তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতাঃ ‘ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দানে বিরত থাকছে তৃণমূল। এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং ঘটনা পরম্পরা এটাই বলে যে, মুখে বিজেপি বিরোধিতার কথা বললেও CAA-NRC নিয়ে সংসদে ভোটাভুটিতে তাঁদের সাংসদরা অনুপস্থিত থাকেন, এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে যখনই সংসদে ভোটাভুটির প্রশ্ন আসে তখনই তৃণমূলকে দেখা গেছে সেই ভোটাভুটি এড়িয়ে গিয়ে তাঁরা ‘ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি’ মার্কা ভূমিকা পালন করেছেন। কেবল বাংলা কেন? সারা ভারতের মানুষ দেখেছেন যতদিন জগদীপ ধনকড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে ছিলেন, ততদিন তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-নেত্রীরা রাজ্যপালকে টুইট বাণে বিদ্ধ করার প্রতিযোগিতায় নেমে ছিলেন ; উল্টোদিকে ধনকড় সাহেবও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। মানুষকে বোঝানো হতো যে, কতই না বিরোধিতা দুই পক্ষের মধ্যে!কিন্তু মিথ্যার বেসাতি বেশিদিন চলেনা। অবশেষে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ দু’পক্ষের মুখোশই খুলে গেলো। ১৭ টি বিরোধী দল একসঙ্গে বসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতোই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করেছে, সেই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেও তৃণমূল যোগ দেয়নি। তৃণমূলের লোকসভার নেতা ওইদিন দিল্লি থাকা সত্ত্বেও উক্ত বৈঠকে হাজির থাকলেন না কেন? তার উত্তর লুকিয়ে থাকে দার্জিলিং-এর রাজভবনে প্রাক্তন রাজ্যপাল, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং হেমন্ত বিশ্বশর্মার মধ্যে বৈঠকের মাঝেই; সে বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছিলো, তা কিন্তু আজও রহস্যই।আসলে মুখে বিজেপি বিরোধিতার কথা বললেও আদপে বিজেপি কিম্বা সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে ‘বিচারধারার লড়াই’ লড়বার ধক নেই তৃণমূলের। কখনো ছিলোও না।

‘বাজপেয়ীর বিজেপি ভালো-মোদির বিজেপি খারাপ,সাদা বিজেপি ভালো-কালো বিজেপি খারাপ, রোগা বিজেপি ভালো-মোটা বিজেপি খারাপ ‘–এমন একটা হাসজারু মার্কা ন্যারেটিভ সৃষ্টি করতে গিয়ে আজ তৃণমূল নিজেই নিজের হাতে নিজের মুখোশ খুলে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তৃণমূলের বিশ্বাসযোগ্যতা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু তৃণমূলের এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। রাজনৈতিক দাদন গ্রহণ করলে কড়ায়গণ্ডায় তার বাধ্যবাধকতা যে ফিরিয়ে দিতেই হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *