে একটা সরকারের নেতারা কোন প্রস্তর যুগকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন বিশেষ করে যে দেশে জগদীশচন্দ্র বসু,প্রফুল্ল চন্দ্র রায়,হোমী জাহাঙ্গীর ভাবার মতো বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে। সারা দেশে অক্সিজেনের অভাব আর মন্ত্রীরা বলছেন যে কোন অভাব নেই।বিভিন্ন রাজ্যে বহু মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন।পরক্ষনেই বিদেশে অক্সিজেনের বরাত দিতে হচ্ছে। মিথ্যা বলে জনগনকে ধোঁকা দেবার মাত্রা দিন দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবার তাদের দলের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড্ণবীস মানুষের অসহয়তার সুযোগ নিয়ে করেনার ওষুধ রেমডেসিভিয়ার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগে অস্বস্তিতে। তিনি নাকি বিদেশে বেশী দামে বিক্রীর চক্রের সাথে জড়িত বলে বিরোধীদের তোপে পড়েছেন।মোদী রাজ্যের বিজেপির নেতা দলের রাজ্য সভাপতি সি আর পাতিল এই ওষুধ দিনে পাঁচ হাজার বিলি করার কথা ঘোষনা করেছেন।কি করে এই মহার্ঘ ওষুধ তার কাছে পৌঁছালো সেই প্রশ্ন উঠে গেছে। দেশে দশগুন দামে এই ওষুধ বিক্রী করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানীর কাছে তার কোন উত্তর নেই। থাকবে কি করে? বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির নেতারা মজুতদারী ও কালোবাজারির সাথে যে জড়িয়ে পরেছেন। তার কি তদন্ত সরকার করবেন?

দেশে হাসপাতালে শয্যা নেই।কোভিদ যোদ্ধাদের জন্য যে বীমার ব্যবস্থা ছিল তাও সরকার তুলে দিয়েছে। নেই পরিকাঠামো, নেই ওষুধ, নেই অক্সিজেন।এভাবেই মাত্র কয়েক বছরে দেশের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে মোদী আয়ুষ্মান ভারতের গল্প মন কি বাতে ও জনসভাগুলিতে শোনাচ্ছেন। দেশে যে একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। তার কাজ হল মোদীর গুণগান করা।একজন ডাক্টারের একি অবস্থা।ক্ষমতায় থাকার জন্য অর্থমন্ত্রীর মতো তাকেও মোদীভজনা করতে হচ্ছে।

এরই মধ্যে শুরু হল বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ কুম্ভমেলা। আয়োজকরা কি জানতেন না যে এর ফলে করোনা ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।কারণ সর্ববৃহৎ সুপারস্প্রেডার হওয়ার সব সুযোগই কুম্ভমেলার মধ্যে ছিল কারণ এই মেলাতে কয়েক কোটি মানুষকে জনসমাগম হয়।দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মেলা আয়োজনের ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ জারি করেন নি।তারা তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলে দেশে করোনা এতটা ছড়িয়ে পড়তো না।আজ প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে প্রতীকী রূপে উদযাপন করতে। মেলা শুরু হওয়ার আগে তিনি তা বললে প্রকৃত রাজধর্ম করতেন তিনি।মনে হত প্রধানমন্ত্রী সুলভ কাজ করলেন তিনি।বিরোধীদের বক্তব্য শোনার কোন ইচ্ছাই তার নেই। গত বছর দিল্লীর নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের আকারে অতি ক্ষুদ্র একটি সমাবেশ থেকে করোনা ছড়িয়েছিল বলে বিজেপির আইটি সেল এক ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছিল।বিদেশী প্রতিনিধিদের দীর্ঘদিন জেলেও পুরেছিল সরকার।রোগ সংক্রামনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচিতিকে দায়ী করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেশকে বার বার বিভক্ত করে বিজেপি পরিচালিত এই সরকার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।তাদের মধ্যে হিংসার বীজ রোপন করে নিজেরা ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম করেছে।দেশের মানুষের তাতে কোন লাভ হয় নি।গতবছর যেমন সংক্রামনের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্যস্ত ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভ্যর্থনায়,তাকে নিয়ে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে মিছিল করে করোনা ছড়াতে।এবার ব্যস্ত থেকেছেন বাংলার ভোট প্রচারে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবার পর বিরোধীসহ দেশের মানুষের ছিঃ ছিৎকারের পর হঠাৎ তার সময় হয়েছে আজ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ওষুধ সংস্থাগুলির সাথে কথা বলতে।

কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী বেশ কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতাদের সাথে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন।যদিও সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর করে নি। হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা না করে তার প্রাপ্তিস্বীকার করার সাহস তার দপ্তরের আমলাদের নেই। আর দীর্ঘদিন তো তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।

তিনি চিঠিতে লিখেছেন যে করোনায় দ্রুতহারে আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে। এই অবস্থায় সাড়ে ছয় কোটি টীকার ডোজ রপ্তানি করা হল,অথচ দেশে টীকা নেওয়ার জন্য হাহাকার।এক বছর ধরে আমরা সময় পাওয়া সত্বেও পরিকাঠামো একেবারেই বাড়াতে পারি নি বা কোন প্রস্তুতি নিতে পারি নি,এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। টীকার অপ্রতুলতা সত্বেও সরকার তা স্বীকার না করে এখনো বিদেশে পাঠাচ্ছে। দেশের মানুষকে চিকিৎসা না দিয়ে সরকার বিদেশে নাম প্রচারের কাজে ব্যস্ত।এখনই এটা বন্ধ করা দরকার। ২৫ বছর বয়সীদেরও টীকার আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ বলে তাঁর অভিমত। মহামারীর পরিস্থিতি একটা বড় চ্যালেন্জ।তা অতিক্রম করতে গেলে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিলে চলবে না। যেহেতু দেশে টীকা,ওষুধ, হাসপাতালের শয্যা, অক্সিজেন ইত্যাদির অভাব আছে সেজন্য উক্ত দ্রব্য আমদানী করা এবং যাদের ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছাড়পত্র পেয়েছে সেইসব প্রতিষেধক প্রস্তুতকারীদের এদেশে প্রতিষেধক ব্যবহার ও উৎপাদনের ছাড়পত্র জরুরী ভিত্তিতে দেওয়া যেতে পারে।দ্বিতীয়ত কোভিদ মোকাবিলা সংক্রান্ত সব পন্যের ওপর জিএসটির ছাড় দিতে হবে।
তৃতীয়ত করোনার সাম্প্রতিক অবস্থার নিরিখে দেশের অর্থনীতিতে আবার ধাক্কা লাগতে চলেছে,তাই গরীব মানুষের সুরাহার জন্য ৬০০০ টাকা তাদের ব্যাঙ্কের খাতায় দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন।সেগুলি হলঃ আগামী ছয় মাসের জন্য কত প্রতিষেধক তা জানাক সরকার।রাজ্যগুলির মধ্যে তা কিভাবে ও কোন সূত্রে বিলি করা হবে তা জানানো হোক। রাজ্যগুলিকে নিজের মত কোবিদ যুদ্ধের সামনের সারির যোদ্ধা চিহ্নিত করতে দেওয়া হোক।একাধিক সংস্থাকে লাইসেন্স ফি এর মাধ্যমে প্রতিষেধক তৈরী করতে দেওয়া হোক।বিদেশী প্রতিষেধক আমদানি করে সাম্প্রতিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়াও ৪৫ বছরের কম বয়সী অটো,ট্যাক্সিওয়ালা,বাস চালক ও কন্ডাক্টর, পুর ও পঞ্চায়েতে কর্মীদের ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসাবে প্রতিষেধক দেওয়া যেতে পারে,তা রাজ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।

সৌভাগ্যক্রমে এতদিন পার হয়ে যাবার পর কংগ্রেসের দাবীর কয়েকটি সরকার মেনে নিয়ে ১৮ বছরের ওপর সবাইকে টীকা দেওয়ার ঘোষনা করেছে। তবে তাদের তা বাজার থেকে কিনতে হবে।এছাড়াও রাজ্যকে বাজার থেকে টীকা কেনার ছাড়পত্রও দিয়েছে। এটাই কংগ্রেসের নৈতিক জয় বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনকে তীব্র সমালোচনা কলকাতা হাইকোর্টের

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট তীব্র সমালোচনা করে বলল টি এন শেষনের একের দশ ভাগ কাজও আপনারা করতে পারেন না।মনে পড়ে কংগ্রেস আমলে টিএন শেষন একাধিক প্রার্থীর প্রার্থীপদ বাতিল করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা না মানার জন্য। তখন তাঁকে অনেকেই মনোরোগের রোগী বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন।কিন্তু কংগ্রেস তাকে এব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল,কোন নির্দেশের বিরোধীতা করে নি।সেদিন দেশ গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ রূপ দেখেছিল।কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বার বার নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অপরাধে কোন ব্যবস্থা নেন নি। অন্যতম সদস্য অশোক লাভাস বার বার বাকি দুজন সদস্যকে এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন ও ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধে করা সত্বেও প্রতিবার তা ২-১ ভোটে খারিজ করা হয়েছিল। এই অবস্থায় অশোক লাভাস নির্বাচন কমিশনের সদস্যপদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

হাইকোর্ট বলেছেন যে নির্বচন কমিশন রাজ্যে করোনা ছড়ানোতে ভূমিকা নিয়েছে কারণ তাদের অক্ষমতা সব কিছু ছাপিয়ে গেছে।তারা মিটিং মিছিল কিছুই আটকাতে পারে নি। বার বার তাদের নির্দেশ অমান্য করা সত্বেও কমিশন কোন ব্যবস্থা নেন নি,চোখ বুজে ছিলেন।শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা। বলা বাহুল্য নির্বাচনী আচরনবিধি চালু হয়ে গেলে তখন তাদের হাতেই সব ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। রাজ্যে কোবিদ নিয়ন্ত্রনে কমিশনের যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল তাতে তারা চূড়ান্ত অক্ষমতা দেখিয়েছেন তাই নয়,সব কিছু অতিক্রম করা সত্বেও তারা সবসময় নীরব ছিল। এরপর নির্বাচন কমিশন সবরকমের সাইকেল ও বাইক র‍্যালি, পদযাত্রা,রোড শো ইত্যাদি বাতিল করেছেন এবং এর পর থেকে আর কোন অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। কোন সভাতে ৫০০ জনের বেশী লোক থাকতে পারবে না।কিন্তু লোক গুনবে কে?

রাহুল গান্ধী ও সীতারাম ইয়েচুরি বেশ কয়েকদিন আগেই কোবিদ এরাজ্যে বেড়ে যাওয়ার কারণে একজন প্রকৃত দেশনেতার মত দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনী সভা বাতিলের কথা ঘোষনা করেছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম মমতা বন্দোপাধ্যায় বা নরেন্দ্র মোদীর মত নেতারা একই ঘোষনা করবেন।কিন্তু তাদের কাছে মানুষের প্রানের থেকে ক্ষমতা দখল যে অঅগ্রাধিকার তা তারা প্রমান করেছেন।অবশেষে আজ মোদী বাংলায় সভা করা থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।’চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ বা ‘সেই জল খেলি তবে ঘুলিয়ে ঘুলিয়ে’ এই দুটি প্রবাদবাক্য আজ বার বার মনে পড়ছে।তবে প্রশ্ন উঠে গেছে যে প্রধানমন্ত্রীর সভা বাতিলের পর কি কমিশন এই সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *