আদানি…আদানি এবং…

পার্থ মুখোপাধ্যায়

আদানি শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ার নিয়ে যে ঝড় উঠেছে তা শুধু শেয়ার বাজারেই নয়, সেই ঝড়ের অভিঘাত পরিলক্ষিত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও।আদানিদের বিরুদ্ধে নিজেদের গোষ্ঠীর শেয়ারের দর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো ও আর্থিক লেনদেনে বিভিন্ন প্রকারের প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে কিছুদিন আগেই আমেরিকায় অবস্থিত হিন্ডেনবার্গ সংস্থা। এই অভিযোগ সামনে আসতেই আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বলা যায় নিম্নমুখী হয়েছে বা মুখ থুবড়েই পড়েছে। এরফলে আদানি গোষ্ঠির শেযারের দাম প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার কমেছে। সার্বিকভাবে দেশের শেয়ার বাজারেও প্রায় ১১/১২ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যার ভুক্তভোগীরা প্রধানতই জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ সাধারন মানুষ। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগগুলির ফলশ্রুতিতে বেশ করেকটি গুঢ় অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রশ্ন ও সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আলোচনার পরিসরে উঠে এসেছে।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে আদানি গোষ্ঠীর আদানি গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক একটি শেয়ার ইস্যুর পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে, যদিও এফপিও ক্যাটাগোরিতে পুরো শেয়ার বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। উল্লেখযোগ্য যে সাধারন মানুষদের জন্য নির্ধারিত শেয়ারের মাত্র ১১% এবং কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত অংশের মাত্র ৫২% সাবস্ক্রাইবড্ হয়েছিলো, যার অর্থ প্রতিষ্ঠান সমূহরা বিনিয়োগ করলের সাধারন মানুষ এবং তাদের কর্মচারীরাই আদানি গোষ্ঠীর ওপর ভরসা রাখতে পারেনি।

আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগগুলির ফলাফল নিয়েই বিভিন্ন মহলর আশঙ্কা, কেননা অভিযোগ অনুযায়ী শেয়ারের মূল্য তাদের আসল মূল্যের থেকে বহুগুন বেশি দেখিয়ে তারা সরকারি ক্ষেত্রের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার থেকে লোন নিয়েছে। এছাড়া সরকারি ক্ষেত্রের জীবন বীমা নিগমও সন্দেহজনক জানার পরের মোটা টাকার নিয়ে নিবেশ করেছে এই গোষ্ঠীর শেয়ারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে শেয়ারের মূল্য কমে যাবার ফলে সরকারি ক্ষেত্রের এই সব সংস্থাগুলির বিনিয়োগের ফলাফলও ঘোর অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এইখানেই সঙ্গত প্রশ্ন উঠছে যেখানে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যাঙ্কগুলি আদানি গোষ্ঠিতে ইদানিং বিনিয়োগের ব্যাপারে এড়িয়ে গেছে, সেখানে কার অঙ্গুলিহেলনে সরকারি সংস্থাগুলি এতবড় ঝুঁকি নিলো!!! এই ঝুঁকি নেয়ার ফলে প্রচুর সাধারন মানুষের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিয়োগ লোকসানের মুখে, SBI এবং LICর ক্ষেত্রে সেই পরিমান নাকি ৭৪ হাজার কোটি টাকার মতো।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ভাষনে সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির নিকট সম্পর্ক নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন। রাহুল গান্ধী তার ভাষনে প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বারা গৌতম আদানির প্রতি বিশেষ সুযোগ ও সুবিধা প্রদানেরও অভিযোগ করেন। দুজনের একত্রে বা পরপর বিদেশে একই জায়গায় ভ্রমন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও রাহুল গান্ধী আদানি শিল্পগোষ্ঠীর হাতে একের পর এক পরিকাঠামোগত সম্পদ তুলে দেওয়ারও অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর জবাবি ভাষনে দেশবাসী আশা করেছিলো যে এই সব প্রশ্নের জোরালো উত্তর পাওয়া যাবে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো তিনি সেই পথে গেলেনই না।

আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষনের পূর্বেই মহামান্য স্পীকার মহোদয় রাহুল গান্ধীর ভাষনের সেই সমস্ত অভিযোগগুলি সংসদের কার্যাবলী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং সেইগুলি বাদও দেওয়া হয়৷ এরফলে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহির নৈতিক দায়িত্ব থাকলেও প্রথাগত কোনো দায়িত্ব রইলোনা এবং আমরা এটাও জানি যে প্রধানমন্ত্রী মোদী নৈতিকতার ধার ধারেন, এমন অভিযোগ অন্তত কেউই করতে পারবেন না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *