১১ জন খুনি, ধর্ষণকারী ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তর মুক্তি গুজরাটের বিজেপি সরকারের বদান্যতায় -দেশ ও বিদেশজুড়ে ধিক্কার ও মুক্তি রদের আহ্বান

অমিতাভ সিংহ

গত ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দিল্লীর লালকেল্লায় মোদী ভাষন দিয়েছিলেন ” আমাদের মধ্যে এমন এক বিকৃতি এসেছে যে আমাদের কথাবার্তা, ব্যবহার,শব্দে নারীর অপমান করি।আমরা কি এ থেকে মুক্তির সংকল্প নিতে পারি?”আর বিকালেই মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটে ১১ জন খুনি, ধর্ষক ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্তি দেওয়া হল। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতি- ধর্ষণ ও খুনের মামলার আসামীকে কোন মার্জনা নয় নীতিকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই করা হল।স্বাভাবিকভাবেই এটা পরিষ্কার যে গুজরাট সরকার মোদী ও শাহের সম্মতি নিয়েই এই জঘন্যতম কাজটি করেছে বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে।একটু পিছনে ফেরা যাক।

এরপরের ঘটনা আরো কদর্য।গোধরার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয়ে এই এগারোজন ধর্ষক ও খুনিকে রীতিমত তিলক পরিয়ে, মালা পরিয়ে ও মিষ্টি খাইয়ে সম্বর্দ্ধনা দেওয়া হল।আসামীদের আত্মীয়রা খুনি ও ধর্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।যেন বলতে চাইছে তোমরা বীরের কাজ করেছো এক অসহায় নারীকে সবাই মিলে গণধর্ষণ আর তার তিন বছরের শিশুকণ্যাসহ আটজনকে হত্যা করে।এটাই কি আমাদের ভারতবর্ষ? মহাত্মাজি, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ বা নেতাজীর ভারতবর্ষ? এই গুজরাট কি মহাত্মাজির গুজরাট?এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? সারা দেশ শুধু নয় সারা বিশ্বের কাছে একাজ ধিকৃত শুধু নয় নিন্দিত ও লজ্জাজনক অধ্যায় বলেই চিহ্নিত হয়ে রইল।

এটাই কি আদর্শ হিন্দুরাষ্ট্রের নমুনা, যেখানে দলিত ও অহিন্দু নারীরা ধর্ষিতা হবেন বারবার কিন্তু বিচার পাবেন না।তাদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে আর বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদবে।গত কয়েকবছর ধরেই বিলকিসের পরিবারকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই।এই মুক্তি তাদের বিপন্ন করে তুলেছে।তারা আজ প্রানভয়ে ভীত।একটা দলের নির্বাচনে জেতার জন্য বিলকিসের পরিবারের ওপর এই নিন্দনীয় কদর্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বহু মানুষ থাকলেও মোদীর নতুন ভারতে তাদের প্রতিবাদের কন্ঠ ধ্বনিত হোক সবাই তাই চাইছেন।কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন

★উন্নাও- বিজেপি বিধায়ককে বাঁচানোর চেষ্টা

★কাঠুয়া- ধর্ষকদের সমর্থনে মিছিল

★হাতরস- ধর্ষকদের পাশে সরকার

★গুজরাট- ধর্ষক ও খুনীদের মুক্তি ও সম্বর্দ্ধনাঅপরাধীদের প্রতি সমর্থন ও নারীজাতির প্রতি নিচু মানসিকতার নজির বিজেপির।

আপনার লজ্জা করে না প্রধানমন্ত্রী জি?”আর কি করছে আপ বা অন্য বিরোধীরা।নিশ্চুপ তারা।কেন? দেশের জনতা জানতে চায় সবসময় কেন কংগ্রেসকেই রাস্তায় নামতে হবে? কেন অন্যরা নয়?

এই ঘটনা সারা দেশে তো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিন্দিত হচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন অভিযুক্ত ১১ জনকে অবিলম্বে পুনরায় জেলে ফেরত পাঠানোর জন্য সুপ্রীম কোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছে।বিভিন্ন নাগরিক,মহিলা,মানবাধিকার সংগঠনগুলিসহ হাজার ছয়েক বিদ্বজন ও সাধারন মানুষ এই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন।এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, যেভাবে গুজরাট সরকার বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ও তার পরিবারের খুনীদের সাজা মকুব করে মুক্তি দিয়েছে তার ফলে দেশের প্রতিটি ধর্ষিতা নারীসহ সমগ্র নারীজাতির কাছে একটা ভুল বার্তা পৌঁছচ্ছে।এর ফলে যত দিন যাবে তত প্রশাসন ও বিচারবিভাগের ওপর তাদের আস্থা তলানিতে চলে যাবে।এই দূরাবস্থা যাতে না হয় তার জন্য তার জন্য দেশের শীর্ষ আদালতের কাছে তাদের এই আর্জি।তারা মনে করছে ধর্ষক ও খুনীদের এভাবে ছেড়ে দিলে অন্য ধর্ষনে বা নারী নির্যাতনের অভিযুক্তরা সুবিধা পেয়ে যাবে ও সমাজে এই ধরনের গর্হিত অপরাধ দিনদিন বেড়ে যাবে।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে প্রগতিশীল মহিলা মঞ্চ,অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও অনেক বিশিষ্টজন।পিছিয়ে নেই আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিও।ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আমেরিকান কমিশন এই মুক্তিকে অনায্য বলেছে।তার সাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন সত্বেও নিষ্কৃতি পেয়ে যাওয়ার ঘটনা বার বার ভারতে ঘটে চলেছে বলে তারা মনে করছে। তারা এই মুক্তিকে ন্যায়ের নামে একটা প্রহসন বলে অভিহিত করেছে।গুজরাটের তিন কংগ্রেস বিধায়ক এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার আর্জি জানিয়ে রাস্ত্রপতি দ্রোপদী মুর্মুর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।তারা লিখেছেন এই মুক্তি লজ্জাজনক ও অসংবেদী। তরা এও বলেছেন যে এই ঘটনা ন্যায়ের জন্য লড়াই করা মানুষদের প্রতি দুর্ভাগ্যের বার্তা বয়ে এনেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে একজন নারী বলে তিনি মহিলাদের যন্ত্রনা বুঝবেন বলে তারা আশাপ্রকাশ করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *