সুজিত দেঃ
গত ২৮ শে এপ্রিল নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটির উদ্যোগে হাঁসখালি সহ রাজ্যে প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে ঘটে চলা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মৌলালী যুব কেন্দ্রে এক ধিক্কার সভার আয়োজন করা হয়। সভায় এরাজ্যে বর্তমানে শিশুকন্যা থেকে কিশোরী,স্কুল ছাত্রী,যুবতী থেকে প্রৌঢ়া রমণী পর্যন্ত নারীরা যেভাবে পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন উদ্যোক্তারা।উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, এই সমাজকে সভ্য সমাজ বলতে পারছেননা তাঁরা।শাসকগোষ্ঠী ও প্রশাসন কাকে রক্ষা করতে চাইছেন- দুর্বৃত্ত না নির্যাতিতাকে? এই প্রশ্ন আজ রাজ্যের সর্বত্র বলেও উদ্যোক্তারা উল্লেখ করেন। আলোচকরা বলেন,আজ শাসকরা দুর্বৃত্তদের পরম আশ্রয়স্থল। উদ্যোক্তারা আরো বলেন যে, আজ রাজ্যের মানুষের সবথেকে বেশি আহত হয়েছেন এব্যাপারে প্রাশাসনিক প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্মম প্রতিক্রিয়ায়। ধর্ষিতা বিদ্যালয়ের ছাত্রীর হত্যাকে ছোট ঘটনা বা চরিত্র দোষ খোঁজার কথা বলে তিনি রাজ্যকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছেন? এই প্রশ্নও আজকের আলোচনায় উঠে আসে।
হাঁসখালির নাবালিকা ধর্ষিতা হয়ে ন্যূনতম চিকিৎসা না পেয়ে যন্ত্রনাময় মৃত্যু বরণ করলো এবং পুরো ঘটনার প্রমাণলোপের উদ্দেশে নির্যাতিতার পিতাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে শবদেহ দাহ করার ঘটনা ও একইসাথে থানায় অভিযোগ করতে না দেওয়ার সাথে চিরন্তন বাংলাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও আলোচকরা আক্ষেপ প্রকাশ করেন। উপস্থিত বক্তারা বলেন,হাথরসের ঘটনায় সারা ভারত শিউরে উঠেছিল; এ তো তারই পুনরাবৃত্তি। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীর অমানবিক প্রতিক্রিয়ায় আজ রাজ্যবাসী বাকরুদ্ধ বলেও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য কামদুনি থেকে পার্ক স্ট্রীট,কোন ঘটনায় দোষীদের চূড়ান্ত শাস্তি হয় নি। এই প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে।
এই ধিক্কার সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সুদীপ্ত দাশগুপ্ত।উপস্থিত ছিলেন মীরাতুন নাহার,মহিলা ফুটবলের জাতীয় কোচ কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার, বাস্কেটবলের জাতীয় কোচ অনিতা রায়,মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, ফুটবল খেলোয়াড় সূর্যবিকাশ চৌধুরী, চিকিৎসক ডাঃ নূপুর ব্যানার্জী,বিশিষ্ট সাংবাদিক, সপ্তাহ পত্রিকার সম্পাদক ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী, কল্পনা দত্ত,আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্ত প্রমুখ গুণীজন।
সভার শুরুতে কল্পনা দত্ত সভার উদ্দেশ্য নিয়ে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন,”নারীকে ‘হয় দেবী না হয় দাসী’ এভাবে না দেখে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে সমাজে গণ্য করতে হবে। এরপর যখনই এমন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে এবং মুখ্যমন্ত্রী তাকে আড়াল করার চেষ্টা করবেন আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের সামনেই ধর্না দেওয়ার কর্মসূচি নেব।”