সুমন রায় চৌধুরী
দোসরা মে,২০২১,নারদা-সারদা-রোজ়ভ্যালি-আমফান-কোভিড-টেট ভেদ করে ফুটে উঠেছে একটি প্রতিস্পর্ধি মুখ, কেড়ে নিচ্ছে ফ্ল্যাশলাইটের সমস্ত আলো। জন্ম নিচ্ছে নতুন সম্ভাবনার, বাংলার রাজনীতি যাকে বাইনারি বলে অভিহিত করে। যে আবহের রচয়িতা আজকের বাংলার শাসক দল।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যখন মাথা চাড়া দেয় ভেসে যায় যুক্তিরা। ঠিক যেভাবে ৮০/২০ তত্ত্বে কুপোকাত উত্তর প্রদেশে অখিলেশের যাবতীয় চাল। বাংলার অবস্থা আরও ভয়াবহ, এখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জিতে আসা সরকার গণতান্ত্রের প্রতিটি স্তম্ভের মূলে কুঠারাঘাত করছে। দাবিয়ে রাখতে চাইছে বিরোধী পরিসর, এই একটি ক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্য যেন একই মুদ্রার দুটি পিঠ।
এ চে তেমেলকুরান তাঁর বই “টার্কি- ইন্সেন & মেলানকোলি” তে এই বিষয়টিই বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কীভাবে একনায়কতন্ত্র ধ্বস্ত করতে পারে নাগরিক অধিকার তার মূর্ত প্রতীক আজকের বাংলা। ভোট লুঠ, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, নুব্জ প্রশাসন, দল ভাঙানোর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এখন জেলায় জেলায় খুনের প্রতিযোগিতা।
বেসিক ডেমোক্রেসির তত্ত্ব উড়িয়ে ক্ষমতা কে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়ে মূল ক্ষমতা কে কেন্দ্রীভূত রাখতে না পারার অবশ্যম্ভাবী ফল আজকের বাগটুই-চোপরা।
“অ্যাবসোলিউট পাওয়ার কোরাপ্টস অ্যাবসোলিউটলি” বাংলার রাজনীতি তে জন অ্যাক্টনের এই উক্তির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিফলন ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষন নিয়ে যে উক্তি করেছেন তাও ওই বিধ্বংসী ক্ষমতার আস্ফালন। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর বাংলায় বৈধ ভোট প্রায় উঠেই গেছে। পুরসভার ভোট গুলিতে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে, বিবেকানন্দ বলেছিলেন ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে বেরুক নতুন ভারত, আমরা দেখলাম শৌচালয় বেরিয়ে আসছে বাঙালির মেরুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রদত্ত ভোট বা সংশ্লিষ্ট পার্টের ভোটার সংখ্যাও ছাপিয়ে গেছে ভোটের ফল কে, বীভৎস উন্নয়নের ফলশ্রুতি।
বালি, পাথর, কয়লা, পুকুর ভরাট, পঞ্চায়েত সব ক্ষেত্রেই লাখো টাকার আদানে সমৃদ্ধ ‘খাদান’। সব সেঁচে টাকা তোলার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাতে ভয় হয় কোন দিন গোটা মন্ত্রীসভাই না জেল থেকে পরিচালিত হয়।
জেল থেকে ভোটে লড়ার সংস্কৃতিরও পথিকৃত তৃণমূল।
বছর বছর গ্লোবাল সামিট হচ্ছে বটে তবে তা রাজ্যের বাণিজ্যিক চিত্র কে ‘গ্লো’ করছে কি?
শিক্ষক রাস্তায় বসে, তার চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। রাজ্যের পুলিশি ব্যাবস্থা ভেঙে পড়েছে, প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি খুন হচ্ছে, আগুনে পুড়ে মরছে শিশু ও নারী। রাজ্যে তখন কবিতা উৎসব হচ্ছে! ভাতাপ্রাপ্ত কবিদের কলম থেকে নেমে আসছে না কোনো প্রতিবাদের স্বর। মানবাধিকার, মহিলা ইত্যাদি কমিশান নিখোঁজ, সব মোম বাতিতে আজ মর্চে ধরেছে আর বুদ্ধিজীবীরা ভাতঘুমে।
আদালতের দ্বারস্থ না হলে ন্যুনতম সুরক্ষাও সুনিশ্চিত নয়। মগরাহাট-বগটুই-চোপরা- পানিহাটি যেখানেই তাকাব সেখানেই তৃণমূল বনাম তৃণমল। এ ও কি গৃহযুদ্ধেরই পূর্বাভাস নয়?
মন্ত্রী ও মুখপাত্র পরস্পরকে ভারাটে সৈনিক বলছে! কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৈরি হওয়া দলটির কি আত্মা বলে কিছুই নেই তবে? শ্রীলঙ্কা-তুর্কি-পাকিস্তান দেখিয়েছে গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্যাঙাততন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে তার ফল হয় মারাত্মক। অতএব সাধু সাবধান, এখন কিন্তু দুয়ারে বিপদ…