তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কেন?

মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে নিখোঁজ অবস্থায় সি বি আই জেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নাকি আবেদন করেছেন বলে খবর , আর একজন প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী সি বি আই দফতরে জেরার সম্মুখীন হলেন এবং পাশাপাশি আবার রক্ষাকবচের জন্য ই-মেইল মারফৎ প্রধান বিচারপতির কাছে দ্রুত শুনানির আবেদন জানালেন। আইনগতভাবে এসবের অধিকার হয়ত তাঁদের আছে। কিন্তু নৈতিক ভাবে? এর আগেও রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রী, নেতাদের বিরুদ্ধে সারদা-নারদার মামলায় সি বি আই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই দেখা গেছে তদন্ত এবং জেরা এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষে রাজ্যের শাসক দল মায় রাজ্য সরকার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানা অছিলা খুঁজেছেন। এ’কথা ঠিক যে মোদি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে সি বি আই সহ স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। ঠিক এই জায়গাতেই কংগ্রেসের অবস্থান খুব পরিস্কার। কংগ্রেস তাই বিভিন্ন সময়ে আদালতের নজরদারিতে সি বি আই তদন্তের দাবি তুলেছে এই সময় প্রবাহের মধ্যে দাঁড়িয়ে। কিন্তু তদন্ত কিম্বা জেরা এড়িয়ে যাওয়াকে কংগ্রেস গতভাবে প্রশ্রয় দেয়নি কখনো।

ইউ.পি.এ সরকারের আমলেই কংগ্রেস নেতা সুরেশ কালমাদির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিলো, তাঁর শাস্তিও হয়েছিলো। কংগ্রেস সেই তদন্তে প্রভাব খাটায়নি। এরপর স্বয়ং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ড.মনমোহন সিংহ কে বিজেপি আমলে সি বি আই জেরার সামনাসামনি হতে হয়েছে। ড.মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, তিনি নির্দোষও প্রমাণিত হয়েছেন।আজ দেশের মানুষ বুঝতে পারছেন নির্দোষ একজন মানুষকে কিভাবে কালিমালিপ্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু আলোচনাটা অন্যত্র। কংগ্রেস কিম্বা স্বয়ং ড.মনমোহন সিংহের মতো প্রভাবশালী মানুষও কখনো তদন্ত – জেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অছিলা খোঁজেননি, বারেবারে আইনের দ্বারস্থ হননি। পি.চিদাম্বরমকেও সি বি আই গ্রেফতার করেছিলো, তদন্ত চলছে। মাত্র ক’দিন আগেও পি.চিদাম্বরমের বাড়িতে তল্লাশি চালালো সি বি আই। কিন্তু এসব কোনো ক্ষেত্রেই তদন্ত ও জেরা এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষে কংগ্রেস মাঠে নামেনি কিম্বা অছিলা খোঁজেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের পার্থক্যটা ঠিক এই জায়গাতেই।

আদালতের রায়ে তদন্ত চলছে, সেই তদন্তের মুখোমুখি হতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কেন এত অনীহা প্রকাশ করছেন? তাঁদের উচিত সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে তদন্তের মুখোমুখি হওয়া।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *