জল,জঙ্গল,জমি এদেশের মানুষের, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর নয়– রাহুল গান্ধী

অমিতাভ সিংহ-এর প্রতিবেদনঃ

সম্প্রতি গুজরাটের দাহোদে আদিবাসী সত্যাগ্রহ র‍্যালি উপলক্ষে এক বিশাল সভায় রাহুল গান্ধী পরিষ্কার করে দেন যে জল,জঙ্গল ও জমির অধিকার দেশের প্রতিটি মানুষের তা সে আদিবাসী হোক,দলিত হোক,গরীব হোক বা ধনী হোক।এই অধিকারে কোন প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বা কোন শিল্পপতি ব্যবসায়ী হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকার জঙ্গলের অধিকার আইন এনে আদিবাসীদের জঙ্গলের গাছ,কাঠ,জমি,জলের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।কংগ্রেসের যে কোন সময়ের সরকারের মূল চেষ্টা ছিল যুবক, দলিত, গরীব মানুষ বা আদিবাসীদের ভাল ভাবে জীবনধারণের সুযোগ তৈরী করে দেওয়া। তাই কংগ্রেস মনরেগা বা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প এনে তাদের কর্মসংস্থান বা রোজগারের নিশ্চয়তা দিয়েছে বলেও রাহুল গান্ধী উল্লেখ করেন।তিনি বলেনএর ফলে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। যখন কংগ্রেস সরকার এই প্রকল্প আইন করে এনেছিল তখন মোদী বলেছিলেন এটা মাটি কাটার প্রকল্প। কিন্তু গত লকডাউনের পর থেকে কোবিদের সময় এই প্রকল্পের ফলে দেশের কয়েক কোটি মানুষ সুবিধা পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী আরো উল্লেখ করেন যে,বৃটিশ আমলে দেশের মানুষের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হত কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়া হলে জমির বাজারের দামের তুলনায় আইন করে চারগুন পর্যন্ত ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করেছে কংগ্রেস ।

রাহুল কটাক্ষের সুরে বলেন,মোদি সরকার নোটবন্দীর নামে সারা দেশের মানুষকে রাস্তায় লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো।সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা বার করে নিয়ে বলেছিল যে কালোধন উদ্ধার করা হচ্ছে।বলেছিল সসন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম নির্মুল হবে।কিন্তু কতটা কি হয়েছে তা সাধারণ মানুষ দেখতেই পারছেন।কালোধন তো উদ্ধার হয় নি,বরং নীরব মোদী,বিজয় মাল্যর মত লোক মানুষের টাকা মেরে বিদেশ পালিয়েছে মোদী সরকারের বিনা বাধায়।

রাহুল গান্ধী বলেন, দেশে এখন দুধরনের ভারত দেখা যাচ্ছে। এক, ধনীর ভারত,যাদের জন্য কোন আইন নেই।এরা কোবিদের সময় নিজেদের আয় ও সম্পত্তি কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়েছে।দুই,গরীবের ভারত। যাদের শিক্ষার সুযোগ নেই,স্বাস্থ্যের সুযোগ নেই;যারা মৃত্যুর জন্য হাসপাতালে যায় যেখানে তারা না পায় ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সিলিন্ডার।আর তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন থালি বাজাও,মোবাইল ফোনে আলো জ্বালাও। গুজরাটে তিন লক্ষ মানুষ মারা গেছে।সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তোলে নি।গঙ্গা মায়ের শরীর লক্ষ লক্ষ মৃতদেহে ভরে গেছে। জল দূষিত হয়েছে আর সরকার বলছে এগুলো কোবিদে মৃত্যু নয়।দেশে অন্তত লাখ পঞ্চাশেক মানুষ মারা গেছে কোবিদে আর সরকার তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে দেশের মানুষকে ঠকাচ্ছে। টিভি খুললেই মোদীর চেহারা সবসময় দেখি।কখনও কি কোন আদিবাসী বা দলিত বা কৃষক বা শ্রমিক ভাই বা বোনেকে দেখতে পাওয়া যায় না।

রাহুল আরো বলেন, জমি,জঙ্গল বা জল সব মানুষের, কোন ব্যবসায়ী বা মুখ্যমন্ত্রীর নয়।অথচ পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সমাজের মানুষ এগুলির সুবিধা নিতে পারেন না। গুজরাটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, গুজরাটের স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও যেতে পারেন না এই আদিবাসী সমাজের মানুষেরা। কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বেসরকারিকরণ করে মাইনে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে যাতে প্রান্তিক মানুষের ঘরের ছেলে মেয়েরা সেখানে পড়াশোনা না করতে পারে।হাসপাতালেরও একই অবস্থা।সরকারী হাসপাতালের বদলে প্রাইভেট হাসপাতাল তৈরী হচ্ছে বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী বা ধনী লোকেদের জন্য। আজ আদিবাসীদের জন্যে না আছে শিক্ষা,না আছে স্বাস্থ্য, না আছে স্বাধীনতা, না আছে রোজগার। রাহুল গান্ধী বলেন, তিনি চান এই সব সত্য সর্বসমক্ষে প্রকাশ হোক;পুরো দেশ জানুক গুজরাট মডেলের নামে ফোলানো বেলুনটার কি দশা। বেরিয়ে আসুক গুজরাটের প্রকৃত অবস্থাটা আসলে কি?

রাজস্থান বা ছত্তিসগড়ে কংগ্রেস নির্বাচনের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন । তিনি বলেন,সেখানে কংগ্রেস সরকার কৃষকের ঋণ মকুব, ধানের সহায়ক মূল্য ঠিক করে দেওয়া যাতে কৃষকেরা নায্য দাম পায়- এই সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার স্বাস্থ্য’র একটি নতুন মডেল বানিয়েছে যাতে প্রতিটি অঞ্চলে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল তৈরী করা,বিনামূল্যে ওষুধপাতি নিশ্চিত করা,১০ লক্ষ টাকার মেডিক্যাল বীমা,৫ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমা,মেডিক্যাল পরীক্ষা,ব্লকে ব্লকে মেডিক্যাল ক্লিনিক,ওপিডি তে বিনামূল্যে দেখানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যাবে।ছত্তিসগড়ে হাজার হাজার ইংরাজী মাধ্যমের সরকারী স্কুল তৈরী করা হয়েছে যাতে গরীব,দলিত বা আদিবাসী ছেলে মেয়েরা বিনামূল্যে সেখানে পড়াশোনা করতে পারে। আর গুজরাটে সরকার মূর্তি বানাচ্ছে বা নদী সংযোগের মত অপ্রয়োজনীয় কাজ করছে গরীব বা আদিবাসীদের কথা না ভেবে।একসময় বীরসা মুন্ডা,গোবিন্দগুরু দেশকে পথ দেখিয়েছিলেন, আজ আদিবাসীদের সাথে কংগ্রেস মিলে একসাথে লড়াই করবে বলেও রাহুল গান্ধী ঘোষণা করেন।বিজেপি আদিবাসীদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে,কংগ্রেস সবাইকে নিয়ে আবার তা ছিনিয়ে আনবে বলেও তিনি বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, জিগ্নেস মেবানী আন্দোলন করছিল,বিজেপি তার তিন মাসের জেল করিয়েছে মিথ্যা মামলা দিয়ে।আন্দোলনের জন্য সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হবে নাকি? এটাই কি গুজরাট মডেল? বিজেপি দুএকজনের কাছে আদিবাসীদের ও দেশের ভবিষ্যৎ বিক্রি করতে চাইছে।কংগ্রেস তা হতে দেবে না।

কংগ্রেস ২৪ ঘন্টা আদিবাসীদের পাশে থাকবে; জনতার আওয়াজ সরকারকে ঠিক পথে চলতে বাধ্য করবে।মিডিয়া ভুলপথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে তবেই আগামী নির্বাচনে জয় আসবে বলে রাহুল বলেন।গত নির্বাচনে মিডিয়া বলেছিল কংগ্রেস লড়তেই পারবে না।কিন্তু আমরা প্রায় লক্ষভেদ করে ফেলেছিলাম।এবার কংগ্রেস জিতবেই এই ভরসা আমাদের আছে বলে রাহুল গান্ধী প্রত্যয় প্রকাশ করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *