হাঁটছেন অধীর চৌধুরী-সঙ্গে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদন, ৩ রা জানুয়ারী’২৩ঃ

৯০ কিলোমিটারের কিছু বেশি পথ ইতোমধ্যেই হেঁটে ফেলেছেন পদযাত্রীরা। গঙ্গাসাগরের কপিল মুনির মন্দির থেকে সাগরের জল কলসে নিয়ে সাগর থেকে পাহাড় পদযাত্রা যাত্রা শুরু হয়েছিলো গত ২৮ শে ডিসেম্বর, দিনটা ছিলো কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসও। দু-একটা দিন বাদ দিয়ে প্রথম দিন থেকেই এই পদযাত্রায় হেঁটে চলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। কখনো সঙ্গে থাকছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, কখনোবা এ.চেল্লাকুমারের মতো সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। যাত্রায় পা মিলিয়েছেন নেপাল মাহাত, অসিত মিত্রের মতো প্রাক্তন বিধায়করাও। প্রদেশ কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতৃত্ব, কংগ্রেসের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সমান তালে এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। পদযাত্রার চতুর্থ দিনে ডায়ামন্ড হারবার থেকে আমতলা পর্যন্ত হাঁটেন অধীর বাবু। বর্ণাঢ্য ওই পদযাত্রা সংগঠিত করেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কংগ্রেস ( ১) কমিটির সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ মনোরঞ্জন হালদার। পঞ্চম দিনে আমতলা থেকে তারাতলা পর্যন্ত পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, মহঃ মোক্তার সহ নেতৃত্ব। ষষ্ঠ দিনের যাত্রায় হাঁটেন অধীর বাবু। ওই দিন যাত্রা প্রবেশ করে রাজধানী কোলকাতার বুকে।

তারাতলা মোড় থেকে গত সোমবার যাত্রা শুরু হয় সকালেই। নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, এ.চেল্লাকুমাররা। দক্ষিণ কোলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের উদ্যোগে এইদিন প্রথম পর্যায়ের যাত্রা পথে ছ’জন জন প্রয়াত কংগ্রেস নেতার নামে ছ’টি মঞ্চ করা হয়, সেখান থেকেই পদযাত্রীদের স্বাগত জানানো হয়। লক্ষীকান্ত বোস, ফুলরেণু গুহ, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রিয় রঞ্জন দাশমুন্সী এবং সোমেন মিত্রর নামাঙ্কিত এই মঞ্চগুলি থেকে যাত্রার সমর্থনে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। এদিন মহঃ মোক্তার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, পলাশ ভান্ডারীর মতো হাঁটেন।তারাতলা থেকে বিধান ভবন পর্যন্ত এই দিনের প্রথম পর্যায়ের যাত্রা পথে এলগিন রোডের নেতাজী সুভাষ বসুর বাসভবনে গিয়ে সেখানে নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন অধীর বাবুরা। প্রথম পর্যায়ের এই পদযাত্রায় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গ্যাস বেলুন উড়িয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানান। তারাতলা থেকে বিধান ভবনে যখন এই পদযাত্রা এসে পৌঁছায় পদযাত্রা কার্যত তখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো।

সোমবার কোলকাতার পদযাত্রার দ্বিতীয় পর্যায়ে দুপুরের পর বিধান ভবনে এসে পৌঁছান বিশিষ্ট অভিনেতা বাদশা মৈত্র, তিনি পদযাত্রায় অংশ নেন। মধ্য কোলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সুমন পালের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ের পদযাত্রা অভিনব ভাবে সেজে ওঠে। ছৌ নাচ, বাউল গান, রণপা, ঢাক, মাছ, ফুটবল, রসগোল্লা, বৌ বাজার বাড়ি ভাঙা সব কিছুর উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতির পাশাপাশি সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক অসংগতিগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়। বিধান ভবনে থেকে যখন দ্বিতীয় পর্যায়ের পদযাত্রা শুরু হয় তখনই কার্যত পদযাত্রা জনারণ্যে পরিণত হয়। এরপর পদযাত্রা যত এগিয়েছে মানুষের অংশগ্রহণ ততই বেড়েছে। সুমন পালের অনবদ্য সাংগঠনিক নেতৃত্বে এই পর্যায়ের পদযাত্রা এক অন্য মাত্রা পায়।

এই যাত্রা পথে সিমলা স্ট্রীটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে গিয়ে স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অধীর বাবু। এই পর্যায়ে অধীর বাবুর সঙ্গে ছিলেন এ.চেল্লাকুমার, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। উত্তর কোলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায় চৌধুরীর উদ্যোগে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এদিনের যাত্রা শেষে একটি জনসভাও হয়। উল্লেখ্য যাত্রাপথের এই পর্যায়ে বিশিষ্ট অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র পদযাত্রায় হাঁটেন। শ্রীলেখা দেবীকে পথেই উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন স্বয়ং অধীর বাবু। শ্যামবাজারের জনসভায় অভিনেত্রী শ্রীলেখা বক্তব্যও রাখেন। এই সভায় উপস্থিত হন প্রথিতযশা চিকিৎসক ডা. কুনাল সরকারের মতো মানুষও, কুনাল বাবু তাঁর সাবলীল বক্তব্যে ভারত জোড়ো যাত্রা’র প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন এদিন। শ্যামবাজারের এই মঞ্চ থেকেই উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কংগ্রেস ( শহর) এর সভাপতি তাপস মজুমদারের হাতে গঙ্গাসাগর থেকে আনা কলস এবং জাতীয় পতাকা অর্পণ করেন উত্তর কোলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায় চৌধুরী। শ্যামবাজারের এই জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জননেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এদিন বাংলা কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রসঙ্গ টেনে কখনো কাজী নজরুলের কবিতার উদাত্ত আবৃত্তি করেন কখনো বিবেকানন্দের সংস্কৃত উদ্ধৃতি উচ্চারণ করেন।

মঙ্গলবার সকালেই দমদম চিড়িয়ামোড় থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। ব্যবস্থাপনায় এখানে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কংগ্রেস ( শহর)-এর সভাপতি তাপস মজুমদার। পদযাত্রার সূচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ফুটবলার ভাষ্কর গাঙ্গুলি এবং ভারত সেবাশ্রমের সম্মানীর মহারাজরা এবং শুভঙ্কর সরকার ও নিলয় প্রামাণিকের মতো কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যদের নেতৃত্বে পদযাত্রা প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছায় মধ্যমগ্রাম বিটি কলেজ মোড়ে। মঙ্গলবারের পদযাত্রাতেও মানুষের ঢল লক্ষ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সংগঠন-ইনচার্জ নিলয় প্রামাণিক জানিয়েছেন যে, যতদিন যাচ্ছে ততই এই পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেড়ে চলছে। আগামী দিনগুলোতে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে এই পদযাত্রা এক অনন্য মাত্রা পেতে চলছে বলে নিলয় বাবু মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য পদযাত্রা সফল করার লক্ষে প্রতি মুহূর্তে সংগঠনের সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন নিলয় বাবু। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সৌম্য আইচ রায় জানিয়েছেন এই সাগর থেকে পাহাড় পদযাত্রার সর্বাত্মক প্রচারের লক্ষে কংগ্রেসের মুখপাত্ররা দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছেন।উল্লেখ্য সৌম্য বাবু অন্যন্য স্থায়ী পদযাত্রীদের মতোই তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে এই পদযাত্রায় প্রতিদিনই হাঁটছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *