মোদিজি আদানি কে হ্যায় কৌন? ( সিদ্ধার্থ গুপ্তের বিশেষ প্রতিবেদন)

আদানি বিষয়ক মামলায় সর্বোচ্চ আদালত গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি তাঁদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্টে কি আছে তা খতিয়ে না দেখেই কিছু মানুষ দেখছি ‘আদানি ক্লীন চিট পেয়ে গেছে’ বলে উদ্বাহু নৃত্য করছে। আজকাল এই শাখামৃগ সংস্কৃতির রমরমার যুগে এমন নির্বোধ নৃত্যের পরিবেশন দেখতে একরকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই এসব দেখে-শুনে কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রবৃত্তি হয় না। কিন্তু, এই আদানি মামলা নিয়ে তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া যে ধরণের অপপ্রচারে ব্রতী হয়েছে আর ক্রমাগত নির্জলা অনৃতভাষণ পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করেছে, তাতে মনে হল এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লেখা আমার কর্তব্য। আসলে সুপ্রিম কোর্টে চলা আদানি বিষয়ক মামলাটি একটি অতি সীমিত গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ, তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তোলা প্রশ্নসমূহের উত্তর এই মামলা থেকে পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। তবুও, যে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে তা এককথায় ‘চমকপ্রদ’। সুপ্রিম কোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যে তিনটে প্রশ্নের উত্তর চায় তা হলঃ

১) সিকিউরিটিজ কন্ট্রাক্টস (রেগুলেশন) রুলসের ১৯ক ধারা অনুযায়ী ন্যূনতম ২৫% পাব্লিক শেয়ারহোল্ডিং বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা।

২) আদানি গ্রুপ কোন সম্পর্কিত পার্টি (কম্পানি বা গোষ্ঠী)-র সাথে লেনদেনে লিপ্ত হয়েছে কি না আর হয়ে থাকলে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী সেবিকে তার বিশদ বিবরণ সরবরাহ করেছে কিনা।

৩) আদানি গোষ্ঠীর স্টক প্রাইসের কোন ম্যানিপুলেশন হয়েছে কি না।প্রশ্নগুলো যথেষ্ট টেকনিক্যাল আর এর উত্তরগুলোও তাই। যাঁদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার ইচ্ছে আছে তাঁরা Live-Law -এর সাইটে গিয়ে জেনে নিতে পারেন।

আদালত প্রণীত প্রশ্নমালার কি উত্তর বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়েছে তা সংক্ষেপে জানাচ্ছিঃ

১) ২৫% ন্যূনতম পাব্লিক শেয়ারহোল্ডিং সংক্রান্ত বিষয়টি আদানি গ্রুপের ১৩ টি ওভারসীজ লগ্নিকারী কম্পানি যার মধ্যে ১২টি বিদেশী পোর্টফলিও ইনভেস্টর এদের ওপর নির্ভরশীল। এরা এদের বেনেফিসিয়রদের বিস্তারিত বিবরণ সেবিকে জানিয়েছে। এই বিবরণ বেআইনি কার্যকলাপ তথা প্রিভেনশন অফ মানি লণ্ডারিং এক্ট(পিএমএলএ)-এর উল্লঙ্ঘনের সন্দেহ উদ্রেককারী হলেও যতক্ষণ না বিস্তারিত তদন্ত করে একটি প্রাইমা ফেশি কেস তৈরি করা যাচ্ছে, ততক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে পিএমএলএ-র উল্লঙ্ঘন হয়েছে। (হায় রে পোড়া দেশ! এ দেশে মাত্র ৫,০০০/- টাকা পরিচিতের একাউন্টে পাওয়ার জন্য সিদ্দিক কাপ্পানের বিরুদ্ধে এই পিএমএলএ আইনে মামলা হয় আর তাঁকে বিনা বিচারে ২৮ মাস কারান্তরালে থাকতে হয় অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেও আদানি ‘প্রমাণাভাবে’ বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়!) বিষয়টি তাই তদন্ত সাপেক্ষ।

২) সম্পর্কিত পার্টি (কম্পানি বা গোষ্ঠী) এবং সম্পর্কিত পার্টি (কম্পানি বা গোষ্ঠী) দ্বারা লেনদেন-এর সংজ্ঞা সেবি তাদের রেগুলেশনে পরিবর্তন করে এবং এই সংজ্ঞা পরিবর্তনকে কার্যকর করার একটা ডেফারড প্রস্পেক্টিভ এফেক্ট (deferred prospective effect) দেওয়া হয় যাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষরা তাদের লেনদেন বিষয়গুলো সেবি-র নতুন সংজ্ঞা-র আদলে গড়ে নিতে পারে। এই ডেফারড প্রস্পেক্টিভ এফেক্ট (deferred prospective effect)-এর কারণে, বিশদ তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না যে আদানি গোষ্ঠী এ ক্ষেত্রে কোন বেআইনি কাজ করেছে। মজার ব্যপার হল যে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিজেদের অধিকার ক্ষেত্র লঙ্ঘন করে আগ বাড়িয়ে বলেছে যে এক্ষেত্রে আইনের ‘স্পিরিট (spirit of the law) না দেখাই বাঞ্ছনীয়!

৩) তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে সেবির কার্যপ্রণালীর এক বিস্তৃত বিবরণ দিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি বলে যে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষ।

এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়গুলি নিয়ে সেবি কি কোন নির্দিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছে? পিএমএলএ লঙ্ঘিত হলে তা দেখার দায় ইডি-র। সেবি কি ইডি-কে সেই বিষয়গুলো জানিয়ে তদন্ত করতে বলেছে? এই সব কারণেই শ্রী রাহুল গান্ধী এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যুগ্ম সংসদীয় কমিটি দ্বারা তদন্তের দাবি জানিয়েছে।তাহলে দাঁড়ালোটা কি? আদানি গোষ্ঠী ‘ক্লীন চিট’ পেলো কোন অর্থে? বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সান্ধ্যকালীন খেঁউড়ের আসরে সুবেশী এঙ্কররা সবজান্তা গামছাওয়ালা সেজে ভাঁট বকে যায় আর ছাগলের তৃতীয় সন্তান জনতা জনার্দন তাই চেটেপুটে খায় আর একে গাল দেয় তাকে ভগবান বানায়! বিচিত্র খেলা চলছে দেশ জুড়ে। সর্বত্র প্রবাহমান মিথ্যাচার আর বিকৃত তথ্যের এক স্ফীতকায় ধারা যার ঘোলা জলে স্নান সেরে কেউ হয়ে যাচ্ছে ‘সনাতনী হেঁদু’ আবার কেউ ভক্তকূলশিরোমণি আর আমাদের মত কিছু অসহায় পাগলের প্রলাপ বকে যাচ্ছি, ‘ওরে, ওসব মিথ্যে, ওতে কান দিস না!’

ছবিঃ সংগৃহীত

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *