ন্যাশনাল হেরাল্ড কি ?

ন্যাশনাল হেরাল্ড হলো এমন একটি নাম যা শুনলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের থরোহরি কম্পমান হয়ে যেত। এটি ছিল এমন একটি সংবাদপত্র, যা দাসত্বের যুগে মুক্তিকামীদের সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হত, এমনই এক সঙ্গী যা বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল, যা বিপ্লবীদের চিন্তাভাবনাকে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও প্রচার করেছিল। এই পত্রিকার মাধ্যমে সারা বিশ্ব ব্রিটিশদের বর্বরতা সম্মন্ধে জেনেছিল। ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা সারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখপত্র হয়ে উঠেছিল যা শুধু তাদেরই বক্তব্য প্রকাশ করতো, এবং সারা বিশ্বকে বাধ্য করেছিল চাপ সৃষ্টি করে ব্রিটিশদের অত্যাচার বন্ধ করতে।

পন্ডিত নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখদের দ্বারা ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হেরাল্ড স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত মুখপত্র হতে সক্ষম হয়েছিল আর ঠিক সেই কারণেই ব্রিটিশ সরকার বারবার এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করতো।

আজ কেন ন্যাশনাল হেরাল্ড নিয়ে এত আলোচনা ?

বিজেপি সাংসদ সুব্রামানিয়াম স্বামীর অভিযোগ (এফআইআর নয়) অনুসারে ED, শ্রীমতি সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মতিলাল ভোরা প্রমুখদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে ও পরবর্তী সময়ে ED এই কেসটি বন্ধ করার নির্ণয় নেয়। সেই মতো, ২০১৫ সালে কেসটি বন্ধ ও হয়ে যায়।

এবার, ২০১৮-১৯ সালে কংগ্রেস, বিজেপিকে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত করে এবং আশ্চর্যজনক ভাবে ঠিক সেই সময়ই ED আবার এই কেস টি নতুন ভাবে শুরু করে।

সময়ের সাথে সবই চুপ হয়ে যায় কিন্তু সম্প্রতি ED এই কেসে পুনরায় শ্রীমতি সোনিয়া গান্ধী ও শ্রী রাহুল গান্ধীকে সমন পাঠায়।

এখানে উল্লেখ্য, এসব কিছুই কিন্তু ঘটছে উদয়পুরে কংগ্রেসের নবসংকল্প চিন্তন শিবির অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, যেখানে কংগ্রেস এক নতুন অঙ্গীকার করেছিল ‘ভারত জোড়ো’ ।

আমরা আশা করবো আপনারা ঘটনাপরম্পরা টি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন….

ন্যাশনাল হেরাল্ডের বিরুদ্ধে বিজেপির দাবির উত্তরে প্রকৃত তথ্য :

স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ন্যাশনাল হেরাল্ড প্রভূত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই চরম বিপাক থেকে উদ্ধার হেতু ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১০০টি কিস্তিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ন্যাশনাল হেরাল্ডকে ৯০কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। এই ৯০ কোটির মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা ন্যাশনাল হেরাল্ড তাদের কর্মচারী দের বেতন ও পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে ব্যয় করে। বাকি টাকা সরকারি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যয় হয় যার মধ্যে বিদ্যুতের বিল, বাড়ির ট্যাক্স, ভাড়া ও বাড়িটির মেরামত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কেমনভাবে একটি পত্রিকা, যার নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার কারণে ঋণ নিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, সে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারে তা’ আমাদের বোধগম্য নয়।

ন্যাশনাল হেরাল্ড ও তাঁর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসোসিয়েটেড জার্নাল নিজেদের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে এই ৯০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে পারে নি। তাই, এই ঋণরাশি এসোসিয়েটেড জার্নালের নামে ইকুইটি শেয়ারে পরিণত করা হয়। আর, যেহেতু একটি আদ্যন্ত রাজনৈতিক দল কংগ্রেস এই শেয়ারগুলি নিজের অধিকারে রাখতে পারে না, সেখান থেকেই এই কেসটির সত্যতা যাচাই করে নেওয়া যায় – যেখানে কংগ্রেসের কোনো মালিকানাই নেই, সেখানে সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধী কিভাবে কোনো আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন?

আর যেহেতু কংগ্রেস নিজেদের জিম্মায় ইকুইটি শেয়ার রাখতে পারবে না, তাই সেকশন ২৫ এর নিয়ন্ত্রনাধীন ইয়ং ইন্ডিয়ান নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ারগুলি গচ্ছিত রাখা হল।

যদিও কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, অস্কার ফার্নান্দেজ, মতিলাল ভোরা, সুমন দুবে প্রমুখরা এই অলাভজনক সংস্থার কর্তাব্যক্তি ছিলেন তবুও তাদের নামে কোনো শেয়ার ছিল না। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটিই প্রচলিত প্রথা। বহু বড় সংস্থাও এইভাবেই চলে, এটি কোনো অপরাধ নয় মোটেই।

অলাভজনক সংস্থা বলতে কি বোঝায় :

অলাভজনক কোনো সংস্থার পদস্থ ব্যক্তিরা আইনত নিজেদের নামে কোম্পানির শেয়ার, ডিভিডেন্ড, লাভ, বেতন বা অন্য কোন আর্থিক সুবিধা নিতে পারেন না। তাই, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী বা ইয়ং ইন্ডিয়ানের কোনো পদস্থ কর্তা যে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন তা’ একদমই নয়। যেখানে এই ধরনের ঘটনা কিছু ঘটেই নি, তবে সেখানে কি অপরাধ সংঘটিত হলো বা ৫০০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক দুর্নীতিই বা কিভাবে হলো?

তাই বিজেপির সমস্ত দাবিই সর্বৈব মিথ্যা। তারা সেটাই করছে যেটা তারা সবচেয়ে ভালো করতে পারে – মিথ্যা বিবৃতি সম্প্রচার করে নিজেদের রাজনৈতিক লাভ অর্জন করা। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিজেদের অনুকূলে কাজে লাগিয়ে আপন মুনাফা অর্জন করা।

প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী কেউই ED এর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না, কংগ্রেস ও এই রাজনৈতিক চালের হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু এ কোথাও না কোথাও আমরা সত্য কেই অনুধাবন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আর কতদিন আমরা এইভাবে বিজেপিকে আমাদের বোকা বানাতে দেব ? আর কতদিন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করে আমাদের সংবিধান কে পদদলিত করতে দেব ?

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *