-পার্থ মুখোপাধ্যায়ঃ
বিজেপি-নেত্রী নুপুর শর্মা কিছুদিন আগে একটি জাতীয় টিভি চ্যানেলের বিতর্কে অংশগ্রহণ করার সময় বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কিছু কুরুচিকর এবং অত্যন্ত বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে নুপুর শর্মা বিজেপির একজন অন্যতম জাতীয় মুখপাত্রও। তার সেই সব কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে শুরু করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, নুপুর শর্মার করা মন্তব্যগুলি প্রসঙ্গে দল হিসাবে বিজেপি কোনো রকমেরই মন্তব্য করেনি, দোষ বা ভুল স্বীকার তো দূরের কথা। এর ফলে এই মতই প্রতিষ্ঠা পায় যে নুপুর শর্মা বিশ্বনবী সম্পর্কে যে সব অনভিপ্রেত মন্তব্যগুলি করেছেন, তা আসলে বিজেপি তথা সঙ্ঘীয় সর্বাঙ্গীণ ও সামগ্রিক মনোভাবেরই পরিচায়ক।
ইতিমধ্যে নুপুর শর্মার করা মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে দেশে এবং আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে বিদেশেও। স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, বিশেষ করে কাতার, সৌদি আরব, ইরান প্রভৃতির মতো উপসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তাদের সরকারি দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে এ ব্যাপারে তাদের দেশের সরকার এবং জনগনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়েছে। বিজেপি বা মোদী সরকার এতোকিছুর মাঝেও চুপচাপ ছিলো, কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, কিন্তু অবস্থা আরও ঘোরালো হয়ে উঠলো যখন সেই সব দেশে ভারত বিরোধী তীব্র প্রচার শুরু হলে। এমনকি, সেই সব দেশে ভারতীয় পন্যসামগ্রীর বয়কটের ডাকও দেওয়া হলো। আমরা জানি, এই সব দেশগুলিতে ভারতীয় পণ্যের খুব ভালো বাজার আছে। এখবরও আসতে থাকে যে এই সব দেশগুলির বিভিন্ন বিপনি সংস্থা থেকে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এর পরেই মোদী সরকার বুঝতে পারে বিপদ আসছে দেশের বানিজ্য তথা সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির ওপর। এছাড়াও, দশকের পর দশক ভারত তার কূটনৈতিক ক্ষমতাবলে এই উপসাগরীয় মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে এক বিশেষ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মার অনভিপ্রেত মন্তব্য শুধু সেই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্থ করেনি, বৈদেশিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এক রড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।
এতো কিছু ঘটার পর, বিজেপি চক্ষু লজ্জার খাতিরে নুপুর শর্মাকে সাময়িক সাসপেন্ড করেছে মাত্র। আমরা জানি নুপুর শর্মার ট্যুইটার হ্যান্ডেল ফলো করেন এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিজেপির উচ্চ পদাধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এমন কি সাংবিধানিক পদেও আসীন রয়েছেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জনমানসে প্রশ্ন উঠছে এমন গর্হিত কাজ করা সত্বেও নূপুর শর্মার মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেন কোনো প্রকারের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলোনা, এতো দিন পরেও। এমন ঘটনা যদি ঘটতো, যেখানে চরিত্রের ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন হতো, তখন সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি একাধিকবার। এমন ঘটনা এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার অবস্থান, সাংবিধানিক ভাবে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটির সামনেই একটা প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে, মোদী সরকারের বদান্যতায়।