ন্যায় যাত্রা, এক আবহমান স্রোত( সম্প্রতি ভারতজোড়ো ন্যায় যাত্রার পশ্চিমবঙ্গ- পর্যায়ে অংশ নেওয়ার অনুভূতি লেখায় প্রকাশ করলেন পূর্ব বর্ধমানের মিঠুন সরকার।)

রাহুল গান্ধীজীর নেতৃত্বে মণিপুর থেকে মুম্বাই “ন্যায় যাত্রা”।
প্রথমে ভেবেছিলাম এই যাত্রার উদ্দেশ্য কি ? এর প্রভাব কি ভোটবাক্সে পড়বে ? পড়লে কতটুকু পড়বে ? আর এই পদযাত্রায় বাংলায় কংগ্রেস কতটুকু অক্সিজেন পাবে ?

এইরকম সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একরাশ আবেগ আর উচ্ছাস নিয়ে পৌঁছে গেলাম আসাম-বাংলার বর্ডার বক্সিরহাট…..সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের শতাধিক সহযোদ্ধা।

মুহুর্মুহু জয়ধ্বনি…. রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ…..জাতীয় কংগ্রেস জিন্দাবাদ…যুব কংগ্রেস জিন্দাবাদে ঘুম ভাঙলো বক্সিরহাটের ,ঘুম ভাঙলো এ বাংলার ।
আসাম শেষ করে বাংলায় পৌঁছে গেল ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ।হাজার হাজার চোখ শুধু খুঁজে চলেছে একজন কে । দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেখলাম মনের মানুষ,প্রিয় নেতা, ভারত আত্মা রাহুল গান্ধীজীকে……হাত নাড়িয়ে একচিলতে হাসি ছুঁড়ে দিল আপনজনের উদ্দেশে ।
হাজার হাজার কর্মীর আবেগতাড়িত জয়ধ্বনির দ্বারা বাংলায় বরণ করা হল রাহুল গান্ধীকে,,,,, কপালে দেওয়া হল রক্ততিলক…… বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা যেন বহুদিন পর ফিরে পেল সেই বাহুবলীকে,সেই দেশবন্ধুকে ,সেই সুভাষকে ,সেই মহাত্মাকে ।

সব ছোট-খাটো মতপার্থক্য তুচ্ছ জ্ঞান করে ছাত্র যুব শ্রমিক মহিলা সর্বস্তরের কংগ্রেস কর্মীদের একত্রিত উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো বাংলার আকাশ বাতাস….. বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা যেন প্রাণ ফিরে পেল…..।

শুরু হল পদযাত্রা। রাস্তার দুধারে মানুষের পাহাড় । সকলের চোখ খুঁজে চলেছে একজন কে । কুয়াশার বাঁধ ভেঙে…..শীতের পরোয়া না করে হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে….. একটি বার রাহুল গান্ধী কে দেখার জন্য। তারা সবাই সাধারণ….. সবাই বাঙালি…. সবাই ভারতীয়। জাতপাতের ছোঁয়াছুঁয়ি সেখানে ছিল না।
কোচবিহার পর্ব শেষে সাময়িক বিরতির পর ২৮ জানুয়ারি শুরু হল পদযাত্রা। ক্ষণিকের জন্য কেঁপে উঠলো জলপাইগুড়ি শহর । একটাই আওয়াজ” রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ”। প্রিয় নেতা রাহুল গান্ধীজী ,দেশপ্রেমিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু -র প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে,চরণ ছুঁয়ে শুরু হল নতুন করে পথচলা।
পথের দুধারে অগণিত মানুষের ভিড়,ভিড় নয় যেন মনে হচ্ছে জনস্রোত,মানুষের সুনামি।
পথের দুধারের বহুতল থেকে মা বোনেরা শঙ্খ বাজিয়ে, পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে ভারত আত্মা রাহুল গান্ধীজী কে ।
যুব কংগ্রেসের শতশত কর্মীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে জলপাইগুড়ির ইয়াং জেনারেশন চিৎকার করে চলছে রাহুল, রাহুল, রাহুল রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ।
আর সকলেই মুঠোফোনের দ্বারা হৃদয়ের মণিকোঠায় বেঁধে রাখতে চায়ছে ভারত আত্মা রাহুল গান্ধীজী কে ।
জলপাইগুড়ি থেকে ন্যায় যাত্রা যখন শিলিগুড়িতে পৌঁছল তখন সূর্য ডুবু ডুবু কিন্তু রাহুল গান্ধীজীর আগমনে নতুন করে সূর্যোদয় হল শিলিগুড়ির আকাশে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ফ্লাইওভারে জনজোয়ার, রাস্তার দুধারে অগণিত মানুষের অনিকেত দৃষ্টি, সকলেই স্পর্শ করতে চাইছে সেই হাত , বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আবেগ উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো । আর বাংলার তরুণ প্রজন্মের চোখের দিকে তাকিয়ে রাষ্ট্রনায়ক অনুভব করেছিলেন।
এবাংলার বুকে শুধু নয় সারাদেশ জুড়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নেমে আসছে একরাশ হতাশা কারণ বাংলা বা দেশজুড়ে নেই কোনো কর্মসংস্থান,চারিদিকে শুধু বেকারত্ব। তাইতো শিলিগুড়িতে রাহুলজীর কণ্ঠে শোনা গেল বেকারের যন্ত্রণার কথা। নেতা তো সেই যে বা যিনি অন্যএর যণ্ত্রণাকে অনুভব করতে পারে। তাইতো আমার নেতা রাহুল গান্ধীজী।

বাংলার তরুণ প্রজন্ম ভারতরত্ন রাজীব গান্ধীজীকে দেখেনি, দেখেনি লৌহমানবী এশিয়ার মুক্তি সূর্য ইন্দিরা গান্ধীজীকে, দেখেনি অহিংসার বাণী নিয়ে এগিয়ে চলা মহাত্মা গান্ধীজীকে। কিন্তু এই ন্যায় যাত্রায় বাংলার তরুণ প্রজন্মের সাথে আমিও অনুভব করলাম ,দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজীব গান্ধীজীর আধুনিক চিন্তাভাবনা, অনুভব করলাম ইন্দিরা গান্ধীজীর বৈপ্লবিক ভাবনা ও ত্যাগকে ,অনুভব করলাম লাঠি হাতে অহিংসার বাণী নিয়ে এগিয়ে চলা দেশের মহাত্মা কে।

পদযাত্রা এগিয়ে চলেছে,ন্যায়ের জন্য।
সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দেশের সংবিধান কে বাঁচানোর জন্য, দেশকে বাঁচানোর জন্য ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *