–অশোক ভট্টাচার্যের প্রতিবেদনঃ
তৈরি থাকুন। আপনার দেহে কি খাঁটি ভারতীয় রক্ত বইছে? যন্তর মন্তর ঘরে যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ, এবার সে যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দ্যাখা হবে –বলা ভালো, বাজিয়ে দ্যাখা হবে আপনার ‘জাতিগত বিশুদ্ধতা’ বা ‘Racial Purity’ র মাত্রা কতটা। মোদি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক সম্প্রতি এমনই এক পথে হাঁটতে চলেছে। একটা ‘DNA প্রোফাইলিং কিটস’ আসছে, যার মাধ্যমে মোদি সরকার খুঁজে দেখবে আপনার দেহে কোন কোন রক্ত এসে মিশেছে! তীব্র বিরোধিতা করেছেন রাহুল গান্ধী। রাহুল বলেছেন দেশের মানুষ চাকরি চায়, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা চায়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চায়; ‘জাতিগত বিশুদ্ধতা ‘ চায় না।
উল্লেখ্য এই ‘Racial Purity’ বা ‘জাতিগত বিশুদ্ধতা’ খোঁজার ধারণা নতুন নয়। স্বয়ং হিটলারের মস্তিস্ক প্রসূত ছিলো এই ধারণা। নাৎসি জার্মানীতে প্রবল ইহুদি বিদ্বেষ থেকেই এই খাঁটি জার্মান রক্ত খোঁজার কাজ চালিয়েছিলো হিটলার বাহিনী। একই কাজ এবার মোদি সরকার করতে চলেছে? যার ফল হতে পারে মারাত্মক এবং বিপজ্জনক।
ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যে যন্ত্র তৈরি হয়েছে তার মাধ্যমে রাষ্ট্র খুঁজে দেখতে চায় গত ১০ হাজার বছর ধরে ভারতীয় রক্তে কি কি ভাবে শংকরায়ন ঘটেছে। কিন্তু কেন এই খুঁজে দ্যাখার পথে হাঁটছে মোদি সরকার? এর দুটো কারণ আপাতত সামনে চলে আসছে। এক) চরম বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সরকারের ব্যর্থতা–এসবের থেকে চোখ ঘুরিয়ে দিয়ে উগ্র জাতিপ্রেমের পতাকা উড়িয়ে বিদ্বেষ ও ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি করা।
দুই) যে উদ্দেশে NRC-CAA, সেই প্রবল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে হাতিয়ার করেই RSS এর এজেন্ডাকে এ দেশের বুকে প্রতিষ্ঠা করা।
আত্মপরিচয় উদঘাটনের খেলা বড় মারাত্মক। সকলে রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ র মতো নিজের প্রকৃত রক্তের সন্ধান পেয়ে বিশ্বমানব হয়ে উঠতে পারেনা। সেই হয়ে ওঠার পিছনে ছিলো রবীন্দ্রনাথের জীবন ও ইতিহাস প্রজ্ঞাঃ
তার বিচিত্র সুর।”
কিন্তু আত্মপরিচয় উদঘাটনের ভয়ংকর খেলায় নেমে রাজা ইদিপাসের মতো আত্মধ্বংসী হওয়ার উদাহরণও প্রচুর। যে ভয়ংকর আগুন নিয়ে খেলা করার সলতে পাকাচ্ছে মোদি-শাহরা, সেই আগুন কিন্তু নাৎসি হিটলার কে এবং তাদের মতো সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিয়েছিলো। তাই তো মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ দেখে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মন্তব্য করেছেন, “এ তো ১৯৩০ এর জার্মানীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। “