তিস্তা শেতলবাদের জামিন এবং আরো কিছু কথা

-শুভাশিস মজুমদারের বিশেষ প্রতিবেদন, ৫ সেপ্টেম্বরঃ

অবশেষে অন্তর্বর্তী জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সাথে সম্পর্কিত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তাঁর অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার একদিন পরে তিস্তা শেতলবাদ শনিবার কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন। গত ২৬শে জুন গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি আমেদাবাদের সবরমতি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে, জামিনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য তাঁকে দায়রা জজ ভি এ রানার কাছে হাজির করা হয়েছিল। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর অমিত প্যাটেল বলেছেন, “দায়রা আদালত সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারা আরোপিত শর্তের উপরে আরো দুটি শর্ত আরোপ করেছে। দায়রা আদালত অভিযুক্তকে ২৫,০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড দিতে এবং তার পূর্বানুমতি ছাড়া ভারত ত্যাগ না করতে বলেছে।”

এর আগে, সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এই মামলায় অন্তর্বর্তী জামিনে মানবাধিকার ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তিস্তা শেতলবাদ অভিযোগ করেন যে ২০০২ সালে দাঙ্গার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গুজরাট প্রশাসনের দ্বারা তিনি নির্যাতিতা।

তিস্তা প্রায় ১০ সপ্তাহ কারাবন্দি থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোন চার্জশিট জমা পড়েনি এখনো। প্রধান বিচারপতি ইউ.ইউ. ললিত এবং আরো দুই বিচারপতি এস. রবীন্দ্র ভাট এবং সুধাংশু ধুলিয়া – র বেঞ্চ এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিস্তাকে নিয়মিত জামিনের জন্য গুজরাট হাইকোর্টের কাছে যেতে বলা হয়েছে।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় খুন হওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি এবং সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ যৌথ ভাবে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে আর্জি জানান যে, ওই দাঙ্গায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেওয়া ক্লিনচিট খারিজ করুক আদালত। গত ২৪ জুন জাস্টিস খানউইলকরের বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদনকে ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেয়। পাশাপাশি তিস্তার ভূমিকারও সমালোচনা করে। প্রকৃত রায়দানের মধ্যে তিস্তাদের বিরুদ্ধে এই অতিরিক্ত মন্তব্য করা নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনাও হয়। ঘটনাচক্রে ২৫ জুন, পরদিনই তিস্তার বিরুদ্ধে আমদাবাদের থানায় এফআইআর দায়ের হয় এবং গুজরাটের এটিএস মুম্বই এসে গ্রেফতার করে তিস্তাকে। ২৬ জুন তাঁকে হাজির করানো হয় মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। সেখানে তিস্তা বলেন, ‘‘আমাকে আটক করা এবং গ্রেফতার করা বেআইনি। আমি প্রাণের ভয় পাচ্ছি। আমাকে শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছে। আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমি এক জন মানবাধিকার কর্মী। এটা সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক মামলা। আমি এতে সহায়তা করছি।’’ তিনি আদালতের কাছে জামিনেরও আবেদন করেন।

               প্রসঙ্গত, ২৫ জুনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি সাক্ষাৎকারে তিস্তার বিরুদ্ধে ২০০২ গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে পুলিশের কাছে ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যও সমালোচিত হয়েছে।

এদিকে ২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, সর্বোচ্চ আদালত তিস্তার জামিন আবেদনের শুনানি ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত করার জন্য হাইকোর্টের ৩ আগস্টের সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করেছিল, বিশেষত যখন অভিযুক্ত একজন মহিলা।

     গুজরাট সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সলিসিটর-জেনারেল তুষার মেহতা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে এই জামিনের বিরোধিতা করলেও আদালতে তা ফলপ্রসূ হয়নি।

         অপর দিকে, তিস্তার পক্ষের আইনজীবী কপিল সিবাল কোর্টে উল্লেখ করেছেন যে তিস্তার দেওয়া তথ্য উপাদানগুলি দাঙ্গা মামলায় অনেক অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে এবং ১২৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছিল।

                 কংগ্রেস, বাম সহ অন্যান্য বিরোধী দল তিস্তা শেতলবাদের জামিনকে স্বাগত জানিয়েছে।

                 তিস্তার জামিনে সহ-অভিযুক্ত আর বি শ্রীকুমারের পরিবার বলেছে যে তাঁদের “আশা” জাগছে। গুজরাটের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি-র মেয়ে, দীপা সৃজিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন: “এই রায় আমাদের অনেক আশা দেয়।”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *