শুভাশিস মজুমদার
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, বলা হয়েছে যে হীরার উপর ১.৫% পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) আরোপ করা এবং ময়দা, চাল এবং দইয়ের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির উপর ৫% ধার্য করা নরেন্দ্র মোদী সরকারের অগ্রাধিকারগুলিকে দেখায়।
এদিন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি টুইট করেছেন, “স্বাস্থ্য বীমার উপর জিএসটি: ১৮% হাসপাতালের রুমে জিএসটি: ৫% হীরার উপর জিএসটি: ১.৫%। ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’ বেদনাদায়কভাবে মনে করিয়ে দেয় যে প্রধানমন্ত্রী কাদের যত্ন নেন। একটি একক, কম জিএসটি হার ট্যাক্স মেনে চলার খরচ (ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স কষ্ট) কমিয়ে দেবে, সরকারকে পছন্দের খেলা থেকে বিরত রাখবে এবং দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর বোঝা কমিয়ে দেবে।”
একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন বক্তব্য রাখার সময়, কংগ্রেসের মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বলেন যে আগে থেকে প্যাক করা এবং আগে থেকে লেবেলযুক্ত খাদ্যশস্য, মাছ, পনির, লস্যি, মধু, গুড়, গমের আটা, বাটার মিল্ক, মাংস/মাছ যা হিমায়িত নয়, এই সবের জন্য করছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাফড রাইস (মুড়ি)এ এখন ৫% হারে কর দিতে হবে। একইভাবে, প্রতিদিন ১,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ার হোটেলের ঘর গুলিতে এখন ১২% হারে কর দিতে হবে। প্রিন্টিং, লেখা বা আঁকার কালি, কাটিং ব্লেড সহ ছুরি, চামচ, কাঁটাচামচ, কাগজ কাটার ছুরি, পেন্সিল শার্পনার এবং এলইডি ল্যাম্পের মতো পণ্যের কর ১২% থেকে বাড়িয়ে ১৮% করা হয়েছে।
“অন্যদিকে, জিএসটি-র মন্ত্রীগোষ্ঠী পূর্বে ক্যাসিনো, ঘোড়দৌড় এবং লটারিতে অভিন্ন ২৮% জিএসটি চূড়ান্ত করেছিল। এই সিদ্ধান্ত পুনরায় পর্যালোচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে” বলে গৌরব বল্লভ মন্তব্য করেন । “সরকারের জন্য কী বেশি গুরুত্বপূর্ণ – ক্যাসিনো বা সাধারণ মানুষ? কেন কর ছাড় অপসারণের সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা না করেই সব কিছুতেই কর বাড়ানো হল?” তাঁর জিজ্ঞাসা।
কংগ্রেসের যোগাযোগ প্রধান জয়রাম রমেশ টুইট করেছেন, “মানুষ ইতিমধ্যেই মোদী-সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতিতে বিরক্ত ছিল। ১৮ জুলাইয়ের পরে, তারা জিএসটি-প্রভাবিত মুদ্রাস্ফীতি দ্বারা আরও সমস্যায় পড়বে…. কোথায় গেল সেই সুদিন (পড়ুন ‘আছ্ছে দিন’)?”
“জিএসটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হাসপাতালের ৫০০০ টাকার বেশি ভাড়া সহ বেডগুলিতে ৫% জিএসটি আরোপের সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য এবং শেষ ব্যক্তিটির জন্যও সস্তা করার লক্ষ্যে, এটিকে সর্বাধিক ভর্তুকিযুক্ত এবং এর জিএসটি ছাড় পাওয়া উচিত,” বলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক বিশেষজ্ঞের মত। “এই নতুন করের সাথে, হাসপাতালের খরচ বাড়বে, এবং অনেক রোগী ও তাঁদের পরিবার অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে,” বলে তাঁরা মনে করেছেন। দিল্লির ‘আকাশ হেলথ কেয়ার’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডঃআশিস চৌধুরী এমনি একজন।
জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (এনএসএস)-র তথ্য অনুসারে, দেশের ৬২ শতাংশেরও বেশি রোগী বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা (প্রাইভেট হেলথ কেয়ার) ব্যবহার করেন, যেখানে মাত্র ৩৮ শতাংশ রোগী সরকারি জনস্বাস্থ্য পরিষেবা পান। যেহেতু, ভারতে বেশিরভাগ রোগী বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ব্যবহার করেন, তাই এই পদক্ষেপের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। জিএসটি কাউন্সিলের ৪৭তম সভা চণ্ডীগড়ে এই বছরে ২৮ ও ২৯ জুন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জিএসটি কাউন্সিল পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহের উপর জিএসটি হারের পরিবর্তন এবং জিএসটি আইন ও পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত পরিবর্তন সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ করেছে।
মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, এক সাক্ষাৎকারে বণিকসভা সিআইআইয়ের সভাপতি সঞ্জীব বজাজ জিএসটি কাঠামোকে আরো সরল করার জন্য সরকারের উদ্যোগ দাবি করেন। তিনি জিএসটি-র স্তর পাঁচটির পরিবর্তে তিনটি করার পক্ষে বলেন।
এদিনই, ভারতীয় টাকার দাম সর্বকালের সর্বনিম্নে চলে যায়। প্রতি ডলারের দাম ৩৮ পয়সা বেড়ে হল ৭৯.৩৩ টাকা।
দেশের আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ (সিএমআইই)-র তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হার গ্রামে ৮.০৩, শহরে ৭.৩০ এবং সারা দেশে ৭.৮০। এই পরিসংখ্যান অনুসারে, জুন মাসে ১.৩০ কোটি কাজ খোয়া গিয়েছে দেশে। এইসব তথ্য মোদী সরকারের অত্যন্ত কমজোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকেই আঙ্গুলি নির্দেশ করে। যা ভীষণ উদ্বেগের কারন।