ঝালদা পৌরসভায় রাজ্য সরকারের নোটিফিকেশনের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ — ঝালদা নিয়ে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ কংগ্রেসের

নিজস্ব সংবাদদাতা, কোলকাতা, ৫ ই ডিসেম্বর’২২ঃ

আস্থা ভোটে গত ২১ শে নভেম্বর তৃণমূল পরাজিত হওয়ার পর গত ২ রা ডিসেম্বর রাতারাতি নোটিফিকেশন জারি করে ঝালদা পৌরসভায় ‘চেয়ারম্যান’ নিযুক্ত করে রাজ্য সরকার। সোমবার সেই নোটিফিকেশনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করলেন মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্ট।

চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ঝালদা পৌরসভার ১২ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল ৫ টি করে আসনে জয়ী হয় এবং নির্দল প্রার্থীরা ২ টি আসনে জয়ী হন। ওই দুই জন নির্দল প্রার্থীই ছিলেন কংগ্রেস সমর্থিত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঝালদার পৌরবোর্ড গঠন করতে চলেছিলো কংগ্রেস। কিন্তু বোর্ড গঠনের আগেই কংগ্রেসের নির্বাচিত কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হন এবং কার্যত পিছনের দরজা দিয়ে পৌর বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। পরবর্তী সময়ে খুন হওয়া তপন কান্দুর আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আবার সেখানে কংগ্রেস প্রার্থীই জয়ী হন। ফলতঃ ১২ সদস্য বিশিষ্ট ঝালদা পৌরসভায় ২ জন নির্দল সদস্যের সমর্থন সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসের শক্তি এই মুহূর্তে ৭।

উল্লেখ্য তপন কান্দু-হত্যার পিছনে অন্যতম কারণই ছিলো যেন তেন প্রকারে তৃণমূলের বোর্ড গঠনের চক্রান্ত। নিয়মানুযায়ী পৌর বোর্ডের মেয়াদ ছয় মাস পূর্ণ না হলে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না, তাই সেই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস ঝালদার তৃণমূলের পৌরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলো। কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পৌর বোর্ড ওই অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি এড়িয়ে যাবে বলে আদালতের দ্বারস্থ হয়। কোলকাতা হাইকোর্টে এনিয়ে আইনি লড়াইয়ের পর মহামান্য কোলকাতা হাইকোর্টের রায় অনুসারে গত ২১ শে নভেম্বর ঝালদা পৌরসভায় আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই ভোটাভুটিতে হার নিশ্চিত জেনে তৃণমূলের ৫ জন কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আহূত সভায় অনুপস্থিত থাকেন। এবং ৭-০ ভোটে ঝালদা পৌরসভার তৃণমূলের পৌরপ্রধান অপসারিত হন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঝালদায় পৌর বোর্ড গঠনের তৎপরতা শুরু হয় এবং নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার ও নির্দল কাউন্সিলর শীলা চ্যাটার্জীর স্বামী কালিপদ চ্যাটার্জী সরাসরি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলে যোগদান করেন।

কিন্তু দেখা গেলো যেখানে ৭-০ ভোটে কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে তৃণমূল পরাজিত হয় এবং তার পরবর্তী সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের উদ্যোগে সরকারি ভাবে বোর্ড গঠন ছিলো সময়ের অপেক্ষা। সেখানে হঠাৎ করে গত ২ রা ডিসেম্বর’২২ তারিখে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নোটিফিকেশন জারি করে ঝালদা পৌরসভায় ‘চেয়ারম্যান’ নিযুক্ত করা হলো। উল্লেখ থাকে যে গত ৩ রা ডিসেম্বর নতুন পৌর বোর্ড গঠনের লক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হবার জন্য দিন স্থির ছিলো। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনকই শুধু নয় বরং চরম অগণতান্ত্রিকও বটে। এর প্রতিবাদে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল সি.ভি.আনন্দ বোস কে সমস্ত বিষয়টি জানিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় মাননীয় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের আর্জিও জানান। পাশাপাশি পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাত’র নেতৃত্বে এই ঘটনার প্রতিবাদে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি পথে নেমে লড়াইও দীর্ঘ সময় ধরে সংগঠিত হয়ে চলেছে। সোমবার প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এবং মধ্য কোলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটির ব্যবস্থাপনায় রাজ্যসরকার এবং তৃণমূলের এই গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে কোলকাতায় রাজভবনের ফটকের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী গ্রহণ করা হলে পুলিশ কংগ্রেসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর শারিরীক বল প্রয়োগ করে এবং তাঁদের গ্রেফতার করে। আজকের এই কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন মধ্য কোলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুমন পাল, উত্তর কোলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায় চৌধুরী, দক্ষিণ কোলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় সহ প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যান্য নেতৃত্ব এবং শাখা সংগঠনের নেতৃত্বরা।জননেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন,” ঝালদায় গণতন্ত্র রক্ষার যে লড়াইয়ে কংগ্রেস নেমেছে তা থেকে কোনো পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস পিছিয়ে আসবে না; গণতন্ত্র রক্ষার এই লড়াই জারি থাকবে।”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *