লিপিকা ঘোষ
গত ১৮ অগাষ্ট, বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। এর আগে দিল্লিতেও দুই নেতার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই সময় সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছিলেন যে তিনি মমতার সঙ্গেই রয়েছেন। সেই সময় থেকেই সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর তৃণমূলের যোগ দেওয়ার জল্পনা জোরালো হয়েছিল। এই আবহে ফের একবার নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করায় জল্পনার আগুনে ঘি পড়েছে। কারণ স্বামীর মতে, আরএসএস হল একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা যা ভারতকে একীভূত করতে কাজ করে এবং তিনি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার স্বপ্ন দেখেন। তাই একজন তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি নেতার সাথে মমতা ব্যানার্জীর কিসের এত গোপন বৈঠক, কিসের এত ঘনিষ্ঠতা, যেখানে প্রকাশ্যে বিজেপি তৃণমূল পরস্পরের রাজনৈতিক শত্রু বলে দাগানো হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি ধরে নিতে হয় সবটাই একটা আইওয়াশ মাত্র ?? তৃণমূলের মুসলিম নেতাদের এ বিষয়ে কি বক্তব্য তা জানতে সকলেই খুবই উৎসুক। উল্লেখ্য, রাজ্যসভায় মেয়াদ শেষ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর। এবার বিজেপির তরফে আর তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। এই আবহে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তৃণমূলে যোগ দিয়ে ফের একবার রাজ্যসভায় পা রাখতে পারেন বলে জানা গিয়েছে সূত্র মারফত। সূত্রের খবর, মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয় স্বামীর। তৃণমূল নেত্রীও আশ্বাস দেন যে স্বামী তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাতে সমর্থন জানাবে দল। এদিকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী নাকি আরও বলেছেন যে বিজেপি ছাড়তে চাইছেন বর্তমান কয়েকজন সাংসদ। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর যোগাযোগ স্থাপনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চলেছেন স্বামী। জানা গিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে ফের একবার কলকাতায় পা রাখবেন স্বামী। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘দিল্লিতে রাজনীতি করার সুবাদে দু’জনের পুরনো পরিচয়। কলকাতায় এলে সৌজন্য সাক্ষাৎ হতেই পারে। এই নিয়ে আলোচনার কী আছে?’ যদিও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই সাক্ষাৎ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আগে শোনা গিয়েছিল, স্বামী এসে ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে যোগ দেবেন। তিনি আবার বলেছিলেন, বিজেপিতে থেকেও তিনি তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গেই আছেন। এখন মোদীর দূত হিসেবে খবর নিতে এসেছেন মনে হয়।’অন্য দিকে আবার খবর বেশ কয়েক দিন ধরেই বিজেপি, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরব স্বামী। শিখ সম্প্রদায়দের মোদী এবং ভারত সরকার উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রকাশ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন তিনি। গত ১৩ আগস্ট নিজের টুইটারে তিনি লেখেন, “২০১৭ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদী (প্রধানমন্ত্রী) বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন ২০২২ সালের ১৫ আগস্টের মধ্যে এগুলো পূরণ হবে।
প্রতিশ্রুতিগুলি হলো:
১) প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি হবে;
২) সবার জন্য ঘর হবে;
৩) কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে;
৪) বুলেট ট্রেন চালু হবে।
এগুলো পূরণ হয়েছে কি? এবছর ১৫ আগস্টের ভাষণে আবার নতুন কী প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছেন উনি?” তাঁর এই টুইট রিটুইট করেছিলেন তৃণমূল নেতা কীর্তি আজাদ।বিজেপির যে নেতা কথায় কথায় বিরোধী নেতাদের দুর্নীতি খুঁজে পান, তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের ও দলের এই দুর্নীতির আবহে, এই ইডি, সিবিআই গ্রেফতারির আবহে হঠাৎ করে বা পূর্ব পরিকল্পনামাফিক মমতা ব্যানার্জীর সাথে এই গোপন বৈঠক তার অসাধুতার প্রশ্ন তুলে দেয় না কি ??
প্রশ্ন রইল, তিনি কি ভবিষ্যতে তৃণমূলের মধ্যে থেকেই আরএসএস করবেন ??
( মতামত লেখিকার ব্যক্তিগত)