স্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মোদি সরকার

(সৌরভ কুন্ডুর প্রতিবেদন), ১৫ জুন’২৩ঃ

একদম সাম্প্রতিক দুটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাই বা যেগুলি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে মোদী সরকার কিভাবে, দিনের পর দিন আমাদের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে।

1️⃣ টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডরসি নিজে গতকাল একটি সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করলেন যে মোদি সরকার কিভাবে টুইটারকে হুমকি দিয়ে কৃষকদের আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছিল, তবে তাতে কিন্তু অতটাও অবাক হওয়ার মত কোন উপাদান নেই। কারণ আপনারা তো বৎসরাধিক কাল ধরে প্রত্যক্ষ করেছেন, কিভাবে কৃষকদের নির্দয়ভাবে মারধর করা হযেছিল, লাঠিচার্জ করা হয়েছিল এবং ধারালো কাঁটাতারের বেড়া, পেরেক, সিমেন্টের দেয়াল ব্যবহার করে হয়েছিল তাদের শান্তিমূলক প্রতিবাদ ঠেকাতে।

যার ফলশ্রুতি হিসেবে :

🔸 ৭৫০ জন কৃষক বিক্ষোভে মারা যান।

🔸মোদি সরকার সংসদে এই মৃত কৃষকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন পর্যন্ত করেনি।

🔸কৃষকরা এখনও তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে করা মিথ্যা মামলা লড়ছে।আর তাই কৃষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যারা টুইট করেছেন, তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টগুলি নিষিদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রের নৃশংস শক্তির ব্যবহার তো তুলনায় কিছুই নয় যা স্বৈরাচারী এই মোদী সরকার মানুষের প্রতিবাদকে বুলডোজ করতে ব্যবহার করেছিল। এবার দ্বিতীয় ঘটনা :

2️⃣ শোনা গেছিল, CoWin অ্যাপের ডেটা এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোড়া যা নাকি লঙ্ঘন করা একপ্রকার অসম্ভব। তাহলে নাগরিকদের যাবতীয় গোপন তথ্যের সাথে কি উপায়ে গুরুতরভাবে আপস করা হল ? তাও, এ ঘটনা কিন্তু মোটেই প্রথমবার হয় নি।

🔸২০১৮ – এর জানুয়ারী মাসে ওয়ারলড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট, ২০১৯ অনুযায়ী, “সবচেয়ে বৃহদাকার ডেটা লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল ভারত, যেখানে সরকারি আইডি থেকে সমস্ত ডেটাবেস, আধার ইত্যাদি একাধিক ডেটা লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে এই দেশ বা বলা যায় ১.১ বিলিয়ন নিবন্ধিত ভারতীয়ের সম্ভাব্য সমস্ত রকমের রেকর্ডের সাথে আপস করা হয়েছে।

🔸 আপনাদের অবগতির জন্য জানাই, ২০১৬ সালের অক্টোবরে একটি রিপোর্ট সবার সম্যক আনা হয়েছিল যাতে জানা যায় একটি ম্যালওয়্যার ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রধান ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির থেকে ৩.২ মিলিয়ন ডেবিট কার্ড আপোস করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাঙ্কগুলি কারা জানেন ? আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের টাকা যে অধিকাংশ ব্যাঙ্কগুলিতে গছছিত থাকে সেগুলি অর্থাৎ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই), আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি, ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক।

🔸 ২০২২ সালের নভেম্বরে AIIMS হাসপাতালে সাইবার আক্রমণ হল আরেকটি উদাহরণ যেখানে আবার মোদি সরকার আমাদের ডেটা সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর অদ্ভুতভাবে মাত্র কয়েকদিন আগে অর্থাৎ ৬ই জুন এইমস-এ আবার আরেকটি হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল!

এখন তো আমরা সবাই বুঝতে পারছি, কিভাবে-🔹মোদি সরকার, সুপ্রিম কোর্টে মৌলিক অধিকার হিসাবে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের বিরোধিতা করেছিল।

🔹 মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছিল যে আধার ডেটাবেস একদম নিরাপদ এবং যা নাকি ৫ ফুট পুরু এবং ১৩ ফুট উঁচু দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত! (হাস্যকর কিনা!)

🔹 আপনাদের জানাই, মোদি সরকার আবার একটি ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরি করার চেষ্টা করেছে এবং ভারতীয়দের গোপনীয়তা রোধ করতে নাকি একটি ‘ডিএনএ বিল’ তৈরি করছে!

আমরা ভারতীয়রা কি বস্তুতপক্ষে বিজেপির “বিগ ব্রাদার” সিন্ড্রোমের জন্য ভুগছি ?

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *