চিন ও পাকিস্তান একসাথে লড়তে পারে ভারতের বিরুদ্ধে- রাহুল গান্ধী

অমিতাভ সিংহ

ভারতের জন্য পরিস্থিতি ক্রমশই যে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে তা নিয়ে আবার সাবধান করে দিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন যে চিন ও পাকিস্থান নিজেদের স্বার্থে এক হয়েছে এবং তারা যৌথভাবে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।তাই সীমান্তে কি হচ্ছে তার প্রকৃত তথ্য দেশবাসীকে জানানো দরকার ও এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।এমনিতেই আমাদের এব্যাপারে পাঁচবছর আগে থেকেই তা শুরু করা উচিৎ ছিল।তাই তিনি সরকারকে বিপর্যয় রুখতে এখনই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।গত সপ্তাহে অরুনাচল প্রদেশে তাওয়াং সেক্টরে চিনের সেনারা ভারতের এলাকায় ঢুকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে যা প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করতে বাধ্য হন। তার কয়েকদিন আগে থেকেই রাহুল গান্ধী বার বার সরকারকে সতর্ক করে দিয়পছিলেন এবং সরকার যথারীতি লুকানোর চেষ্টা করেছে। অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে আসার পর রাহুল বলেছিলেন চিন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিন যে ভারতের দুহাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আগেই কব্জা করে নিয়েছে তাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। সরকারের মাতব্বরেরা এর ঠিকঠাক জবাব না দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমনে নেমেছেন। বার বার কংগ্রেস এবিষয়ে সংসদে আলোচনা চাওয়া সত্বেও সরকার তা এড়িয়ে যায়। কারন তা হলে আঙুল উঠবে শাসক দল তথা প্রধানমন্ত্রীর দিকে।তাই এবারের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও সীমান্ত ও চিন সম্পর্কে আলোচনার ভয়ে তা ২৩ তারিখেই শেষ করে দিয়েছে।তার মাঝেই কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম সংসদে মোদীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনের সময় চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের কাছে সীমান্ত প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কিনা? স্বভাবতই সরকারপক্ষ তা এড়িয়ে যায়। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন চিন আমাদের জমি দখল করে নিচ্ছে,এখন তা নিয়ে আলোচনা না হলে কবে হবে?এপ্রসঙ্গে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সোনিয়া গান্ধি বিজেপি পরিচালিত সরকারের তীব্র সমালেচনা করেন।তিনি প্রশ্ন তোলেন কি করে চিন ভারতকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমন করার সাহস পায়? প্রধানমন্ত্রী মোদীর তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন বৈদেশিক শক্তির ভয় থাকলে তা জাতীয় স্বার্থে সবাইকে নিয়ে তা মোকাবিলা করা উচিৎ,তা না করে মোদী সারা দেশে বিভেদমূলক রাজনীতি করছেন ও ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।দেশের সীমানায় নিয়মিত ও ধারাবাহিক অনুপ্রবেশের ঘটনা কয়েকবছর ধরেই ঘটে চলেছে যা দেশের মানুষের কাছে গভীর উদ্বেগজনক। দেশের মানুষ আমাদের সতর্ক সেনাবাহিনীর সাথে আছে যারা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে চিনা সেনাদের বিতাড়িত করেছে। অথচ সরকার একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে তা সংসদে আলোচনার দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেছে।তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে যখনই দেশের সামনে কোন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা দেখা যায় তখনই তা দেশের সংসদে বিতর্কের আয়োজন করে যাতে সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ তার বিশদ জানতে পারেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।বিতর্কের ফলে বহু সমস্যার ওপর যেমন আলোকপাত করা যায় তেমনি তা নিরসনে একাধিক মত থেকে সুবিধাজনক রাস্তাটি বেছে নেওয়া যায়।১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় বিরোধীদের দাবী অনুযায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সংসদে বিতর্কের আয়োজন করেছিলেন ও বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা ধৈর্য ধরে শুনেছিলেন।কিন্তু বর্তমান সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতা দেশের মানুষের প্রতি অপমান।তিনি প্রশ্ন করেন ভবিষ্যৎ এ চিনা অনুপ্রবেশ রোধে সরকারের পরিকল্পনা কি তা জানানো হোক।চিনকে রুখতে পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন রপ্তানির থেকে আমদানী অনেক বেশী হওয়ায় অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা অনেকটাই পেছিয়ে পড়েছি চিনের থেকে।তাই একটা খোলাখুলি আলোচনা জাতীয় মতৈক্যকে প্রতিষ্ঠা করে।তাই সরকারের কর্তব্য প্রতিদিনের অগ্রগতি জনমানসে নিয়ে এসে তাদের পরিকল্পনা ও কর্মকান্ড জ্ঞাত করা।তা না করে সরকার ও বিজেপি বিভেদমূলক রাজনীতি অনুসরণ করে, ঘৃণা ছড়িয়ে ও সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে কাঠগোড়ায় তুলতে চেষ্টা করছে।তার ফলে দেশের সব শ্রেণীর মানুষকে এক করে সঙ্ঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক শক্তির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্চে।এই বিভেদই আমাদের দূর্বল করে দিচ্ছে। মজার বিষয় এই যে বিতর্ক করতে না দিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার বিরোধীদের লক্ষবস্তু করে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছে ও মানুষের প্রশ্ন করার আওয়াজ তোলা বা সংবাদমাধ্যমে তা পরিবেশন করা স্তব্ধ করা হচ্ছে।এটা যে শুধু কেন্দ্র করছে তা নয়,যেসব রাজ্যে শাসকদল অর্থাৎ বিজেপি ক্ষমতায় সেখানেও একই ব্যাপার ঘটে চলেছে। বিচারবিভাগের ওপর অস্বাভাবিক ও অবাঞ্ছিত চাপ দেওয়া আরম্ভ হয়েছে।একইসঙ্গে ক্রমাগত অর্থনৈতিক অধোগতি,যুবকদের জন্য চাকুরির ব্যবস্থা না করতে পারা ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণ করা,নোটবন্দীর ফলে উদ্ভূত সমস্যা ও ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি চালু করার বিষয়গুলি তুলে ধরেন।পরিশেষে বলা যেতে পারে সীমান্ত সংঘাতে আমাদের দেশকে দূর্বল সরকার থাকার কারনে কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে তা এখনি বলা সম্ভব নয়।এই সরকার আসার পর পশ্চিমে লাদাখ ও পূর্বে অরুনাচলপ্রদেশে চিনা অগ্রাসন প্রতিহত করতে ভারত যে ব্যর্থ হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।চিনের মোকাবিলায় ভারত যে সামরিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা নিতে কোন কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে নি তা আজ প্রমানিত। প্রকৃত বিরোদী ও দায়িত্বশীল দল হিসাবে কংগ্রেস এর গঠনমূলক সমালোচনা করেছে,এটাই প্রত্যাশিত। এর উত্তরে সরকারপক্ষ তথ্য ও যুক্তি সহকারে প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ জবাব দেবে তাহাই সংগত ও প্রত্যাশিত। কিন্তু মোদী সরকার প্রথম থেকেই সমালোচনার সদুত্তর দেওয়ার বদলে তা পাশ কাটিয়ে গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য রাখলেও তা কি কখনো জনপ্রতিনিধিদের তর্কবিতর্কের বিকল্প নয় তা সবাই জানে।একসময় দেশের প্রধানমন্ত্রূ মোদীও মিথ্যভাষণ দিয়ে বলেছিলেন কেউ বাইরে থেকে সীমান্ত পেরিয়ে দেশের ভুখন্ডে ঢোকে নি।তাই আজ আর উক্ত মন্ত্রীদ্বয়ের বিবৃতিকে মান্য করার প্রশ্নই ওঠে না।তাই এ ব্যাপরে একটা পরিণত রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন অতীব জরুরি যা একসময় কংগ্রেস করতে সক্ষম হয়েছিল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *