সৌরভ কুন্ডুর প্রতিবেদনঃ
গত ১৩ই জুন, ২০২২ জাতীয় কংগ্রেস সাংসদ শ্রী রাহুল গান্ধীকে ED, দ্য ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে তলব করেছিল। বিজেপির এই চক্রান্ত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জবাব দেওয়ার জন্য গতকাল সারা ভারত জুড়ে কংগ্রেসের সমস্ত নেতা ও কর্মীদের পথে নেমে বিজেপির নোংরা প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন ।
রাজধানী দিল্লি ও সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে হাজার হাজার কংগ্রেস নেতা, নেত্রী ও কর্মীরা পথে নামেন। এক স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখলো কাল সারা ভারত। গান্ধী পরিবারের নামে সেই আবেগ কোনো দিনক্ষণ মানে না। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, অথচ মানুষ সব ভুলে বিজেপি তথা মোদি সরকারের এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়নতার বিরুদ্ধে একযোগে রুখে দাঁড়ানোর কংগ্রেসের এই প্রচেষ্টায় পুরোপুরি সফল বলেই রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ।
কংগ্রেসের সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্ব গতকাল রাজধানী দিল্লিতে জমায়েত হয়েছিলেন। প্রবীণ নেতা পি চিদাম্বরম, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, সদ্য কোভিড থেকে সেরে ওঠা কে সি ভেনুগোপাল, লোকসভার বিরোধী দলনেতা সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী, রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা, প্রবীণ নেতা তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত, ছত্রীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত-কে ছিলেন না কাল দিল্লিতে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কাল সারাদিন দাদার পাশেই ছিলেন। মা সোনিয়া গান্ধী কেও ED তলব করেছে একই মামলায়। কিন্তু উনি কোভিড জনিত দুর্বলতা ও কিছু জটিলতার কারণে দিল্লির শেঠ গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি তাই ED এর কাছে সময় নিয়েছেন। উনি আগামী ২৩ তারিখ ED এর সদর দপ্তরে যাবেন বলে এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত আছে।
গতকাল মোদির দিল্লি পুলিশ এতটাই আক্রমণাত্মক ওঠে যে প্রবীণ নেতা পি চিদাম্বরম কেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় । তাঁর চশমা ছিটকে যায়, পাঁজরে হেয়ারলাইন ফ্রাকচার হয়। মাথায় চোট লাগে প্রবীণ সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারির। তাঁর ও পাঁজরে ফ্রাকচার হয়। কংগ্রেস থেকে দাবি করা হয় যে ‘বর্বরতার সবরকমের মাত্রা অতিক্রম করে গেছে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকার। এর নাম কি গণতন্ত্র’ ?
প্রথমে আকবর লেনে কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সামনে, তারপর তুঘলক লেনে সাংসদ রাহুল গান্ধীর বাসভবনের সম্মুখে ও পরে এ পি জে আব্দুল কালাম রোডের ED অফিসের সামনে অসংখ্য কংগ্রেস নেতা ও কর্মীরা জমায়েত করেন। এরপর সারাদিন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীরা দফায় দফায় শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ চালিয়ে যান। যান শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীর পাশে থাকার জন্য।
পুলিশের নিরাপত্তার বাধা টপকে অধীর চৌধুরী, সূর্যেওয়ালা, ভেনুগোপাল, খাড়্গের মত সাংসদরা গতকাল মরিয়া ভাবে আন্দোলন করেন। ধস্তাধস্তিতে কে সি ভেনুগোপালের জামা ছিঁড়ে যায়, অধীর বাবুর মুখে আঘাত লাগে। পরে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ থানায় আটকে রাখা হয় এবং এই প্রবীণ নেতাদের সারাদিন খাওয়া তো দুরের কথা, জল পর্যন্ত পান করতে দেওয়া হয় নি।
পার্লামেন্ট স্ট্রিট, মন্দির মার্গ সহ বিভিন্ন থানায় অসংখ্য নেতা ও কর্মীদের আটক করে রাখা হয়। তাঁরা সেখানে বসেই “রঘুপতি রাঘব রাজা রাম” ভজনটি গেয়ে সত্যাগ্রহ পালন করেন।
মোদি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়নতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সমস্ত স্তরের নেতা, নেত্রী ও কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখলো কাল সারা দেশ ও বহির্বিশ্ব। যারা প্রায়শই টিভি তে বসে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস কোথায় তাদের মুখে কাল ঝামা ঘষে দিল গতকাল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এই সত্যাগ্রহ। আগামী দিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখলো এই গণসত্যাগ্রহ।
সর্বশেষ খবর যা পাওয়া গেছে তাতে যেহেতু আজও রাহুল গান্ধী কে ED তাদের দপ্তরে তলব করেছে তাই আজও কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতৃত্ব AICC সদর দপ্তরের সামনে শান্তিপূর্ণ ধর্ণায় বসেছিলেন কিন্তু দিল্লি পুলিশ সমস্ত নেতা নেত্রীদের বিনা ওয়ারেন্টে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে দিল্লির বাইরে হরিয়ানা সীমান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
(আরো বিস্তারিত খবর পরে আসছে।)