দলের ক্ষতি হয়েছিলো কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্ধার্থ রায়ের অবস্থান ছিলো দৃঢ়।

দেব প্রসাদ রায়( প্রাক্তন সাংসদ)

সুনীতি চট্টরাজ, সন্তোষ রায় -কে ওয়াংচু কমিশন গড়ে দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ কিম্বা দলেরই বিধায়ক রজনী দলুই, এ.আই.সি.সি সদস্য সুভাষ দত্তরায়, রাজকুমার মিশ্র সহ আরো অনেক কংগ্রেসের নেতাকে ‘মিসা’য় গ্রেফতার করানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়।

দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গড়তে ‘ওয়াংচু কমিশন ‘ যেমন ছিলো সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের একটা আপোষহীন পদক্ষেপ তেমনই এই কমিশন গঠনের খেসারত দলগত ভাবে চোকাতে হয়েছিলো কংগ্রেসকে। দলের অভ্যন্তরে যেমন একে ঘিরে বিক্ষোভ এবং বিরোধিতা ছিলো তেমনই ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে বিরোধীরা এই কমিশনকেই হাতিয়ার করে নেমে পড়েছিলো। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসক হিসেবে সিদ্ধার্থ শংকর রায় দুর্নীতির সঙ্গে আপোষে ছিলেন নারাজ। সংগঠনগত ভাবে, রাজনৈতিক ভাবে এর মূল্য কংগ্রেসকে চোকাতে হবে -এ কথা সিদ্ধার্থ শংকর রায় বুঝতেন না এমন ভাবা মূর্খামি। তবুও নিজের মন্ত্রীসভার সদস্যরা যদি কেউ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকেন, তাঁদের দুর্নীতি খুঁজে বের করার উদ্দেশে তিনি ‘ওয়াংচু কমিশন’ গঠন করেছিলেন। আজকের যে পরেশ অধিকারী এস এস সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত, তাঁর বিরুদ্ধেই বাম আমলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। দুর্ভাগ্যের বিষয় কোনো ইতিবাচক তদন্ত প্রক্রিয়া সেই দিনও বাংলার মানুষ দেখতে পাননি।

আসলে প্রশাসক হিসেবে দলের ভিতরের একটা অংশ( যাঁরা ভাবছিলেন এর ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে) এবং বাইরের নানা চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্ধার্থ শংকর রায় শক্ত পাঁচিল হয়ে দাঁড়াতে পেরেছিলেন একটিই মাত্র কারণে; সিদ্ধার্থ শংকর রায় ব্যক্তিগত জীবনে এবং প্রশাসক হিসেবে ছিলেন সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত মানুষ। সাপ যদি মাথায় কাটে, তবে দেহের কোনো অংশে তাগা বেঁধে লাভ নেই ; সিদ্ধার্থ রায়ের ক্ষেত্রে সেই আশংকা ছিলো না। তাই তিনি পেরেছিলেন। এই পারাটারই বড় অভাব আজ।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)ছবিঃ উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *