পার্থ মুখোপাধ্যায়ঃ
দেশের বর্তমান শাসকশ্রেণি সব সময় চাইছে ভারতবাসীরা যেন যেন একে অপরের বিরুদ্ধে পরিধান, খাদ্য, বিশ্বাস, উৎসব, ভাষা ইত্যাদি নিয়ে বিভেদে মেতে থাকে এবং এটই বিশ্বাস করে যে এই পথেই তাদের মঙ্গল। বর্তমান শাসকশ্রেণি এই ধরনের বিভেদ মূলক অবস্থাকেই চিরায়ত রুপ দিতে চায় এবং সেটাকে তারা খোলাখুলি অথবা সঙ্গোপনে সমর্থন করে যায়।
ইতিহাস ও বর্তমানের ভুল ব্যাখ্যা এবং মিথ্যাচারন করে তারা কুসংস্কার, শত্রুতা এবং বদলার বাতাবরন তৈরি করে। আমাদের সম্পদকে ব্যবহার করে যুব সমাজকে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত করার বদলে এক অলীক অতীতের কল্পনাকে সম্বল করে বর্তমানকে রুপ দেওয়ার এক প্রতারনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীজি দেশের বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের কথা বলেন কিন্তু রুঢ় বাস্তব হলো ক্ষমতাসীন দল গৌরবময় বৈচিত্র্যময়তা, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী আমাদের সমাজকে পরিপুষ্ট করেছে, দিশা দেখিয়েছে, তাকেই সমাজের বিভেদ সৃষ্টির কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাবহার করেছে এবং কুপ্রভাবগুলিকে প্রোথিত করেছে।
আমাদের অবশ্যই দ্রুত এবং পরিব্যাপ্ত অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অগ্রগতি করতে হবে সম্পদ সৃষ্টির দ্বারা, যে সম্পদ পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে, সরকারের আয়বৃদ্ধির দ্বারা সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের সংস্থান করতে হবে এবং যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু সামাজিক কুসংস্কার ও কপটতা, হিংসা ও বিদ্বেষমূলক বিভেদের পরিস্থিতি সেই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যবসা বানিজ্য জগতের সাহসী মানুষরা, বিশেষ করে কর্নাটকের মতো শিল্পদ্যোগী রাজ্যের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বলিষ্ঠ মতামত ব্যাক্ত করেছেন এবং প্রত্যাশিত ভাবেই তারা সামাজিক মাধ্যমে প্রত্যাঘাতের শিকার হয়েছেন। এটা আজ অজানা নয় যে দেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পদ্যোগী মানুষ নিজেদের অনাবাসী ভারতীয় বলে ঘোষনা করছেন।
বর্তমান কালের বেড়ে চলা ঘৃনা ও উত্তেজনা ছড়ানোর যুথবদ্ধ প্রয়াস এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি অপরাধের ঘটনাবলী আমাদের সমাজের সকলকে নিয়ে চলার ঐতিহ্যের দূরগামী পরিপন্থী। উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর পারস্পরিক সুপ্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক অথবা শিল্প, সিনেমা সহ প্রতিদিনের দিন যাপনে তার প্রতিফলন আমাদের গৌরবজনক অতীতের দীর্ঘকালীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রাজনৈতিক লাভের জন্যে এই বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করলে তা আমাদের ভারতীয় সমাজ ও মিলিত জাতিসত্বার ভিত্তিকেই আঘাত করতে। এই বৃহত্তর বিভেদমূলক পরিকল্পনা ভারতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বজায় রাখার সুনিয়োজিত প্রয়াস যা সকল বিরুদ্ধ মত ও চিন্তাকে কঠোরভাবে দমনের করতে চায়। রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি রাষ্ট্রশক্তির বলপূর্বক দমনপীড়ন নীতি তাদের আওয়াজকে স্তব্ধ করার প্রয়াসে লিপ্ত এবং সামাজিক মাধ্যমকে এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রতি ২৬শে নভেম্বর সংবিধান দিবস পালন করছে অথচ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমান্বয়ে অকেজো করে সংবিধানের অবমূল্যায়নই করে চলেছে।