আমার বাবা উত্তরাধিকার সূত্রে শহীদ হয়েছেন, সম্পদের অধিকারী হন নি, মোদী তা বুঝবেন না : প্রিয়াঙ্কা

শুভাশিস মজুমদার

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৫ এপ্রিল মোরেনায় একটি সমাবেশে দাবি করেছিলেন যে রাজীব গান্ধি তাঁর মা ইন্দিরা গান্ধির হত্যার পর “তাঁর সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য আগে বিদ্যমান উত্তরাধিকার আইন বাতিল করেছেন”।”উত্তরাধিকার করের” উপর সাম্প্রতিক আক্রমণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাল্টা জবাব দিয়ে, আবেগ আপ্লুত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ২ মে, বৃহস্পতিবার, মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলায় বলেছেন, “আমার বাবা (রাজীব গান্ধি) উত্তরাধিকার হিসাবে সম্পদ পাননি, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে শহীদ হয়েছেন। ““আমার ১৯ বছর বয়সে আমার বাবার দেহাবশেষ নিয়ে এসেছিলাম, তখন আমি এই দেশের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। বাবাকে পাঠিয়েছি (দেশের কাজে), তাঁকে রক্ষা করা (দেশের) কাজ। …. ভারতীয় তিরঙ্গায় মোড়ানো তাঁর (দেহের) টুকরো ফেরত এসেছে। আমি বুঝি শাহাদাত মানে কি। যে রাগটা আমি এখন বুঝতে পারছি, আমরা যাঁদের ভালোবাসি তাঁদের প্রতি এই ধরনের রাগ (পড়ুন অভিমান) অনুভূত হয়।”প্রধানমন্ত্রী পদের গরিমা রক্ষা না করে সাম্প্রতিক প্রচার সভা গুলিতে, নজিরবিহীন ভাবে, মোদী লাগাতার মিথ্যা, বিতর্কিত এবং নিম্নমানের বক্তব্য রেখে চলেছেন বলে বিরোধী দলগুলি, এমনকি দেশবাসীর একটি বড় অংশ মনে করে। সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে যা প্রতীয়মান। এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য সরাসরি মোদীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে (সাহস না দেখিয়ে !) বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে। আবার, পাশাপাশি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের কাছেও কিছু কৈফিয়ত চেয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর রোষের হাত থেকে বাঁচতে নির্বাচন কমিশন ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে।প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধি এবং সামগ্রিকভাবে গান্ধি পরিবারের উপর কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে ২৫ এপ্রিল মোরেনায় একটি সমাবেশে মোদী দাবি করেছিলেন যে রাজীব গান্ধি তাঁর মা ইন্দিরা গান্ধির হত্যার পর “তাঁর সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য আগে বিদ্যমান উত্তরাধিকার আইন বাতিল করেছিলেন।” মোদীর এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা এবং ভোটে জেতার লক্ষ্যে মোদী মরিয়া হয়ে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মানিত করতেও দ্বিধাবোধ করেননি, বলেই বুঝিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। মোদীর ভাষণের জবাবে আক্রমণাত্মক প্রিয়াঙ্কা ২ মে বলেন, “মোদীজি বুঝতে পারেন না যে আমার বাবা উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাননি, উত্তরাধিকারসূত্রে শহীদ হয়েছেন।” আবেগ আপ্লুত প্রিয়াঙ্কা রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা নিজেদের ছেলেদের সীমান্তে (ফৌজে) পাঠিয়েছেন বলে এই অনুভূতি বুঝতে পারেন। কিন্তু মোদীজি এই অনুভূতি বুঝবেন না, একই অনুভূতি আমার হৃদয়ে রয়েছে।”দৃশ্যত আবেগ বিহ্বল উপস্থিত জনতা ঘন ঘন স্লোগান দিতে থাকে, “রাজীব গান্ধী অমর রহে”, “ইন্দিরা গান্ধী অমর রহে”, “রাহুল গান্ধি জিন্দাবাদ”, “প্রিয়াঙ্কা গান্ধি জিন্দাবাদ”। প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন,”সীমান্তে জওয়ানরা যখন শহীদ হন, তাঁদের পরিবারের এবং পুলওয়ামায় শহীদ জওয়ানদের পরিবারের সদস্যদের মানসিক অনুভূতি আমি বুঝতে পারি। কারণ ওই একই অনুভূতি আমারও আছে।এখন বাতিল হওয়া ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমের বিষয়ে, তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বলেছে এটি একটি ভুল (অসংবিধানিক) স্কিম… তালিকাটি বেরিয়ে এসেছে এবং দেখুন কারা তাদের (বিজেপি) দান করেছে… মনে রাখবেন যে গুজরাটে একটি সেতু ভেঙে পড়েছিল, বেশ কিছু মানুষ নদীতে ভেসে গেছেন। যিনি সেতুটি নির্মাণ করেছেন তিনি অর্থ দান করেছেন (বিজেপিকে)।”এদিকে, ছত্তিশগড়ের কোরবার চিরমিরিতে, প্রিয়াঙ্কা অভিযোগ করেছেন যে মোদী বেসরকারীকরণ, শ্রমিক – শোষণের জন্ম দিচ্ছেন এবং প্রশ্ন করেছেন, ” লোকেরা বিনামূল্যে রেশন চান, না কি চাকরি চান ?” তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, (ক্ষমতায় এলে) ৩০ লক্ষ সরকারি শূন্যপদ পূরণ করা হবে।প্রিয়াঙ্কা স্মরণ করেছেন কীভাবে তাঁর দাদি ইন্দিরা গান্ধি কয়লাক্ষেত্র জাতীয়করণ করে চাকরি তৈরি করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, “তারা (বিজেপি) ৫ কেজি রেশন এবং ১২০০ টাকা দিচ্ছে। আপনারা কি চান? চাকরি নাকি রেশন? আপনারা (নিশ্চয়) একটি চাকরি বেছে নেবেন কারণ এটি আপনাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলে।””রেশন শেষ হয়ে গেলে, আপনি আবার সরকারের কাছে চাইবেন। এটি আপনাকে নির্ভরশীল করে তুলবে। এটাই পরিকল্পনা। তারা (বিজেপি) বারবার ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাইছে। তাদের বলুন আপনাকে চাকরি দিতে এবং ৩০ লাখ সরকারী শূন্যপদ পূরণ করতে।”বিশেষভাবে, কোরবার জন্য প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমরা একটি জরিপ করব এবং একটি নতুন কয়লা সম্পর্কিত শিল্প খুলব। খনির কারণে ধ্বংস হওয়া জমি সমতল করে মানুষকে পুনর্বাসিত করব। আমরা রেল যোগাযোগ স্থাপন করব এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য বাজারের হারের তুলনায় আপনাকে চারগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করব।”হাসদেও বনায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, “হাসদেও প্রতিবাদের জায়গাটি তাদের (বিজেপি) দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তারা ১৫,০০০ গাছ কেটেছে। কোটিপতিরা আপনার জল, জঙ্গল, জমি নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু আপনি কিছুই পাচ্ছেন না।”প্রিয়াঙ্কা গান্ধির এই ভাষণ সামাজিক মাধ্যমে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং কয়েক লাখ ভিউ পেয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *