বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব রবি-স্মরণে হঠাৎ এত আগ্রহী কেন?–

সৌরভ কুন্ডুর

প্রতিবেদন’ ৯ মে’২০২৩ঃ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ খুব ঘটা করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গিয়ে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যর্পন করলেন, ঠাকুরবাড়ি আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করলেন। সঙ্গে বঙ্গবিজেপির একাধিক চেলাচামুন্ডা।

তা’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রবি ঠাকুরকে নিয়ে হঠাৎ এত আদিখ্যেতা কেন? যাকে আমরা জীবনের ধ্রুবতারা করেছি, বিশ্ববাঙালীর প্রাণাধিক প্রিয় সেই রবিঠাকুরের প্রতি বিজেপি কস্মিনকালেও যে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, এমন কথাও অবাক করার মতো! একমাত্র বাঙালি, যাকে বিজেপি মাথায় তুলে নাচে, তিনি হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এছাড়া, আর কোনো বরেণ্য বাঙালিকে বিজেপি কোনোদিনই প্রাধান্য দেয় নি।। সাম্প্রতিক কালে বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য, আর এক নোবেলজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ শ্রী অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে যে হারে কুৎসা করে তাঁকে কোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করছেন, তাতে এটুকু বুঝতে কারো রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজকের দিনে বেঁচে থাকলে তাঁর প্রতি বিজেপি কতটা সম্মান প্রদর্শন করতো।

আবার, বিকেলে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অমিত বাবু “আমাদের রবীন্দ্রনাথ” শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান বক্তা। সঙ্গে থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদার। ভাবা যায়! যে আরএসএস বা বিজেপি সারা দেশে দাঙ্গার ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন, ধর্মীয় বিভাজন যাদের নির্বাচনের প্রচারের মূল স্লোগান, লাভ-জিহাদ নিয়ে যারা এত তৎপর, তারা কিনা বক্তব্য রাখবেন রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে! এহ বাহ্য! বক্তব্য রাখবেন কে? না, অমিত শাহ। রবীন্দ্রনাথ সম্মন্ধে কতটুকু জানেন উনি? আরএসএস ভাবধারায় স্নাত অমিত শাহ বা নরেন্দ্র মোদি আসামে রবীন্দ্র জয়ন্তীর ছুটি পর্যন্ত বাতিল করে দিয়েছেন! কত বড় দ্বিচারিতা ভাবুন একবার। আজ পশ্চিমবঙ্গে এসে ওনারা রবীন্দ্রনাথ সাজছেন। মনে পড়ে, বিগত বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির আজানুলম্বিত দাড়ি রেখে, সেরকম জোব্বা পড়ে রবিঠাকুর সাজার শখ! ওই ভন্ডকে বঙ্গবাসী উপযুক্ত জবাব দিয়েছিল ভোট বাক্সে। রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্তি কি কোনোদিন বিজেপি অনুধাবন করতে পেরেছে, জানতে চেয়েছে বাংলার মানুষ কবিগুরু সম্মন্ধে কি ধারণা পোষণ করে? ওনার বিন্দুমাত্র অবমাননা আমরা সহ্য করি না, করতে পারবো না। বঙ্গবিজেপি নেতৃবৃন্দ এটা যেন অমিত বাবুকে ভালো করে বুঝিয়ে দেয়।

এ প্রসঙ্গে রবিঠাকুরেরই গানের পংক্তি মনে পড়ে গেল

:একদিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে,

রাজার দোহাই দিয়েএ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি,

মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজি…

মনিপুর যেখানে দাউ দাউ করে জ্বলছে, এত লোক মারা গেলেন, এত মানুষ আজ ঘরছাড়া। আইন শৃঙ্খলা আজ ভূলুণ্ঠিত, সেখানে একটিবারের জন্য না গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে এসে রবীন্দ্র স্মারক বক্তৃতায় সময় ব্যয় করছেন – কেন্দ্রের কাছে কোনটা অগ্রাধিকার পায়, আজ তা’ প্রতিটা মানুষের কাছে পরিষ্কার। রবীন্দ্রনাথ নাকি আগামী বছর লোকসভা ভোটের সলতে পাকানো – নাকি বিশ্বকবির আড়ে বঙ্গবিজেপির নেতৃত্বের বিভাজনরোধ – কি যে উদ্দেশ্য তা’ অমিত বাবুই জানেন। কারণ, এই দুইজন ভোট ছাড়া আর কিছু জানেন না, এবং ভোটে জিততে সব রকমের পাঁয়তারা কষতে পারেন।

তাই, গানটির বাকি লাইনগুলোও এখানে খুব প্রাসঙ্গিক : ঘাতক সৈন্যে ডাকি,

‘মারো মারো’ ওঠে হাঁকি।

গর্জনে মিশে পূজামন্ত্রের স্বর–

মানবপুত্র তীব্র ব্যথায় কহেন,

হে ঈশ্বর!

এ পানপাত্র নিদারুণ বিষে ভরা,

দূরে ফেলে দাও,

দূরে ফেলে দাও ত্বরা।।

রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে, দাঙ্গাকারীর হাতের ফুলের মালা এভাবেই হয়তো ছুঁড়ে ফেলে দিতেন।( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

————

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *