অর্থনীতির নতুন দিশা উদয়পুর থেকে গ্রহণ করলো কংগ্রেস 

চন্দন ঘোষ চৌধুরী:

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের  রাজস্থানের উদয়পুরে অনুষ্ঠিত হওয়া নব সংকল্প চিন্তন শিবিরের অন্যতম প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ হল অর্থনৈতিক প্রস্তাবনাকে কেন্দ্র করে। যেকোনো রাজনৈতিক দলের ভাবনার বিশেষ আঙ্গিক থাকে দলের আদর্শ গত আর্থিক চিন্তা এবং সেই চিন্তার সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রয়োগনীতি। এই চিন্তন শিবির উপলক্ষে গঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অর্থ বিষয়ক কমিটির প্রধান , প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম সততই এক নতুন সংস্কার প্রস্তাব করেছেন। যাকে  Post-liberalisation বা উত্তর উদারবাদ বলা হচ্ছে।
কংগ্রেসের দীর্ঘ দেশ শাসনে বহুবার আর্থিক সংস্কার হয়েছে। স্বাধীনতার পরে সমাজ অর্থনীতি বা Social Economy, দেশগড়ার আর্থিক ব্যবস্থায় সরকারি নিয়ন্ত্রণে জনকল্যাণ অর্থনৈতিক ভাবনা ও সরকারি-বেসরকারির যৌথতায় Mixed Economy বা মিশ্র অর্থনীতির প্রবর্তন হয়। পরবর্তী চার দশক সেই ব্যবস্থায় অনেক নীতি পরিবর্তিত হয়।
অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধান শর্ত স্থিতিশীল বাজার, আর্থিক সমবৃদ্ধি, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বেকারীত্ব দূরীকরণ। 
আমরা নেহেরু সময়কাল বা Nehru Era তে প্রত্যেকটি প্রকল্পে এই সমন্বয় দেখতে পাই। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি উন্নয়নের নীতি ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়  শিল্প । পরবর্তী পরিকল্পনায় সরকারী প্রাধান্যতায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন দেখি বহু শিল্প তৈরি ও বহু সংস্থাকে সরকারীকরণ করা হয় দেশের সম্পদ বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের উন্নয়নশীলতা প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। 
সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতায় দেশ গঠন তো অনেক বিশাল ক্ষেত্র, শুধু অর্থনৈতিক ভাবনাটাই Nehru Era র এক অতি সফল দিক।অর্থনীতির ইতিহাস যাকে বলে,” A giant leap from colonial enclave to independent balance of Sustainable and resurgent growth” । 
ইন্দিরা গান্ধী দু’দফায় সরকারের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ কে সুনিশ্চিত করেছেন। উচ্চ আয়কারীদের  উপর ট্যাক্স বাড়িয়ে গণবন্টন ব্যবস্থা দৃঢ় করেন, ব্যাংক সরকারীকরণ, তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দুটিই লক্ষ্যমাত্রার উপরে চলে যায়।
রাজীব গান্ধীর সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও Technology revolution  আজ আমাদের দেশের অসামান্য অবদান।
পি ভি নরসিংহ রাও এবং  তাঁর মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং উদার অর্থনীতি বা Global liberal economy প্রচলন করলেন এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন Technology  ও allied Industry ধীরে ধীরে বিশ্বায়ন হচ্ছে, ব্যবসার পরিধি বিশ্ব ব্যাপ্তি হচ্ছে। বাস্তব প্রয়োজনে অতি সতর্কতায় এক ব্যাপক আর্থিক সংস্কার হলো, মনে রাখতে হবে, এক বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার মধ্যেই এই মহাকর্ম সাধিত হলো।
৩১ বছর আগে Global Economy তে পদার্পণ করার পর কয়েকটি কঠিন পদক্ষেপ হলো :
১. ৬ টি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া লাইসেন্সহীন ব্যবস্থা বা Delicencing system.২. বেসরকারি শিল্প প্রবেশের অনুমতি বা Entry to private sector.৩. বিলগ্নিকরণ বা Disinvestment , বিশেষ ভাবে রুগ্ন শিল্পের পুনর্জীবনের স্বার্থে।৪. বিদেশনীতির উদারীকরণ বা Liberisation of foreign policy (Economic corridor)।৫. MSME র মতো শিল্প ব্যবস্থা র বিস্তার।
এ ছাড়াও Technology, Insurance ও Higher Education System কেও বিশ্বমানের পরিষেবার ও প্রতিযোগিতামূলক সংস্কার করা হয়ে ছিলো।
আজ জাতীয় কংগ্রেসের উদয়পুর চিন্তন শিবিরে Post liberal Economy কে সামনে আনার প্রয়াস শুরু হলো। Contemplation to reset economic policies। UPA র দশ বছরের শাসনকালে যুগান্তকারী আর্থিক প্রকল্প ১০০ দিনের কাজ ,খাদ্য সুরক্ষা আইন, যা ২৭কোটি দেশবাসীকে দারিদ্র্যসীমার উপরে নিয়ে আসে। সামাজিক খাতে ব্যায় ৯% থেকে আজ ৫% এ দাঁড়িয়েছে।
এই  নতুন ভাবনা  সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যায় বাড়ানো, NYAY র প্রকৃত প্রয়োগ ও অর্থের অনুদান বাড়ানো, MNREGA র কর্মদিন বাড়ানো, GST কে আরও ব্যাবসা উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা,স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই প্রত্যয়। 
আন্তর্জাতিক ক্ষুধা index এ ভারতের অবস্থান সর্বকালের নিম্ন। ৪৬ বছরের সর্বোচ্চ বেকারীত্ব। ১০% মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই জাতীয় কংগ্রেসের Post-liberal আর্থিক ভাবনা।
যে ভাবনাগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বাস্তবিক ফলপ্রসূ হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত অর্থনীতি , বন্ধু অর্থনীতি ও অদূরদর্শী অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেসকেই ভাবতে হবে দেশকে  বাঁচানোর পথ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *