অমিতাভ সিনহার বিশেষ প্রতিবেদন; ৫ই জুলাইঃ
জি নিউজ হাউসের DNA চ্যানেলের সংবাদ পাঠক এবং সঞ্চালক রোহিত রঞ্জনকে মঙ্গলবার ছত্তিশগড় পুলিশ উত্তর প্রদেশ থেকে গ্রেফতার করে। রোহিত রঞ্জনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ রাহুল গান্ধী সম্পর্কে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা, যে সংবাদ অত্যন্ত প্ররোচনামূলকও বটে।
কয়েকদিন আগে রাহুল গান্ধীর সংসদীয় এলাকা ওয়াইনাডের কার্যালয়ে বামপন্থী ছাত্ররা( এসএফআই) হামলা করে,আসবাবপত্র ভেঙে দেয়,কাগজপত্র ছিঁড়ে তছনছ করে ও অফিস কর্মীদের মারধোর করে।দেশের বামপন্থী নেতাসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। রাহুলকে এবিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন যে, তিনিএই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না,এটা ছোট ছেলেদের কাজ। তিনি প্রকারন্তরে বুঝিয়ে দেন যে এই কাজ যারা করেছে তাদের তিনি মাফ করে দিয়েছেন। গত ১ জুলাই জি নিউজের ডিএনএ চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয় যে উদয়পুরে কানহাইয়া কুমারের হত্যাকারীদের রাহুল গান্ধী ছোট ছেলেদের কাজ বলে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।এই মিথ্যা ভিডিওটি বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী,সাংসদ ও নেতারা টুইট করেছিলেন।এমনকি বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন ফৌজী রাজ্যবর্ধন রাঠোরও সেস্যাল মিডিয়াতে এই মিথ্যা ভিডিও প্রচার করেছিলেন।একজন প্রাক্তন সেনা অফিসারের কাছে কি এইধরনের আচরণ আশা করা যায়?
শুধু একটা চ্যানেলের একজন অ্যাঙ্কারই নয়,সেই চ্যানেলের প্রোডিউসার,সাংবাদিকসহ সমস্ত স্তরের কর্মীরা এই অতি অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত। এই গোদী মিডিয়ার লক্ষ একটিই দল ও একটিই নেতা।তাদের একমাত্র কাজ ঘৃণার রাজনীতি ছড়ানো ও একটি খবরকে এমনভাবে তুলে ধরা যাতে তাদের নিশানার দল ও তার নেতাকে জনসমক্ষে হেয় করা।ওয়াইনাডের ঘটনাটিকে যেভাবে উদয়পুরের হত্যকান্ডের সাথে জোড়া হয়েছে তাতে এই অ্যাঙ্কার রোহিত রঞ্জন যে গোয়েবলসিয় নীতি অনুসরণ করেন তা পরিষ্কার।কিন্তু সেই চ্যানেলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয় কংগ্রেসের চাপে। জয়পুরে,ঝাড়খণ্ডে,দিল্লীতে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর।কংগ্রেস মিডিয়া ও প্রচার সেলের প্রধান পবন খেরা ভুয়া ভিডিও প্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়েে বলেছেন ভদ্রতাকে দূর্বলতা হিসাবে দেখলে বিজেপি ও গোদী মিডিয়াকে তার মাশুল দিতে হবে। সেই রোহিত রঞ্জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয়, তারই ভিত্তিতে ছত্তিসগড় পুলিশের হাতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে বেশ কিছুদিন আগে রাহুল গান্ধী বলেন ” প্রধানমন্ত্রী বলেন- এমন যন্ত্র নিয়ে আসব যার একদিকে আলু ঢোকালে অন্যদিক দিয়ে সোনা বার হবে।” সেসময় এই বাক্য থেকে “প্রধানমন্ত্রী বলেন” এই অংশটি বাদ দিয়ে প্রচার করা হয় যেন রাহুল গান্ধী আলু থেকে সোনা তৈরীর যন্ত্রের কথা বলছেন।এভাবেই রাহুল গান্ধীকে বার বার জনসমক্ষে ছোট করার খেলা বিজেপি ও গোদী মিডিয়া বিগত কয়েক বছর ধরেই করে আসছে। এ প্রসঙ্গে আরো একটা তথ্য সামনে এসেছে, তা হলো রাহুল গান্ধীকে এভাবে হেয় করার লক্ষে ভুয়ো ভিডিও বানানোর জন্য এই ক’ বছরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে গোদি মিডিয়া এবং আই টি সেল।
এটা পরিষ্কার যে বিজেপি ও তার বশংবদ গোদী মিডিয়া একমাত্র রাহুল গান্ধীকেই ভয় করে।সেইজন্য তাদের টার্গেট একজনই,যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নেই,দেওয়ার চেষ্টা যে হয়নি তা নয়।কিন্তু তাতে তো লাভ হয়নি উল্টে রাহুল গান্ধী তেড়েফুঁড়ে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিদিনই আক্রমণ করে চলেছেন।উদয়পুরের হত্যকান্ড নিশ্চই নিন্দনীয়।কিন্তু আরো বেশী নিন্দনীয় ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করে দেশের মধ্যে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর দেশজুড়ে তীব্র ঘৃণার পরিবেশ তৈরী করা।বিজেপি ঠিক সেই জিনিসটাই করেছে।কিন্তু তারা বুঝতে পারে নি যে এত তাড়াতাড়ি তাদের চক্রান্তের জাল কংগ্রেস ফাঁস করে দেবে।হত্যকান্ডের মূল অভিযুক্ত রিয়াজ আখতারি সঙ্গে রাজস্থানের বিজেপি নেতাদের দহরম-মহরম সোস্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যমে আসার পর পবন খেরা অভিযোগ করেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ সত্য গোপন করেছে।
দুই অভিযুক্ত রিয়াজ আখতারি ও মহম্মদ ঘাউস বিজেপি সংখ্যালঘু সেলের সাথে জড়িত।নিয়মিত বিজেপির দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকত। রিয়াজকে তো বিজেপির কর্মকর্তা হিসাবে উল্লেখ করা হত ফেসবুক পোষ্টে।বিজেপির নেতারাও এখন স্বীকার করে নিয়েছেন যে এই খুনীরা বিজেপির কাছাকাছি ছিল। এমনকি এই রিয়াজের সঙ্গে পাকিস্থানের জঙ্গীগোষ্ঠীর যে যোগ আছে তার তদন্তও আরম্ভ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ইস্যুতে যত দিন গড়াচ্ছে, ততই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বিজেপি ও গোদি মিডিয়া।