ইন্দিরার শাহাদাত বরণ এবং সেকুলারিজম

—অশোক ভট্টাচার্য ( রাজা)

‘অপারেশন ব্লু স্টার’ এর পর… দেশের আম পাব্লিকের যে আশঙ্কা ছিলো;যে সহজ কথা আমার আপনার বোঝার ক্ষমতা আছে,তা তিনি বুঝতে পারেননি এমনটা তো নয়।

তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপদেষ্টা মণ্ডলী, গোয়েন্দা বিভাগ, ‘র’ এর কর্তাব্যক্তিরা বারম্বার তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের তালিকায় যেন কোনো শিখ ধর্মাবলম্বী না থাকেন,থাকলেও যেন সেই বিশেষ ধর্মের নিরাপত্তা রক্ষীকে তিনি সরিয়ে দ্যান।

তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বললেন, ” এ দেশ বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মের মানুষের দেশ।… সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি কেবল নিজের জীবন বাঁচানোর কারণে সন্দেহের বশে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বিরূপ আচরণ করতে পারব না..”

তিনি মনে করলেই তাঁর অঙ্গুলি হেলনেরও প্রয়োজন ছিলো না,তাঁর চোখের ইশারাতেই সতবন্ত সিং, বিয়ন্ত সিং দের সরে যেতে হতো তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের তালিকা থেকে।

সকলেরই আশঙ্কা ছিলো। ইন্দিরাজির মতো প্রাজ্ঞ নেত্রী নিজেও কি বোঝেন নি? যে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই করতে গিয়ে অকাল তখতে বাধ্য হয়ে সেনা প্রবেশ করাতে হয়েছিলো; সে লড়াই লড়তে গিয়ে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে ধর্মীয় অন্ধতার নৃশংস থাবায়!

আজকের বি জে পি, সেদিনের জনসংঘের বহু পুরানো রাজনৈতিক সাথি অকালি দলের মদতপুষ্ট জঙ্গি ভিদ্রানওয়ালে ও তার সঙ্গীদের পাপ পদচারণা থেকে বাঁচাতেই হবে পবিত্র স্বর্ণমন্দিরকে…এই দায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই ছিলো তাঁর।

সে দায় প্রধানমন্ত্রীর আসনের প্রতি দায়, বহুত্ববাদ, এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য এবং পবিত্র সংবিধানের প্রতি দায়।

যে দায় থেকেই সতবন্ত, বিয়ন্ত রা রয়ে যায় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী রূপে, আর তিনি…?

দেশপ্রেমের মানে যে বড় বড় লেকচারবাজি নয়…তা নিজের জীবনের বিনিময়ে বোঝালেন তিনি।

“অক্টোবরের একতিরিশ

উননিশো চুরাশি,

বুধবার দুপুরে কি নিদারুণ খবর পেলো…

ভারতবাসী বেতারে…”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *